What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ভালোবাসার সম্পর্ক (1 Viewer)

ছোটভাই

Super Moderator
Staff member
Super Mod
Joined
Mar 4, 2018
Threads
776
Messages
51,097
Credits
370,879
Thermometer
Tomato
Luggage
Luggage
Tomato
Tomato
স্কুলবাস থেকে ওদের আবাসনের গেটের সামনে নেমে পড়ে তিতাস। বন্ধুরা জানালা দিয়ে হাত নাড়ে, "টা টা"..হাত নাড়ে তিতাস, মনটা ভারী হয়ে যায়। ওহ্ আবার গিয়ে ঢুকতে হবে বন্ধ ফ্ল‍্যাটে। কাটাতে হবে একা একা। মা আর বাবা তো সেই রাত্রি আটটায় ফিরবে। এখন সবে তিনটে, কত আর ভালো লাগে একা একা বসে টিভি দেখতে, গেম খেলতে। তার ওপর মা বলে গেছে ম‍্যাথস এর একটা চ‍্যাপটার শেষ করতে। আর ভালো লাগেনা। ইশ্ যদি একটা ছোট ভাই বা বনু থাকতো ! স্কুলে কত বন্ধুর ছোট ভাই, বোন নাহলে দাদাভাই আছে।কত মজা করে ওরা ! কখনও আবার ওদের লড়াই আর কাট্টিও হয়।
এরচেয়ে ভালো ছিলো ওদের কালচিনির বাড়ী। কি সুন্দর ! ছোট্ট ছবির মত বাড়ী,একদম চা বাগানের পাশে।কত পাখি আসতো ওখানে, আর প্রজাপতি মৌমাছিরা নেচে বেড়াতো। মাঝে মাঝে আবার চিতাবাঘও বেরোতো, আর তখন ভয়ে চুপটি করে বসতো ঠাম্মির কোলের পাশে। কালচিনির কথা মনে হতেই এক ঝাঁক মন খারাপের কুয়াশা মেঘলা করে দেয় তিতাসের মনটা। আসলে তিতাস আর অন‍্য মেয়েদের মত নয় একটু আলাদা,হয়ত একটু বেশি ভাবুক আর নরম মনের। কেন যে ঠাম্মিটা আকাশের তারা হয়ে গেলো ! ব‍্যাগ কাঁধে কমপ্লেক্সে ঢুকতে ঢুকতে ভাবে তিতাস। কত গল্প শোনাতো ঠাম্মি,তারপর নারকেলের নাড়ু,তিলের নাড়ু,ঝুরির নাড়ু বয়াম ভরে বানিয়ে রাখতো তিতাসের জন‍্য। ঠাম্মির কোলের কাছে শুয়ে গল্প শুনতে শুনতে কখন যেন হারিয়ে যেত রূপকথার দেশে। মা, বাবা অফিস থেকে ফিরে অনেকদিনই দেখতো তিতাস ঘুমিয়ে পড়েছে ঠাম্মির বিছানায়। মা খেতে ডাকলে তিতাস বলতো," খুব ঠান্ডা লাগছে আমার,আমি খাবোনা মা।" যেই ঠাম্মি বলতো, "দিদিভাই, আমি যে পাটিসাপটা আর মুগের পুলি বানালাম,তুমি খাবেনা?" ওমনি ঘুমচোখে বিছানায় উঠে বসে বলতো," এই তো আমি উঠে পড়েছি গো, দাওনা দুটো খাইয়ে।" ঠাম্মি হেসে বলতো,"দেখেছো বউমা, আমার দিদিভাই এর কান্ড।"
