What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected প্রেম চিরন্তন (1 Viewer)

Pegasus

Member
Joined
Mar 8, 2018
Threads
103
Messages
171
Credits
28,977
এই শুনেন আমাকে আপনার স্ত্রী বলে দাবি করবেন না। আমি আপনার স্ত্রী হয়ে থাকতে পারবো না। কি আছে আপনার? আব্বু যে কেন আপনার মতো একটা থার্ড ক্লাস ছেলের সাথে বিয়ে দিলো।
এই কথা গুলো জলির মুখ থেকে শুনতে আমার খারাপ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। তার উপর যদি আবার বাসর রাত হয়। জলির বাবা আমাকে ছোট বেলা থেকেই পছন্দ করতো। আমিও উনাকে আমার বাবার মতোই দেখেছি । আমার জলিকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই ছিলনা। একবার স্ট্রোক করেছিলেন জলির বাবা। আর ঐ সময় আমাকে বিয়ের কথা বলেছিলেন জলির কাছে। জলি কিছু না জেনে শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছিলো। জলির বাবার শরীর দিনে দিনে অনেক খারাপ হয়ে যাওয়ার কারনে বিয়েটাও তারাহুরু করেই দিয়ে দিয়েছে। আর আমি বিয়ের মাত্র এক দিন আগে বিয়ের কথা জানি। জলির বাবাই আমার পরিবারের সাথে কথা বলে রেখেছিলেন। আর সবাই রাজি হয়ে গিয়েছিলো কারন জলির বাবা খুব ভাল মানুষ। অনেক ধনী লোক হলেও মনে একটুও হিংসা অহংকার কোনোটাই নাই।কে জানতো উনার মেয়ে এরকম হবে। জলিকে আমি চিনতাম ঠিকিই কিন্তু এতোটা না।
আর আমারও বলার কোনো কিছু ছিলনা এরকম পরিস্থিতি ছিলো। আর এটাই মনে হয় জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। শুধু আমার না আমার ফেমিলির।। নিজের ব্যবসা নিয়ে সবসময় ব্যাস্ত রয়েছি। প্রেম টেম করার সময় হয়নি। ভেবেছিলাম বিয়ের পর বউটার সাথেই না হয় প্রেম করলাম।
অনেক সপ্ন ছিলো। অনেক কিছু বাকি রেখেছিলাম আমার যে বউ হবে তার জন্য। কিন্তু জলি কে মেয়ে বললে মনে হয় ভুল হবে। এরকম হিংসুটে আর অহংকারী মেয়ে আমি জীবনে দুইটা দেখিনি। আমরা জয়েন ফেমিলি সবাই এক সাথেই থাকি। আমি, মা, বাবা, রিনা (ছোট বোন আর সবচেয়ে আদরের) সোহান (ছোট হলেও এতো পাক্না যে বলার বাইরে) আমরা থাকি তিন তলায় আর নিচের দুই তলার ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া আছে। আর উপরের দুই তলায় দুই চাচ্চুরা তাদের ফেমিলি নিয়ে থাকে। কেউ বুঝতে পারবেনা আমাদের বাসায় আসলে কার কোন বাসা। কারন যে যেখানে ইচ্ছা খায়, ঘুমায়, কারন তিন বাসা একই। বড় চাচ্চুর, দুইটা মেয়ে আছে। একজন আমার সমবয়সী। যার বিয়ের কথা-বার্তা চলছে। কিছু দিনের মধ্যে বিয়েও হয়ে যেতে পারে। আরেকজন ক্লাস টেন এ পড়ে। যাদের সাথে একদিন ঝগড়া না হলে পেটে খাবার নামেনা। আর ছোট চাচ্চুর, দুই জন ছেলে আর একজন মেয়ে। দুই ছেলের মধ্যে একজন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার আরেকজন ক্লাস সেভেন। আর মেয়েটা এবার এস এস সি দিয়েছে। বোঝতেই পারছেন এতো লোক থাকলে বাসায় কিরকম হৈ হুল্য হয়। আর ইদানিং একটু বেশি হচ্ছে কারন তানজিলার (যার বিয়ের কথা চলছে) বিয়ে নিয়ে।আর এরি মাঝে এক্সিডেন্টলি আমার বিয়েটা হয়ে যায়। আর এ যদি হয় থার্ড ক্লাস ফেমিলির উদাহারন জলির কাছে তো চিন্তা করেন জলি কিরকম উচু লেভেলের। যার পা মাঠিতেই পড়েনা। তিন বাসার মধ্যে এতো লোকজন। সবসময় হৈ হুল্য লেগেই থাকে।
