What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

স্বাদ, সুগন্ধি আর সুস্বাস্থ্যের জন্য ধনেপাতা (1 Viewer)

Nirjonmela

Administrator
Staff member
Administrator
Joined
Mar 1, 2018
Threads
2,762
Messages
23,252
Credits
825,311
Pistol
Crown
Thread Title Style (One)
Profile Music
PnpoPyh.jpg


বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে বড় বড় হোটেল-রেস্টুরেন্ট, এমনকি মোড়ের দোকানের ঝালমুড়ি, হালিম সহ আরও সব মুখরোচক খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে ধনেপাতার অবাধ ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষ করে এই শীতের মৌসুমে ভর্তা-ভাজি সহ অন্যান্য তরকারী রান্না ধনেপাতা ছাড়া যেন চলেই না। এই দারুণ নজরকাড়া সবুজ উদ্ভিদ যেন আমাদের স্বাভাবিক খাবারের রুচি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় এর মনকাড়া সুগন্ধ দিয়ে।

সুস্বাস্থ্যে ভরপুর ধনেপাতা

তবে এই লেখাটি ধনেপাতার সুগন্ধ বা খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি নিয়ে নয়, বরং এসব ছাপিয়ে ধনেপাতা আমাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে কী কী অবদান রাখছে সেসব নিয়ে।

পরিচিতি

ধনেপাতার বৈজ্ঞানিক নাম কোরিয়ানড্রম স্যাটিভাম (Coriandrum sativum)। অনেকে একে সিল্যান্ট্রো (Cilantro) ও চায়নিজ পার্সলি (Chinese parsley) নামেও চেনে। ভারতীয়রা ধানিয়া এবং আমাদের দেশের মানুষ ধনেপাতা নামেই জানি। ধনেপাতা দক্ষিণ ইউরোপে তিন হাজার বছর এবং এশিয়ায় পাঁচ হাজার বছর ধরে মানুষের কাছে পরিচিত। প্রাচীন রোমান ও মিশরীয়রা ধনে মূলত চিকিৎসা ও রন্ধনশিল্পে ব্যবহার করতো।

পুষ্টিমান

ধনেপাতা খনিজের অন্যতম উৎস, যেমন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম আয়রন ও ম্যাংগানিজ। ২০ গ্রাম ধনেপাতা ৫ গ্রাম ক্যালোরি, ০.৭৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.১ গ্রাম চর্বি, ০.৪৩ গ্রাম প্রোটিন, ৩% ভিটামিন বি-৯, ৬% ভিটামিন সি সহ ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন এবং সেলেনিয়াম ও অ্যাসকর্বিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর থাকে।

স্বাস্থ্য উপকারিতা

ধনেপাতা আমাদের শরীরের জন্য দারুণ সব উপকারিতা বহন করে। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক এর স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে।

ক্যান্সার প্রতিরোধক

ধনেপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান

ধনেপাতার সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য উপকারিতা হচ্ছে এর অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টমূহের মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ই, ক্যাফিক অ্যাসিড, ফেরুলিক, কুয়ারসেটিন ও ক্যাম্পারফোল্ড উপাদানসমূহ ক্যান্সার নির্মূলের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।

রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে

ধনেপাতা আয়রনের অন্যতম উৎস

ধনেপাতার উচ্চ আয়রন উপাদান রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। রক্তস্বল্পতা শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়, চরম ক্লান্তি ও কনজিটিভ ফাংশন নিম্নমুখী করার মতো সমস্যাগুলো সৃষ্টি করে। আর শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন সরবরাহ হলে এ সমস্ত সমস্যা দূর হয়ে যায়, এমনকি আমাদের শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত রাখতে আয়রনের বিকল্প নেই।

উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস

এই সবুজ উদ্ভিদ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে;

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ হ্রাস করতে ধনেপাতার জুড়ি নেই। ধনেপাতায় উচ্চ মাত্রায় কোলিনার্জিক যৌগ এবং ক্যালসিয়াম অ্যান্টাগোনিস্টস রয়েছে। এই দুই উপাদানই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাছাড়া এই পাতায় শক্তিশালী তেজস্ক্রিয়তা রয়েছে, যা খুব স্বাভাবিক উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে।

কোলেস্টেরল কমায়

হার্টের অসুখ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের মতো ক্রনিক রোগগুলোর জন্য দায়ী হচ্ছে এই কোলেস্টেরল। ধনেপাতা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সক্ষম, কারণ এতে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে। ধনেপাতায় রয়েছে বিভিন্ন অ্যাসিড, যেমন- লিনোল্যাট অ্যাসিড, ওলিঅ্যাট অ্যাসিড, পমিট্যাট অ্যাসিড ও স্টিয়ার্যাট এসিড, যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

এখানেই শেষ নয়, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো প্রাণনাশক সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী খারাপ কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণ করে এসব উপাদান।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে

ধনেপাতা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে;