তিতাসের এখন ক্লাশ সিক্স, একটু বড় হয়েছে ও। ঠাম্মি মারা যাবার পর সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকতে থাকতে খুব অসুখ হয়ে ছিলো ওর। তার কিছুদিন বাদেই মায়ের ট্রান্সফার অর্ডার এলো কলকাতায়। আর বাবাও চাবাগানের কলকাতার অফিসে চলে আসবে ঠিক করলো। ঠাম্মিকে ছাড়া ওই বাড়ীতে যেন থাকতে পারছিলো না ওরা। কিন্তু খুব মনখারাপ করছিলো তিতাসের যখন সবুজ চা বাগান গুলো একটু একটু করে চোখের আড়ালে চলে গেলো।
কলকাতার এই ফ্ল্যাটে ওরা মাসদুয়েক এসেছে। তিতাসের সাথে তেমন কারো আলাপ হয়নি ,ওদের ফ্লোরে ছোট বাচ্ছাও নেই ওর বয়সী। তাছাড়া মা ওকে তেমন বেরোতে দেয়না। যখন বেরোয় মা বাবার সাথেই। এখনও কোন দিনরাত্রি থাকার মত বিশ্বাসী লোক পাওয়া যায়নি তাই এইসময় টুকু একাই থাকতে হয় ওকে । মা কত বার যে ফোন করে ঠিক নেই। বাবাও এক একদিন অফিসের ফাঁকে চলে আসে।
কদিন ধরেই লিফ্ট থেকে নেমেই ফ্ল্যাট ডির দরজায় চোখটা আটকে যায় তিতাসের, ওদের ফ্ল্যাটের ঠিক উল্টোদিকের ফ্ল্যাটটাতে একদম যেন ঠাম্মির মত একটা ঠাম্মি তালাবন্ধ কোলাপসেবল গেটটা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। তিতাসের চোখে চোখ পড়তেই একটু হাসে। অদ্ভুত লাগে, এখানে তো সবার ফ্ল‍্যাটের দরজা বন্ধই থাকে,তাহলে এই ঠাম্মিটা কেন?
বন্ধুত্ব হয়ে যায় মনোরমার তিতাসের সাথে, ঐ চোখে চোখে হাসি বিনিময় করতে করতেই। তিতাস জানতে পারে ঐ ঠাম্মিটা ছেলের কাছে এসেছেন, আগে কৃষ্ণনগরে থাকতেন। এখানে একদম নতুন, তাই বৌমা বাইরে থেকে তালা দিয়ে অফিসে চলে যায় পাছে কাউকে দরজা খুলে ফেলেন সেই ভয়ে।অবাক হয়ে যায় তিতাস বাইরে থেকে তালা! কই কালচিনিতে তো এমন ছিলোনা। কিন্তু কাউকে দেখতে পাননা,আসলে ওনাদের ফ্ল্যাটটা পেছন দিকের তারওপর নাকি বারান্দাও নেই, তাই মনটা আনচান করায় দরজাটা একটু ফাঁক করে বাইরে দেখছিলেন।
তবুও ঐ বন্ধ দুটো তালার আড়ালে দুটো মন বাঁধা পড়ে যায় স্নেহের নিবিড় বন্ধনে। তিতাস তো একদিন খুব বকুনি খেয়েছে মায়ের কাছে,স্কুল থেকে ঘরে না ঢুকেই মনোরমার সাথে গল্প শুরু করেছে। এদিকে ওর মায়ের তো ল‍্যান্ডফোনে ফোন করে করে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবার জোগাড়।
"এই যে শোন আমি কিন্তু তোমায় ঠাম্মি বলতে পারবোনা,আমার মন কেমন করে।"
..."তাহলে কি বলবে শুনি? দিদু?"
...."না না,আমি তোমায় গার্লফ্রেন্ড বলবো, ঠিক আছে?"
...আচ্ছা বাবা তাই হবে, এই হালুয়া টা খেয়ে নাও দেখি। বিকেলের টিফিন বানাচ্ছিলাম বাপ্পার আর বৌমার জন‍্য। দেখতো কেমন হয়েছে?"
...একটু লজ্জা পেলেও খেয়ে নেয় তিতাস আঃ গালে দিতেই যেন গলে গেলো। কি অপূর্ব স্বাদ!
