What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ব্যর্থ প্রেম (1 Viewer)

Nnur

Exclusive Writer
Story Writer
Joined
Mar 6, 2018
Threads
25
Messages
160
Credits
3,564
রেজাউল স্যারকে চিনতাম। হোস্টেলের পুকুর ঘাটে বসে বিড়ি টানত আর বলত :: বুঝেছ রব, নিজের চেয়ে কাউকে ভালবেস না, মেয়েরা ফেন্সিডিলের মত। একবার মায়ায় পড়েছ তো
নিজেকে শেষ করেছ।
.
৪৩ বছর বয়সে স্যার তখনও বিয়ে করেননি। নিজ গ্রামের এক মেয়েকে ভালবাসতেন। রাজশাহী ভার্সিটিতে পড়ার সময় মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়। স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলে সহ মেয়েটা এখন প্রায় মধ্যবয়সী। মাঝে মাঝে রাতে ঘুরতে বের হতাম। একটা ছোট্ট গোল আলো অন্ধকারে উঠানামা করলেই বুঝতাম স্যার একা বসে বিড়ি খাচ্ছে। কাছে ডেকে গল্প করতেন। প্রায় দিন ঐ মেয়েটার গল্প শুনতাম। একটি বাগানের গল্প, কান্নাকাটির গল্প। ভাবতাম এতকাল পরে একটি মেয়েকে মনে রাখার মত মানুষ ও আছে তাহলে। মেয়েটার সংসার হয়েছে, বাচ্চা হয়েছে।
.
শুধু স্যারের কিছু হয় নি। বিড়ি টানে আর উদাস হয়ে ধোয়া ছাড়ে। প্রচন্ড ঝড়ের রাতেও দেখেছি পুকুর ঘাটে একা একা বসে বিড়ি টানছে।
.
এক ঝড়ের রাত্রে উনাকে সাপে কাটল। গিয়ে দেখি রক্ত ঝরছে, গোড়ালির উপর থেকে।। ঠান্ডা মাথায় আমাদের বললেন:: সাপ আমি দেখেছি, গোখরা সাপ। এখন আমাবস্যা, বিষ থাকার কথা। তোমরা অযথা আমাকে নিয়ে টানাটানি করো না। আমরা টানাটানি করেছিলাম এবং সে যাত্রায় উনি বেচে গিয়েছিলেন। . এই অসম্ভব দু:খী মানুষটি আমাদের অনেকের কাছে ছিল দার্শনিকের মত। উনার কিছু কথা আজীবন মনে রেখেছি। উনি প্রায় বলতেন: প্রকৃতি সবচেয়ে ফিট প্রজাতিকে বেছে নেয়, আনফিটকে বিলুপ্ত করে দেয়। স্ত্রী হায়েনা সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষ হায়েনা টিকে বেছে নেয় যে তার জন্য আর সব পুরুষের সাথে যুদ্ধে জিতে আসতে পারে। কোন মেয়ে তোমার চেয়েও ভাল কাউকে যদি বেছে নেয় তো একটুও দু:খ পেও না। এটা তাই যা প্রকৃতির আর দশটা প্রজাতির মধ্যে ঘটে থাকে। " This is Law of natural
selection".
.
তাই যখন দেখি কোন মেয়ে তার বহু পুরানো প্রেমের খ্যাতায় আগুন লাগিয়েছে বা নতুন কাউকে বেছে নিয়েছে, আমি একটুও অবাক হই না। সঙ্গী নির্বাচনে সমগ্র প্রাণী জগতে একটি দুর্বোধ্য স্বার্থপরতা আছে। এই স্বার্থপরতা আসলে স্ত্রী জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে বেশি। কোন দয়ামায়া ছাড়াই এরা সবচেয়ে ভাল পুরুষ সংগী টি বেছে নেয়।
আমি অবাক হই ছেলেদের
রিএকশন দেখে।
.