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ধনেপাতা আমাদের উন্নত দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ রেটিনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে এবং রাতেও সুন্দর দৃষ্টিশক্তি প্রদানে সহায়তা করে। এছাড়া ধনেপাতার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানসমূহ বয়সের সাথে সাথে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে আসা আংশিকভাবে রোধ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

ধনেপাতা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি-তে পরিপূর্ণ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনন্য। ভিটামিন এ আমাদের চোখ, নাক, মুখ, গলা ও শ্বাসতন্ত্র ইনফেকশন এবং ভাইরাস থেকে সুরক্ষা করে। ভিটামিন সি আমাদের রক্তে সাদা রক্ত কোষের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে আমাদের শরীর যেকোনো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে আরও দ্রুত। তাই আপনার সালাদে যদি আধামুষ্টি পরিমাণ ধনেপাতা যোগ করেন, সেটা কেবল সালাদের স্বাদই বৃদ্ধি করবে না, বরং একটু বেশি সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে।

দাঁত ও হাড় মজবুত করে

ধনেপাতার ভিটামিন কে আপনাকে দেবে সুস্থ, সুন্দর ও শক্তিশালী হাড় এবং দাঁত। ভিটামিন কে কেবল দেহের হাড়ই সুস্থ সবল রাখে না, বরং অস্টিওপোরোসিস থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত যদি একটু করেও ধনেপাতা খাবার তালিকায় যুক্ত করেন, তাহলে আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী কিছুটা হলেও ভিটামিন কে সরবরাহ করা সম্ভব।

আবার এটিও ঠিক যে, আপনি চাইলেও একটি নির্দিষ্ট পরিমানের বেশি ধনেপাতা খেতে পারবেন না, তাই আপনার উচিৎ সুস্থ-সবল দাঁত ও হাড়ের নিশ্চয়তা বজায় রাখতে ভিটামিন কে সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারগুলো গ্রহণ করা।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধক

ধনেপাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে;

ধনেপাতা গ্রহণ করার ফলে এন্ডোক্রিন গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে, যার ফলে অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং তা আমাদের রক্তে মিশে গিয়ে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই প্রক্রিয়া আমাদের রক্তে শর্করার সুনির্দিষ্ট শোষণ নিশ্চিত করে। এতে করে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের শরীরে শর্করার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং শরীরে বিপাক সঞ্চালন সঠিক থাকে।

হজমে সহায়ক

ধনেপাতার আরও একটি উপকারিতা হচ্ছে, এই ভেষজ উদ্ভিদ অনেক বেশিমাত্রায় হজমে সাহায্যকারী এনজাইম উৎপন্ন করে। শুধু এটাই নয়, এটি বমিভাব এবং বদহজম দূর করে। অপরদিকে এর দারুণ সুগন্ধ খাবারে রুচি বাড়ায়।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি

প্রতিদিন সকালের খাবারে যদি এক চা চামচ ধনেপাতার গুঁড়া মিশিয়ে নেন, তাহলে প্রায় ৩০ শতাংশ স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ধনেপাতার উপকারী পুষ্টি উপাদানসমূহ সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বকে ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার জন্য দায়ী উপাদানগুলো নির্মূল করতে সক্ষম। নিয়মিতভাবে ধনেপাতা খেলে ত্বকের অন্যান্য সমস্যা, যেমন- বলিরেখা, ফুসকুড়ি, ত্বকের ইনফেকশন ও সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বকের ক্ষতি হওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আরও কিছু তথ্য

১৬৫২ সালে ধনেপাতা উত্তর আমেরিকায় আনা হয়।
একটি ধনেপাতা গাছ ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়।
ধনিয়া পাতা ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন কে, এ, সি এবং ই, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা ও পটাশিয়ামের মতো খনিজের অন্যতম উৎস।
ইউরোপে ধনেপাতাকে 'অ্যান্টি-ডায়াবেটিক' উদ্ভিদ বলা হয়, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
ইন্ডিয়ায় একে 'প্রদাহনাশক' উদ্ভিদ বলা হয় এর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদানের জন্য।
ধনেপাতাতে ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান রয়েছে, যা খাবার দ্রুত নষ্ট হওয়া রোধ করে।
পাতা, কাণ্ড ও বীজের চেয়ে ধনেপাতার শেকড় বা মূল আরও বেশি সুস্বাদু ও সুগন্ধিযুক্ত, তাই শেকড় ফেলে না দিয়ে বেটে পেস্ট বানিয়ে খাবারে ব্যবহার করতে পারেন।
বেলজিয়ামের কিছু ধরনের বিয়ারে ধনেপাতা ব্যবহার করা হয়।
দীর্ঘদিন ফ্রিজে ধনেপাতা রাখলে এর সুগন্ধ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়, এক্ষেত্রে সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিক ব্যাগে খুব আলগাভাবে রাখুন।
প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, ধনিয়া পুষ্টিকর খাবার মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য এবং প্রাচীন গ্রীকরা ধনেপাতা খাদ্য ও সুগন্ধির অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতো।

ধনেপাতা মানসিক উদ্বেগ হ্রাস করে এবং অনিদ্রা দূর করে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top