কৃষ্ণনগরে আশেপাশে কত পরিচিত সব লোকজন। ওখানেই তো বেশিরভাগটা কেটে গেছে, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছেন। পড়াশোনা শিখে ভালো চাকরিও করে বাপ্পা কিন্তু কেন যে ছোটবেলায় দেখা চেনা মুখগুলো বড় তাড়াতাড়ি পাল্টে যায়। সেই আগের বাবুকে আর যেন পাননা খুঁজে তবুও ঐ তো একমাত্র সম্বল, আর কেই বা আছে। মনোরমা চিরকালই একদম সাদামাটা গিন্নী। রান্নাঘর আর সংসার এই নিয়ে কেটেছে। অল্পবয়সে বিয়ে হওয়ার জন‍্য পড়াশোনাও খুব একটা হয়নি। তবুও যার যেমন জীবন, নির্বিরোধী মিষ্টি স্বভাবের মনোরমার এখনকার যুগের আধুনিকা বৌমা টিনা আর ছেলের সাথে কোন বিরোধ ছিলনা।
কিন্তু হঠাৎ স্বামী চলে যাওয়াতে বড্ড একা হয়ে গিয়েছিলেন। হয়ত একা একাই চলে যেতো কোন ভাবে । তবুও ছেলে ভীষণ জোর করলো "তোমায় এখানে কে দেখবে? একা একা এখানে পরে থাকলে সবাই কি বলবে? "এই বলে কৃষ্ণনগরের বাড়ী বিক্রী করে পাট চুকিয়ে দিল ছেলে। জোর করতে পারেননি ,আর তারপর ওর সাথে এই কলকাতার ফ্ল্যাটে।
ছেলেকে চোখের সামনে দেখলেও বড্ড বন্দী আর একা লাগে মনোরমার। ওরা সারাদিন প্রায় বাড়িতে থাকেনা। প্রায় ছবছর বিয়ে হয়েছে বাপ্পার এখনো বাড়িতে কোন অতিথি আসেনি। বৌমাও তাই হয়ত একটু খিটখিটে মেজাজের। এখানে এসে অনেক দায়িত্ব ও বেড়ে গেছে তার। রান্নাঘরের পুরোটাই মোটামুটি সামলাতে হয় তাকে। যে রান্নাগুলো একসময় বাপ্পা চেটেপুটে খেত এখন সেই রান্নাগুলো করলেই বৌমা বলে ,"মা এত রিচ আর ওয়েলি রান্না করবেন না।" আবার পাতলা ঝোল করলেও বলে,"ইশ্ এতো জেলখানার খাবার!" কে জানে রান্নার হাতটা বোধহয় সত‍্যিই খারাপ হয়ে গেছে। একসময় বাপ্পার বাবার বন্ধুরা কত সুখ‍্যাতি করতো রান্না খেয়ে।
একটু মানুষজনের সাথে কথা বলার জন‍্য মনটা হাকপাক করে মনোরমার। কতদিন খোলা আকাশ দেখেননা আর পাখীর ডাক শোনেন না। ছুটির দিন ছেলে বাড়ীতে থাকলে ওদের বলে একটু ছাদে উঠে খোলা বাতাসে দাঁড়ান। তবুও বৌমা পছন্দ করেনা বোঝেন, একদিন তো বলতে শুনলেন," মাকে ছাদে উঠতে দাও কেন? ওখানে গিয়ে পি এন পিসি করে।" তবুও মনোরমার জীবনে একটুকরো খোলা আকাশ তিতাস। দুপুরে ঠিক তিনটে বাজলেই অপেক্ষা করেন। আর কোনদিন ঘুমিয়ে পড়লেও তিতাস গার্লফ্রেন্ডর সাথে দেখা করবেই। এখন তো সবাই জেনে গেছে ওদের বন্ধুত্বের কথা। অনেকটা ভালো আছে ও গার্লফ্রেন্ডের আদরে। তিতাসের মা বাবাও খুব ভালোবাসেন মনোরমাকে।
ভালো সময় হয়ত বেশিদিন থাকেনা মানুষের জীবনে। সেদিন লাফাতে লাফাতে গেট দিয়ে ঢুকছে আজ অনেক কথা আছে গার্লফ্রেন্ডের সাথে ওহ্ যা মজা হয়েছে আজ! ওমা গার্লফ্রেন্ডের দরজা বন্ধ কেন? বেল বাজায় তিতাস,"ওহ্ যাক দরজা খুললে তাহলে! আজ না-- একি তোমার মুখটা শুকনো কেন গো? শরীর খারাপ?"
