What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected বন্ধন (1 Viewer)

Pegasus

Member
Joined
Mar 8, 2018
Threads
103
Messages
171
Credits
28,977
ঘর থেকে বেরিয়ে অনেক্ষন অপেক্ষার পর একটা রিকশা পেলো সাদিফ।রিকশাতে উঠতেই তার মাথায় এলো তারও আগে এসে একটা মেয়ে এখানে দাঁড়িয়েছে রিকশার জন্য।আর সে পরে এসেও কেমন কান্ডজ্ঞানহীনের মতো চড়ে বসলো রিকশায়।আজতো তেমন তাড়াও নেই।
-এইযে শুনুন,সাদিফ রিকশা থেকে নেমে মেয়েটিকে বললো।
-স্যরি,আমি লিফট নেবোনা।
-আরেনা আমি তা বলছিনা।আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনার তাড়া আছে,আপনি এ রিকশা নিয়েই চলে যান আমার বিশেষ কোন তাড়া নেই।
-ধন্যবাদ,কিন্তু.......
-আরে ধুর,যানতো।
-আমি লাবন্য,মেয়েটা রিকশায় বসতে বসতে বললো।
-আমি সাদিফ,আপনিতো আমাদের বাসার পাশেই ওই একতলা সাদা বাড়িটাতে থাকেন তাইনা?
-হ্যাঁ,লাবন্য হেসে বললো।
-মায়ের কাছে আপনার কথা শুনেছি।সাদিফ হঠাৎ ব্যাস্ত হয়ে বললো,দেখুননা সাহায্য করে এখন আবার দেরি করিয়ে দিচ্ছি।
-আসলে আজ পরিক্ষার গার্ড আছেতো,আসলে একটু তাড়াই.......আসি।
-আচ্ছা....
.
.
-বাবা,এতদিনতো চাকরির দোহায় দিয়েছিস।এখনতো চাকরীটা হলো,এইবার অন্তত বিয়েটা কর।
-মা,তোমার বিরক্ত লাগেনা?চায়ে চুমুক দিতে দিতে সাদিফ বললো।
-কেন!
-এই যে,রোজ সকাল বিকেল নিয়ম করে একই কথা বলো।সাদিফ মৃদু হেসে বললো।
-তবে থাক,আমি বেঁচে থাকতে আর বিয়ে করিসনা,মরলে তখন নতুন বৌকে নিয়ে আমার কবরের পাশে কাঁদিস।
-আচ্ছা।
-বেয়াদব ছেলে,আবার বলে আচ্ছা।তুই দেখেছিস আমার দাঁত সব পড়ে যাচ্ছে?
-তো?
-তো মানে!আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি।শেষে নাতি-নাতনীর মুখ দেখার আগেই মরতে হবে।
-মা.........মা..........আগেতো বিয়েটা হতে দাও তারপর নাহয় ওসব ভেবো।
-তুই যদি এই দুমাসের মধ্যে বিয়ে না করিস আমি কিন্তু চলে যাবো।
-আমাকে ছেড়ে!তবে এক কাজ কর মা,আমাদের ঘরের ওই কর্নারের রুমটা আছেনা?ওখানে যেয়ে থাকো,ওটা আমার রুম থেকে অনেক দূরে।এর বেশি দূরে যেতে দিচ্ছিনা তোমাকে।
-পাজিল ছেলে,কোন কথার যদি একটু মূল্য দেয়।রাবেয়া ছেলের মাথায় চাপড় দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন।
-দেরী হয়ে যাচ্ছে মা,আসছি।
-পথে ঘাটে হাঁটতেও কোন মেয়ে চোখে পড়েনা তোর?
-পড়লে তোমাকে জানাবো মা,সাদিফ যেতে যেতে চিৎকার করে বললো।
.
.
রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলো সাদিফ।তারা কুমিল্লার গ্রামানঞ্চলে থাকে।জায়গাটা বস্তির মতোই।এদিকটা মাটির রাস্তা বলে রিকশা ছাড়া কোন যানবাহন পাওয়া যায়না।মায়ের নাকি এজায়গাটার প্রতি মায়া বসে গেছে।নয়তো এ বস্তির মতো জায়গা অনেক আগেই ছাড়তো সাদিফ।
-আজ আমার তাড়া নেই,পেছন থেকে একটা নারীকন্ঠ ভেসে এলো।
সাদিফ পেছনে তাকিয়ে দেখলো লাবন্য হাসিমুখে এগিয়ে আসছে।লাবন্যর হাসিতো বেশ সুন্দর!হঠাৎ মায়ের একটু আগের কথাটা মনে পড়তেই হেসে পেললো সাদিফ।
-হাসছেন যে?
-আজ আমার তাড়া আছে,তাই।সাদিফ অম্লান বদনে মিথ্যেটা বলে পেললো।
-কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি রিকশা পাবেন বলে মনে হয়না।
-দেখাই যাকনা,আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?যদি কিছু মনে না করেন।
-বলুন।