কে কোন বাসার বোঝায় যায়না। এটা জলির কাছে অভদ্রতা মনে হয়। এটা আর ভাবেনা কতটা ভালবাসা থাকলে আর সবাই কতটা আপন হলে এরকম হয়। কতটুকু ফ্রি থাকলে এরকম হয়। একমাত্র চাচি আম্মারা আর চাচ্চুরা ছাড়া কে কোন তলার কেউ বোঝবেনা। কোনো ভাবেই বুঝতে পারবে না। যার যেদিন যেখানে ইচ্ছা থাকে খায় ঝগড়া করে। চার মেয়ে সবাই একসাথেই থাকে। সবার বড় আমি ছিলাম কিন্তু অনেক অনেক ফ্রি। চব্বিশ ঘন্টা লেগেই থাকি। সবার সপ্ন ছিলো ওদের একটা কিউট লজ্জাবতি ভাবী ( মানে আমার বউ) হবে। সারাদিন ওদের সাথে রাখবে আর আমাকে রাগাবে। এর পুরো উল্টো হয়েছে। কি আর করা কপালে লেখা ছিলো। এরি মধ্যে জলি আমার কাছ থেকে ডিবোর্স চাইলো। আমারও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু জলিকে বলেছিলাম তানজিলার বিয়ের পর। কারন নাহয় বিয়ের আগে আরেক ঝামেলা বাধবে। জলির বাবাকে ভাল করে বোঝানোর একটা ব্যাপার আছে তাই। এক মাস পর বিয়ে। যতই বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে বাসায় মানুষ তো বাড়ছেই। সবাই আস্তে আস্তে চুপও হয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের মধ্যে তানজিলা লিডার ছিলো বলতে গেলে। সবসময় ওদের সাথে থাকতো। হঠাৎ করে অন্য কোন বাসায় চলে যাবে মেনে নিতে পারছিনা কেউ।
আগের মতো আর টম এন্ড জেরির শো হবেনা আমাদের মধ্যে তানজিলাকে নিয়ে। আশ্চর্য'রর বিষয় হলো জলি রুম থেকেই বের হয়না। আস্তে আস্তে বিয়ের সব কিছু আয়োজন করা হলো আর বিয়ের অনুষ্টান ও শেষ হলো। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলাম না।নিজে আমি যদি এরকম করি তাহলে বাকি যারা আছে আরো বেশি কষ্ট পাবে। তাই ছাদে চলে যাই। ছাদে গিয়ে দেখি একেকটা একেক যায়গায় মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। এরকম দিন কোনো দিনও আসেনি যে সবাই এক সাথে এভাবে কান্না করেছে। বিয়ে তো হয়েছে কিন্তু তানজিলা আর আমাদের সাথে থাকবেনা আমাকে রাগানোর
বুড়ী মার্কা বুদ্বি আর দিবেনা। যাই হোক আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জলি নামে একজন প্রাণী আমাদের বাসায় ছিলো তা ভুলেই গিয়েছিলাম। অফিস থেকে ফিরার সময় কেউ ঝগড়া করতে আসে না কারন জানে আমি খুব টায়ার্ড থাকি। কিন্তু ফ্রেশ হওয়ার পর ঠিকিই শুরু করে দেয়। আগের থেকে বাচা গেছে কারন বুড়ী টা নাই। এ ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কি করার আছে! রাত ১০:৩০ এর পর সবাই খাওয়া দাওয়া করে যার যেখানে ইচ্ছে গিয়ে শুয়ে পরেছে। জলি আর আমি এক রুমে থাকি না। অন্য রুমেই থাকি কারন। আমাদের ব্যপারটা সবাই জানেই। তো ১০:৪০ এ জলির ফোন। দেখে ভাবছি আবার না জানি কি অপমান করার জন্য..রিসিভ করলাম।
- কে?
- আমি জলি।
- তুমার ফোন টা অপবিত্র হয়ে যাবে তো।
- একটু ছাদে যাবেন আমার সাথে?