....."নারে দিদিভাই কাল অফিস থেকে এসেই বাবুটা বললো কদিন ছুটি পেয়েছে। আর আমার অনেকদিনের ইচ্ছে হরিদ্বারে যাবার তাই নিয়ে যাবে, তাই একটু গোছাচ্ছিলাম। আমার আর কিইবা জিনিস!"...একটা অদ্ভুত মনখারাপে গলাটা শুকিয়ে আসে তিতাসের, "কতদিন থাকবে গো?"
....."বলছে তো দিনদশেকের জন‍্য , তোমার জন‍্য খুব মন কেমন করছে দিদু। কিন্তু ঠাকুরের যায়গা তো তাই না করতে পারছিনা। মন খারাপ কোরোনা ভাই, আমি তো চলে আসবো কয়েকদিন বাদে।
"...."কবে যাচ্ছো গো?"...."পরশুদিন দিদু, সেদিনতো তোমার ছুটি আমি দেখা করে যাবো দিদিভাই।"
আজ যেন একটুও ভালো লাগেনা তিতাসের। দেখতে দেখতে গার্লফ্রেন্ডের যাওয়ার দিন এসে গেলো। তিতাসকে আদর করে চুমু দিয়ে হাতে এক কৌটো নাড়ু দিয়ে গেলেন মনোরমা। বাবুকে বলে নারকেল আনিয়েছিলেন।
.."দিদু এই নাড়ুগুলো শেষ হবার আগেই আমি চলে আসবো।
"চোখটা ছলছল করে ওঠে তিতাসের।তবুও বলে,"খুব আনন্দ কোরো গার্লফ্রেন্ড।"
স্কুল থেকে ফিরে আর দিনগুলো কাটেনা, যাক্ সামনে সপ্তাহেই তো গার্লফ্রেন্ড আসবে। যা বোকা গার্লফ্রেন্ড, মোবাইল থেকে ফোনও করতে পারেনা,আর গার্লফ্রেন্ডের তো ফোনও নেই। কিন্তু কই প্রায় পনেরোদিন পার হয়ে গেলো গার্লফ্রেন্ড তো এলোনা, কোন বিপদ হলোনা তো? মাকেও জিজ্ঞেস করে তিতাস কিন্তু মাও কিছু বলতে পারেনা। সেদিন স্কুল থেকে ঘরে ঢোকার মুখে গার্লফ্রেন্ডের দরজা খোলা দেখে আনন্দে নেচে ওঠে মনটা তিতাসের,"ওহ্ এতদিনে মহারাণী এসেছেন,আমার জন‍্য ওয়েটও করছেনা। এই কদিনেই ভুলে গেলো,আচ্ছা খুব ঝগড়া আছে আমার"। বেল টেপে তিতাস,অপরিচিত একজন দরজা খোলে ,ঢোক গেলে তিতাস, "ঠাম্মা মানে আন্টি নেই?" ....."না ওরা তো দিল্লীতে আজ ওদের ফ্লাইট, তোমার আঙ্কেল তো একটা প্রজেক্ট নিয়ে আমেরিকা যাচ্ছে, হঠাৎই যেতে হলো। আমি একটু ফ্ল‍্যাটটা গোছাতে এসেছি। আমি তোমার আন্টির দাদা। কিছু বলবে?
"......গলাটা শুকিয়ে যায় তিতাসের, "গার্লফ্রেন্ড মানে ওই ঠাম্মিটা?