একটা সম্পর্ক যখন ভেংগে যায়, মেয়েটা হাউ মাউ করে কাঁদে। সে জানে না এই হাউমাউ কান্নাটা তাকে বাচিয়ে দিয়েছে, তাকে ভুলতে শিখিয়েছে। সে ভুলতে শুরু করে। মেয়েদের ভালোবাসায় 'All or
none Law' ব্যাপার থাকে।
কাউকে ভালবাসলে সমগ্র প্রান দিয়ে ভালবাসে, কোন কারনে তাকে ঘৃনা করলে স্বর্বস্ব দিয়ে ঘৃনা করে। আপন পরের ব্যাপারটায় চরম ধরনের নিষ্ঠুরতা থাকে।
.
ছেলেটার জন্য এগুলো খুব সহজ নয়। ব্রেক আপের রাতে সে খুব শান্তিমত ঘুমায়। সকালে হাই তুলতে তুলতে বলে ওর সাথে আমার ব্রেক আপ হয়ে গেছে। নিজেই নিজেকে বলে ' কিচ্ছু হবে না', 'ও রকম মেয়ে কত আছে!' তারপর একটু একটু করে তার খারাপ লাগে। প্রতিদিনের অভ্যাসগুলো তাকে কষ্ট দেয়। রাত এলে ফোনের পুরানো
মেসেজ গুলো তাকে পোড়ায়। খুব ধীরে সে বুঝে ফেলে জীবনের একটি অংশ সে হারিয়ে ফেলেছে, যাকে ছাড়া সে অচল। হারানো মানুষ টাকে ফিরে পেতে সে তখন যুদ্ধ শুরু করে, তবে দেরি হয়ে যায়। ততদিনে মেয়েটার কাছে সে অচেনা কেউ।
.
হতাশা আকড়ে ধরে তাকে। সিডেটিপের ডিব্বা তার আশ্রয় হয়ে যায়। নিজের প্রতি বেখেয়ালে কখন যে বনমানুষ হয়ে যায় বুঝতে পারে না। হাউমাউ কান্নাটা মানুষের শেষ আশ্রয়। বিধাতা এটিও তাকে দেয় নি।
.
কিছুদিন আগে প্রায় মাঝরাতে একটা ছেলে এসেছিল আমার
কাছে ( ইমার্জেন্সিতে)। প্রায় বদ্ধ নেশাখোর। হাতের কোথাও ইনজেকশন দেয়ার শিরা নাই। সব শিরায় সে নিজে ইনজেকশন দিয়েছে।
ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার সময় মোবাইলে একটি মেয়ের সাথে পরিচয়।
তারপর প্রেম, অত:পর ব্রেক আপ। ঘটনা ২০১১ সালের। প্রবাসী একটি ছেলেকে বিয়ে করে স্বামী বাচ্চা নিয়ে ভালোই আছে মেয়েটি। শুধু এই পাগলটার রাত কাটে না। মাঝে মাঝে ইমার্জেন্সি তে দেখা যায়। ছেলেটার বাবা ব্যাবসায়ী। ভদ্রলোক প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল:: স্যার ওর বিয়ে ঠিক করেছি। তার পর থেকে আবার শুরু করেছে। কিছুদিন ভালছিল। সেনাবাহিনীর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এ চাকুরী দিয়েছি। এরকম করলে চাকুরীটাও চলে যাবে।
.
ছেলেটাকে দেখে বহুদিন আগের রেজাউল স্যার কে মনে পড়ল। মানুষ তাহলে এমনও করে!! ভালবাসায় পাপ কতটুকু জানি না, তবে প্রায়াশ্চিত্ত অনেক বড়। ভালবাসা কাউকে কাউকে ঋনী করে ফেলে , আর কেউ কেউ সেটা জীবন দিয়ে শোধ করে।
.
সস্তা ভালবাসার যুগে মানুষ ভালবাসে একজনকে, আর প্রেমে পড়ে দশ জনের। এগুলোর নাম দিয়েছে ক্র্যাশ। ভালবাসা ছুটে গেলে এগুলোর দিকে হাত বাড়ায়। এই ক্র্যাশের যুগেও আপাত কঠিন কিছু মানুষ থাকে। এরা lock সিস্টেমে ভালবাসে। শুধু বাসতেই জানে, ভুলতে শিখে না। এরা হয়ত দার্শনিক হয়ে যায়, নয়ত মাঝ রাতে হুটহাট করে ইমার্জেন্সিতে চলে আসে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top