এ কথা শুনে তো আমি মাটি থেকে আকাশে উঠলাম।
- কি হইছে ফোনে বলেন। আপনার অপমানজনক কথা বার্তার জন্য ছাদে যেতে পারবো না।
- একবার প্লীজ।
মাথাটা ঘুরলেও ছাদে গেলাম।
গিয়ে আমি আবারো শকড। এই মেয়ে শাড়ি পরেছে। আল্লাহ শাড়ি টা পড়লো কিভাবে?
কদিন পর ডিভোর্স হওয়ার কথা চলতেছে আর এখন..
- আপনি কি ডিভোর্স পেপার এ সাইন করে ফেলেছেন?
- না তবে কালকে করে দিবো সমস্যা নাই।
এ কথা শুনতেই ও দৌড়িয়ে এসে আমার পায়ের কাছে পড়লো। এবার পুরো পৃথীবিটাই আমার অবিশ্বাস হলো। আমি কি দুনিয়ায় নাকি না।
-আরে কি হলো হটাৎ?
-আমি জানি আমি যা করছি এতোদিন তার ক্ষমার যোগ্য আমি নই। তবুও প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।
এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা। কি বলে এসব।
- আপনার স্ত্রী হওয়ার অধিকার টুকু না দিন । ওদের ভাবী হওয়ার সুযোগ দিবেন? আমি আসলে অনেক টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ি দিয়ে সুখ বিচার করেছিলাম। কিন্তু আমার ধারনা পাল্টে গিয়েছে আপনাদের দেখে।
- শুনো, কাগজ তো এসে গেছে। আর আমার স্ত্রী হওয়ার কোন দরকার নেই। আমি প্রতিদিন স্বামী হয়ে আপনার ধমক শুনতে তো পারবনা। এতো অপমান সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। আর ওদের ভাবীহতে চাচ্ছো? হাহা নিজেকে কোনদিন প্রিন্সেস ছাড়া ভেবেছো? কোনোদিন না খেয়ে থেকেছো? আমি যতক্ষণ পর্যন্ত না খাই ওদের গলা দিয়ে ভাত নামবেনা। আর ওরা না খেলে আমারও। আর আবার খাওয়া নিয়ে ঝগড়া। এগুলো তোমার দ্বারা কিভাবে সম্ভব? ওদের সাথে মিশতে গেলে না একটা সুন্দর মন দরকার যা তুমার ছিলনা নেই আর হবেওনা। আমি তো থার্ড ক্লাস আর আমি থার্ড ক্লাস মানে আমরা সবাই থার্ড ক্লাস তাইনা? তো থার্ড ক্লাস ফেমিলির সাথে তুমি কিভাবে থাকবে? আমরা খুবই দুঃখিত যে আমাদের মতো থার্ড ক্লাস ফেমিলিত তুমি এতো দিন ছিলে। তোমার বাবাকে আমরা বোঝিয়ে বলে দিয়েছি আর উনি কিছু বলেনি। তুমি কালকে চলে যেতে পারবে।
একথা গুলো শুনে চোখ থেকে পানি ঝরতে লাগলো জলির। ভাবিনি এই মেয়ের চোখে এভাবে পানি আসবে।
- একটিবার সুযোগ দিন প্লিজ। নাহয় আমি মরেও শান্তি পাবনা।
- ন্যাকামো বন্ধ করো তো। এখন যাও গিয়ে ঘুমাও।
ও পা ছাড়লো না আরো শক্ত করে ধরলো। আমি উঠানোর চেষ্টা করলেও উঠাতে পারিনি।
- আমি পা ছারবো যদি আপনি আমার সাথে এক সঙ্গে থাকেন।
- উফ প্লিজ, তুমার সাথে এক সাথে? আর আমি? তুমি নিচু হয়ে যাবে না?
আরো জোড়ে কাঁদতে লাগল।
- ওকে ওকে এখন উঠো তো আমি তোুমার সঙ্গে থাকব (রাত হয়ে গেছে কান্না কমানোর জন্য বললাম)
একথা শুনে একটু স্থির হলো। রুমে গিয়ে আবারো শকড। আমার প্যান্ট জুতো ইত্যাদি ইত্যাদি জলির রুমে তাও খুব যত্ন করে যেখানে আমি এই রুমে এগুলো রাখিই না আবার এখানে জলি থাকে।
- কি ব্যাপার এগুলো এখানে কেন?
- আমি জানিনা ( নরম সুরে)
- বিয়ের হুম দামে মনে হয় এসে গিয়েছে সো সরি আমি এক্ষনি সরিয়ে নিচ্ছি।
- না থাক না এখানে।
- কেন থাকবে আমি কি এখানে থাকি?