"...."আমি ঠিক জানিনা ওরা তো হরিদ্বারে গিয়েছিলো ওদের সাথেই আছেন।"
নিজের ঘরে ঢুকে ফুঁপিয়ে কাঁদে তিতাস। মা ফিরে দেখে খাওয়া দাওয়া কিছুই করেনি মেয়েটা। সবটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায় ওর মা বাবার। "ইশ মেয়েটা একটু ভালো ছিলো, মাসিমা কি তবে আমেরিকা চলে গেলেন ছেলের সাথে? কে জানে, কিছুই তো বললেন না"।
দিনের নিয়মে সময় কাটতে থাকে। তিতাসেরও গার্লফ্রেন্ড এর বন্ধ দরজার দিকে বেরোলেই চোখটা আটকে যায়। সেদিন মা বললো ওই ফ্ল‍্যাটটাতে নাকি কারা ভাড়া আসছে, আসুক তাতে ওর কি? এর মাঝে তিতাসকে কাউন্সিলিং করিয়েছে ওর মা বাবা। ডাক্তার বলেছেন সব বাচ্ছা একরকম হয়না, য তাস খোলামেলা যায়গায় বড় হয়েছে তাই হয়তো একটু বেশি নরম মনের। ওকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথাও বলেছেন মাঝে মাঝেই, আনন্দে রাখতে হবে ওকে,ওর সঙ্গীর দরকার। আর পারলে আবার কালচিনি ফিরে যেতে। তিতাস বোঝে ওকে নিয়ে মায়ের খুব চিন্তা। কেন যে ওর এমন মন খারাপ করে? বন্ধুরা সবাই কত আনন্দ করে।
মা বাবা বেড়াতে যাবার প্ল‍্যান করছে পূজোর ছুটিতে। মা ট্রান্সফারের চেষ্টাও করছে যদি শিলিগুড়িও হয় ওরা চলে যাবে নেক্সট ইয়ার।
পূজোর ছুটিতে তিতাসরা বেড়াতে গেলো দেরাদুন ,মুসৌরি। আবার পাহাড় আর মেঘের খেলা দেখে তিতাস খুব খুশি। বেশ আনন্দে ঘুরে বেড়িয়ে কাটলো দিনগুলো। কতদিন বাদে মেয়েকে এমন খুশি দেখে মনটা জুড়িয়ে গেলো ওর মায়ের। ফেরার সময় তিতাসের খুব আবদারে ওদের হরিদ্বার হয়ে আসতে হলো। গঙ্গার ঘাটে মন্দিরে সব যায়গায় তিতাসের চোখদুটো যেন কাকে খুঁজে বেড়ালো। মনে মনে ভাবলো গার্লফ্রেন্ড কিছুতেই আমেরিকা যেতে পারেনা।
পূজো ,বেড়ানো সব শেষ,আবার স্কুল আর সেই দম আটকানো ফ্ল্যাট। এক্সাম শেষে ওদের স্কুল থেকে পিকনিকে নিয়ে যাচ্ছে । তিতাসের ইচ্ছে না থাকলেও যেতে হলো। বাঃ বেশ ভালো লাগছে এদিক টা, খুব সবুজ!বন্ধুদের সাথে খুশিতে মাতলো তিতাসও। ওদের স্কুল অনেক সোশ‍্যাল ওয়ার্ক করে,ব্রেকফাস্টের পর ফাদার আর সিস্টাররা নিয়ে বেরোলেন ওদের, ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন যায়গাটা । হঠাৎ চমকে যায় তিতাস কে যেন ডাকছে,......."দিদিভাই....গার্লফ্রেন্ড এই যে"। এ যে তার খুব চেনা গলা, পেছনে তাকাতেই দেখে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওর গার্লফ্রেন্ড। কেমন যেন স্বপ্ন দেখছে তিতাস ,গার্লফ্রেন্ড এখানে! ও খেয়ালই করেনি রাস্তার পাশের এই ওল্ডএজ হোমটা। মনোরমা তিতাসকে দেখে যেন নিজেকে সামলাতে পারেননি, যেন কতদিন বাদে আপনজনকে দেখলেন। ছাদ থেকেই ডেকে ফেলেছেন যদি নিচে নামতে নামতে ওরা চলে যায়। প্রতিদিন সকাল বিকেল বারান্দায় বসে থাকেন যদি কোন চেনামুখ দেখতে পান। শুধুই মনে হত কেউ কি আসেনা এই পোড়া দেশে। আর আছেই বা কে তার ?