-আপনার কোন আত্মিয় স্বজন নেই?একা থাকেন যে?
-মা ছিলো,একবছর হলো মারা গেছে।
-ও স্যরি,আমি আসলে.........
-না সমস্যা নেই,মৃত্যুকে আটকাতে পারে কার সাধ্য বলুন?
-কিন্তু আপনি একা মেয়ে মানুষ,ভয় হয়না?
-এপাড়ার সবাই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে আমাকে।আমি তাদের অন্ধের মতো বিশ্বাষ করি।এরা কেউ আমার ক্ষতি করতে পারে কখনো ভাবিইনি তাই ভয়ও ঘেঁষেনি কখনো।
-আচ্ছা....
-রিকশাতো চলে এলো,আপনিই যান।
-অর্থাৎ ঋন পরিশোধ করলেন?
-অনেকটায়।
সাদিফেরর রিকশা চলতে শুরু করেছে কিছুদূর যেতেই সে পেছন ফিরে তাকালো।তার মনে হলো লাবন্য এক মায়ার নাম!!!মাকে কি তবে বলেই ফেলবে?
.
.
সাদিফ মাত্র অফিস থেকে ফিরলো।চারপাশটা এমন ধোঁয়াটে হয়ে আছে কেন?ঘরের সামনে যেতেই চোখ পড়লো লাবন্যর ঘরের দিকে।সেখানে প্রচুর মানুষের ভীড়,আর ঘরটাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।আর কিছু ঠান্ডা মাথায় ভাববার সময় পেলোনা সাদিফ।অফিসের ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দৌড়াতে শুরু করলো সেদিকে।মানুষজন পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।সাদিফ ভীড় ঠেলে যেতে যেতে মানুষের কথা শুনলো।একজন বলছে,মাইয়াটা এতক্ষনে মইরা গেছে।
-ক্যামনে লাগছে আগুন?
-মনে অয় কারেন্টের সার্কিট গুলাতে কিছু হয়ছে।
-আরে না,তাইলে আগুন আরো বেশি লাগতো।আল্লায় ভালো জানে কেমনে আগুন লাগছে।শেষমেষ এমন বালা মাইয়াডার এই পরিনতী হয়লো,আহারে।
সাদিফ শুনলো পেছন থেকে কিছু লোক তাকে ডাকছে।কিন্তু সেসব শোনার সময় নেই।সে ভাবতে পারছেনা ভেতরে লাবন্য পুড়ে যাচ্ছে।হঠাৎ তার মায়ের ডাকেই পেছন ফিরে তাকালো সাদিফ।দেখলো তার মা হাতে একটা ভেজা কাঁথা নিয়ে এগিয়ে আসছেন।সাদিফ ম্লান হেসে এগিয়ে গেলো সেদিকে।মা তার গায়ে কাঁথাটা জড়িয়ে দিতে দিতে বললেন,আগুনটা এখনো ভালোভাবে লাগেনি বাবা।মেয়টা বেঁচে থাকলেও থাকতে পারে।এতক্ষন ধরে সবাইকে অনুরোধ করছি মেয়টাকে বাঁচাতে।ভীতুর দল সব,রাজী হয়নি।
সাদিফ দরজায় দু-একবার জোর প্রয়োগ করতেই তা খুলে গেলো।ভেতরে ধোঁয়ার জন্য কিছু দেখা যায়না।তার চোখ জ্বলছে,আগুনের তাপে কাঁথাটাও গরম হয়ে গেছে।সাদিফ ঘরের যে পাশটায় আগুন কম সেপাশের রুমে লাবন্যকে খুঁজছে,আর অজানা এক আশঙ্কায় তার বুকের ভেতর কাঁপছে।শেষ পর্যন্ত তাকে পেলো ওয়াশরুমের দরজার পাশে অজ্ঞান অবস্থায়।এ পশটায় এখনো খুব একটা আগুন আসেনি তবুও লাবন্যের শরীরের দু-এক জায়গা পুড়ে গেছে।সম্ভবত ওপাশ থেকে এপাশে আসার সময় লেগেছে।সাদিফ ভেজা কাঁথা দিয়ে লাবন্যকে জড়িয়ে পাঁজাকোল করে তুলে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো দরজার দিকে।
.
.
সাদিফ বেরোতেই মানুষজন এগিয়ে এলো।লাবন্য দু-হাতে সাদিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।তার জ্ঞান ফিরেছে সত্য কিন্তু এখনো থরথর করে কাঁপছে।ভীষন ভয় পেয়েছে মেয়েটা।সাদিফের দু-চোখ ভীড়ের মাঝে তার মাকে খুঁজছে।তার মা দূরে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছেন।মুখে এমন একটা ভাব যেন,এইবার তোমায় পেয়ে বসেছি বাছা।দেখি পালাও কি করে?
সাদিফ সেদিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসলো,
আর আপনমনেই বললো,পালাতে চাইবো কেন মা?হয়েইতো গেলো।

 

Users who are viewing this thread

Back
Top