- আচ্ছা আপনি শুয়ে পড়ুন আমি দেখছি।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি এগুলা কি দেখছি খোদা। আবারও কোন বড় অপমান রেডি করছে না তো। নাকি সত্যিই আমাদের সাথে থাকতে চাচ্ছে।
- কি হলো শুয়ে পড়ছ না কেন? আমি চলে যাবো?
- না না প্লিজ, আপনি খাটেই শুন আমি আপনার পায়ের কাছেই থাকি।
- মাফ চাই তুমার কাছে আর ন্যাকামো করোনা। রাত হইছে কাল সকালে অফিসে মিটিং আছে জরুরি।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
সকাল ৭ টা বাজে ঘুম থেকে উঠে দেখি জলি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে। রুমের বাইরেও যেতে পারেনা লজ্জায়। আর কেউ আমাকে এখানে এই রুমে খোঁজতে আসেনি কারন জলি থাকে বলে। দেখি কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।
- কি ব্যাপার আবার কি হলো?
- না কিছুনা।
- তো কাঁদছো কেন? চিন্তা করোনা তুমি মুক্তি পাবে আজকেই পেপারে সাইন করে দিবো।
- না প্লিজ। আপনাদের ছারা আমি বাঁচতে পারবো না।
- হাসিও না আর প্লিজ।
- আচ্ছা ওখানে দেখলাম একটা ছেলে ফর্সা করে ব্যাটমিন্টন খেলছে, কে?
- সোহান আমার ছোট ভাই। আর এগুলা জেনে কি করবে?
- কতক্ষণ আগে আপনার রুম থেকে একটা মেয়ে ডেকে গেলো চুল লম্বা, কে?
- ছোট বোন।
- অনেক সুন্দর।
- না থার্ড ক্লাস।
- প্লিজ আমাকে আর এভাবে বলে কষ্ট দিবেন না।
- আমি তুমাকে তো বলিনি থার্ড ক্লাস।
আবারো কাঁদতে লাগলো।
- উফ প্লিজ থামো।
- আচ্ছা কেউ কি আমাকে আর মেনে নিবেনা?
- কেন নিবেনা তুমার মতো এতা সুন্দরি মেয়ে। তুমার বাপের অনেক টাকা পয়সা আছে। আমাদের তো কপাল।
- এখন এগুলো বলবেন স্বাভাবিক কারন আমি যা করছি..।
- হইছে হইছে।
- আচ্ছা মা কোথাই?
- তুমার মা তো অনেক দিন আগে মারা গেছে জানতাম।
- অনেক দিন হলো মা বলে কাউকে ডাক দেয়নি।
- ওয়েট আমার মা তুমার মা হবার যোগ্যতা রাখেনা। তুমার মতো এতো উচ্চ ঘরের মেয়ে মাকে মা বলে ডাকলে তা সহ্য করতে পারবে না।
- আমাকে আর দূরে ঢেলে দিবেন না। একটু ঠায় দিন। আমি হয়ত এভাবে থাকিনি কিন্তু আমার থাকতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
- আমি আসছি। একটু পর অফিসের জন্য রেডি হতে হবে।
আমাকে জলির রুম থেকে বের হতে দেখে রিনা ( বোন।) অবাক হলো। খুব স্বাভাবিক। খাওয়ার টেবিলে সবাইকে রাত আর সকালের কথা বললাম যে এরকম এরকম।
কেউ আর বিশ্বাস করলো না। না করার-ই কথা। পরে মা বলল দেখতে পারিস। যা হইছে হইছে। পরে আর ডিভোর্স পেপারে সাইন করা হয়নি। জলি যেটায় করছিলো তা ছিড়ে ফেলেছে।
আস্তে আস্তে হয়ত রুম থেকে বের হয় কিন্তু কার কাছে যাবে। তাই আবারো রুমে গিয়েই বসে বসে কাঁদে।
- ভাইয়া একটা মেয়ে এভাবে সারাদিন ঘরে বসে কাঁদে তোমার জন্য তুমার একটুও খারাপ লাগেনা? ( রিনা)
- লাগে তো।
- তো যাও গিয়ে বাইরে নিয়ে এসে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দাও লজ্জায় তো বাইরে আসেনা আর কেউ যায়ও না।
- তোর কি মনে হয়। ও ভুল বোঝতে পেরেছে?