কেমন যেন এক জাদুর কাঠি ছুঁয়ে গেলো তিতাসকে। খুব ছুঁতে ইচ্ছে করছে গার্লফ্রেন্ডকে। একছুটে সিস্টারকে বলে তিতাস। সিস্টার ওর মাথায় হাত দিয়ে বলেন,সামনেই গেট। শুধু তিতাস না ,ওরা সবাই যাবে ওই গ্ৰান্ডপা আর গ্ৰানিদের মিট করতে, ওই হোমটা ওদের স্কুলের সাথে কানেকটেড। ততক্ষণে মনোরমা নেমে এসেছেন নিচে। তিতাস আর ওর গার্লফ্রেন্ডের মিলে যাওয়ার দৃশ্যে আজ চোখে জল এলো অনেকেরই। এমনও হয়? সত‍্যিই বোধহয় মন থেকে কিছু চাইলে পাওয়া যায়। একঝাঁক কচিমুখের হাসি আনন্দে ভরে গেলো হোমটা। আনন্দে মাতলো সবাই। তুমি আমায় ফোন করনি কেন? আমি তোমায় কত খুঁজেছি, কত মন খারাপ করেছি। তুমি আমায় একটুও ভালোবাসোনা, আমায় ভুলে গেছো। " নারে দিদিভাই যখন নিজের ছেলেই হরিদ্বারে যাবার নাম করে এখানে রেখে গেলো তখন মানুষের ওপর বিশ্বাসই উঠে গেছে। শুধু তোর মুখটাই মনে পড়তো মাঝে মাঝে। আজ বাচ্ছাগুলোকে দেখে মনে হলো এই ড্রেসই তো দিদিভাই পড়তো আর তারপরে চোখ সরাতে পারিনি।"
তিতাস পরের সপ্তাহে আবার গার্লফ্রেন্ডের কাছে মা বাবার সাথে। তারপরে আবার আসে একেবারে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যেতে ওদের সাথে মাঝের ফর্মালিটি গুলো সারতে সাহায‍্য করেছেন ওদের ফাদার। হোম কতৃপক্ষ একটু আপত্তি করলেও ফাদার থাকাতে কোন অসুবিধে হয়নি। ছেলে বিদেশ যাবার সময় মনোরমাকে রেখে গিয়েছিলো সবার অগোচরে এই বৃদ্ধাশ্রমে। মনোরমা খুব চেয়েছিলেন কৃষ্ণনগরে চলে যেতে কিন্তু বাপ্পা রাজী হয়নি বলেছিল,"ওখানে কোথায় থাকবে তুমি? লোকেই বা কি বলবে? এখানে অনেকের মাঝে ভালো থাকবে। এরা খুব যত্ন নেবে তোমার,দেখো কোন অসুবিধাই হবেনা। আর তো কয়েকটা মাস বাদেই আমি এসে নিয়ে যাবো তোমাকে।" স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন মনোরমা, কি ভুল করেছিলেন নিজের আশ্রয়টুকু ছেড়ে ছেলের কাছে এসে। কারো সাথেই আর যোগাযোগ করেননি,কেই বা ছিলো? শুধু ওই বাচ্ছা মেয়েটার মুখটাই ভেসে উঠতো মনে,কি যে মায়া ছিলো ওই মেয়েটার মুখে!
অসুবিধে সত‍্যিই কিছু ছিলোনা ওখানে, মনোরমার বয়সী অথবা বড় অনেকেই থাকেন ওখানে নানা কারণে। তবু কেন যেন বড় ফাঁকা লাগতো খুব মনে হত আগের কথা। কত স্মৃতি, কত ভালবাসায় গড়া একটা সুন্দর সংসারের কথা। তাই তিতাস কে ফিরিয়ে দিতে পারেননি মনোরমা আবার বাঁধা পরেছিলেন মায়ার বাঁধনে।
ভালবাসার টান হার মেনেছিলো সম্পর্কের কাছে।মনোরমার মনে হয়েছিলো আর তার কিছু হারানোর নেই, তাই আর সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করেননি।
আবার কালচিনির বাড়ীটা জমজমাট,তিতাস আর ওর গার্লফ্রেন্ডের হইচই এ, ওদের মাঝে নেই কোন তালা দেওয়া কোলাপসিবল গেট। নিশ্চিন্ত তিতাসের মা বাবা। বাড়ীতে আবার মোয়ার গুড় জ্বাল দেবার গন্ধ, ক্ষীরের সুবাস। বয়াম ভর্তি নাড়ু আর টিন ভর্তি মুড়কি। মনোরমা আবার এক অন‍্য সংসারে, তবু যেন বড় আপন লাগে সব। এরমধ‍্যে ঘুরে এসেছেন হরিদ্বার, মথুরা,বৃন্দাবনও। ভোরবেলা গাছ থেকে ফুল তুলে পূজো করা,জপ করা আর দিদিভাইকে নিয়ে থাকা। মনটা মাঝে মাঝে খারাপ লাগলেও মনে হয় ঠাকুর যেভাবে রেখেছেন ভালোই রেখেছেন।
মাঝে কেটে গেছে তিন বছ‍র। এরমধ‍্যে আমেরিকায় গিয়ে টিনা কনসিভ করেছে প্রায় আ্যডভান্সড স্টেজ, টিনার মা বাবা এসেছেন এই সময়টা মেয়ের কাছে থাকার জন‍্য। সত‍্যি খুব মুস্কিল এখানে তেমন কোন লোক পাওয়া যায় না, আর পেলেও প্রচুর টাকা দিতে হয়। তাই বাপ্পাকেও অনেক কাজ শিখে নিতে হয়েছে।
যাক ভালোই ভালোই ডেলিভারি হয়ে গেলো ওদেশের ব‍্যবস্থা সত‍্যিই ভালো। সবাই খুব খুশি সত‍্যি কতদিন বাদে বাড়ীতে নতুন অতিথি। ছেলে হয়েছে ওদের। আজ বাপ্পার মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে, কত খুশি হতেন ওরা। বাচ্ছা হওয়ার পর অনেক কাজ বেড়ে গেছে। প্রায়দিনই রাতে ঘুমোয়না। ওদেরও ঘুম হয়না, এদিকে টিনার মা আর পারছেন না । এইবয়সে কি এত ধকল সহ‍্য হয়! রান্নাবান্না বাচ্ছা সামলানো, আর পারা যাচ্ছেনা। অনেকদিন এত কাজের অভ‍্যেস নেই।
উনিই টিনাকে বললেন, "একটা কথা বলবো আমাদের তো ফিরতে হবে টিনু ভিসাও তো প্রায় শেষ, তুই বরং বাপ্পাকে বলে তোর শাশুড়ীকে নিয়ে আয় এখানে। দেশের মানুষ এখনো শক্তপোক্ত অনেক কিছু জানেন, আর পরিশ্রমও করতে পারেন।
"-------"কি বলছো মা! তুমি চলে গেলে কি করে হবে? ভিসাটা এক্সটেন্ড করানোর ব‍্যবস্থা করা যাবে।" আঁতকে ওঠেন টিনার মা,"আমি যা বলছি তা শোন,আমাদের আর থাকা হবেনা। আমরা থাকতে থাকতেই আনিয়ে নে ওনাকে। তুই আজই কথা বল বাপ্পার সাথে।
"-----"আচ্ছা মা দেখছি ওকে বলে, সত‍্যি তুমি পারো। এই একটু নিজেদের মতো ছিলাম আবার ওনার সাথে থাকা। ওহ্ আর ভালো লাগেনা।"
-------হঠাৎ একদিন রোববার পাশের বাড়ীর কাকুর ডাকে দরজা খুলে, তিতাসের বাবা মনোরমা দেবীর ছেলেকে দেখে আশ্চর্য হয়ে যান। মুখটা ছোট্ট হয়ে যায় তিতাসের,"গার্লফ্রেন্ড তুমি চলে যাবে?
"......"দাঁড়া দিদিভাই আমি আসছি,বাপ্পার সাথে কথা বলে।"
মনোরমা জানতে পারলেন তার নাতি হয়েছে,সত‍্যি মনটা ভরে গেলো আনন্দে।
......"মা তোমাকে নিতে এসেছি,তুমি তো আচ্ছা মানুষ ,এদের সাথে হোম ছেড়ে এখানে এসেছো। আমি অনেক কষ্টে ঠিকানা জোগাড় করে এলাম। তৈরি হয়ে নাও , আমার হাতে বেশি সময় নেই ।
পাশের ঘরে তখন তিনটে শুকনো মুখ অপেক্ষায়।
....."এত তাড়া কিসের বাবু? এই তো এলি,এক্ষুনি কি যাওয়া? আগে এই জলখাবারটা খেয়ে নে।শুনেছি ওদেশে কাজের লোক পাওয়া যায়না তাই বোধহয় এতদিনে মায়ের কথা মনে পড়লো তোর? প্রথম দুমাস খবর নিয়েছিলি, তারপর মাকে বৃদ্ধাশ্রমের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে রেখে আর কোন খবর নিসনি। হরিদ্বারে বেড়াতে যাবার নাম করে সবার অগোচরে আমায় রেখে গিয়েছিলি ওই আশ্রমে। বলেছিলি হঠাৎ তোকে যেতে হচ্ছে বাইরে।ওখানে একটু সামলে ছয়মাস বাদে আমায় নিয়ে যাবি। কতদিন বাদে তোকে দেখছি! আমার যাওয়া হবেনা রে, তুই এদেশে এলে খবর দিস, আমি একদিন গিয়ে দাদুভাইকে দেখে আসবো।"
......"ছিঃ মা,তুমি একথা বলতে পারলে?আমি মাঝে কিছুদিন ফোন করতে পারিনি, পরে জানলাম তুমি ওখানে নেই। এরা তোমার কে? যাদের জন‍্য তোমার নাতিকেও দেখতে যাবেনা? এত স্বার্থপর তুমি ,আমি ভাবতেও পারিনা!
....."নিজের স্বার্থ সুখ কোনদিনই দেখিনি রে। আজ মনে হয় স্বার্থপর হওয়া মাঝে মাঝে ভালো। এরা আমার পরম আত্মীয়। কিছু সম্পর্ক বোধহয় ভগবান তৈরি করে দেন, রক্তের সম্পর্কের বাইরে।
.....তুই আজ আয়,তোদের নতুন দেশ আর আমার দেখার ইচ্ছে নেই। আমি কি তোর ছোটবেলার খেলনাগুলোর মতো? যখন ইচ্ছে হলো তখন ফেলে দিলি, আর ভালো লাগছেনা বলে।খুব ভালো থাকিস তোরা দাদুভাইকে নিয়ে। এই হারটা দাদুভাইকে দিস তোর বাবা শখ করে গড়িয়ে রেখেছিলেন নাতির মুখ দেখবেন বলে।"
ছেলে চলে যাবার পর চোখের জল মুছে মনোরমা ডাক দেন, "ও দিদিভাই বেড়িয়ে আয় দেখি, ওমা মুখটা শুকনো কেনরে?.... তিতাসকে জড়িয়ে ধরে তার গার্লফ্রেন্ড পরম অবলম্বনে। শুধু মনের মাঝে একটা কথাই জাগে বৃদ্ধাশ্রমে অনেকেই যায় স্বেচ্ছায়, আবার অনেককেই যেতে হয় তারা সংসারে অপ্রয়োজনীয় হয়ে যান সেইজন‍্য। কিন্তু সত‍্যিই যদি তিতাসের মতো দিদিভাই সব ঘরে ঘরে থাকতো!
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top