- হুম। আচ্ছা আমি যাই?
- যা তোর ইচ্ছে হলে।
রিনা গিয়ে জলির রুমে নক করলো।
জলি দরোজা খুলে রিনাকে দেখেই একটা হাসি দিলো।
- ভিতরে আসতে পারি?
- তুমি? রিনা না? আসো আসো।
- আচ্ছা আপনাকে কি বলে ডাকবো বোঝতে পারছি না।
- আমি জানি সব কিছু স্বাবাবিক থাকলে হয়ত আমায় ভাবী বলেই ডাকতে!
- আচ্ছা ভাবী ডাকলে রাগ করবা?
- কি বলো! ভাবী ডাকবা না তো কি ডাকবা?
- আসলে জানই তো বিয়ে নিয়ে সবাই বিজি ছিলো। আর তার উপর এসব। তারপর আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। কেউ ভাবতেও পারেনি। এই মেয়ে স্বাভাবিক ভাবে সবার সাথে মিশতে পারবে। এখন তো রিনা জলিকে ছাড়া কিছু বোঝেই না। শুধু রিনা না। বাকি সবাই। তবে আমার সাথে সবকিছু প্রায় আগের মতোই আছে। আস্তে আস্তে আমিও মেয়েটার মায়ায় পরে যায়। এখন মনে হয় একটু একটু হয়ত ন্যাকামো না সত্যিই আমাকে ভালবাসে। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর রুমে গেলাম। কিছুক্ষন পর জলি আসলো। যে মেয়েটা জীবনে শাড়ি পরেছে কি না আমার সন্দেহ। সেই মেয়েটা এখন প্রতিদিনই শাড়ি পরে।
- আচ্ছা একটা কথা বলি? ( আমি )
- হুম বলেন।
- সত্যি করে বলবা?
- কি?
- ভালবাসো আমাকে?
- হুম ( লজ্জা পেয়েছে মনে হয়)
- তাহলে আমার থেকে দূরে দূরে থাকো কেন?
- আপনি ভালবাসেন না তাই।
- আমি বাসি কি না তুমি জানো?
- না জানার কি আছে? ভালবাসলে তো বলতেনই ।
- ভালই তো সবাইকে পাগল করছো। রিনা তো সারাদিন ভাবী ভাবী করে।
- হুম শুধু রিনা না সোহান সহ সবাই।
- আমাকে পাগল করবা না? নাকি থার্ড ক্লাস বলে?
- ছিঃ আমাকে অপমাণ করলে খুব ভাল লাগে আপনার তাই না?
- এতে অপমান করার কি আছে?
- সবসময় নিজেকে থার্ড ক্লাস বলে আমাকে অপমান করেন।
- আচ্ছা সরি।
- নাহ সরি বলার কিছু নাই।
- আচ্ছা মেডাম আপনার হাত টা একটু ধরতে পারি?
এ শুনে জলি থ হয়ে গেছে। বিশ্বাস করতে পারছে না হয়তো।
- হুম কেন নয়?
- না তাহলে তুমার হাত টাই অপবিত্র হয়ে যাবে।
- নাহ এভাবে আবারো বলবেন না।
এবার নিজে এসেই হাত ধরলো আমার।
- ভালবাসি খুব আপনাকে। আমাকে কষ্ট দিয়ে যদি আপনি সুখ পান। তাহলে আমি কষ্ট পেতে সারাজীবন রাজি আছি।
- হাত দুটো ছাড়বা না তো? থার্ড ক্লাস বলে?
- আবারো? আপনি কোথাই থার্ড ক্লাস? আমি কি ঐদিন বোঝেছিলাম কিছু।
- তো এখন কি বুচ্ছো?
- আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
- আমার মনে হয় ন্যাকামর ও একটা লিমিট থাকা দরকার।
- এখনো ন্যাকামো মনে হয় আপনার? পুরো তিন মাস হয়ে গেলো।সবাই আমাকে ভালবাসে শুধু আপনি ছাড়া।
- ওহ। আর বাসবো বলেও মনে হয় না।
একথা শুনে হাতটা ছেড়ে দিয়ে মুখ লুকিয়ে ওপাশে গিয়ে আস্তে করে শুয়ে পড়লো। জানি কথায় খুব কষ্ট পেয়েছে।
আমি কাছে গিয়ে আবারো হাতটা ধরে বললাম।
- ভালবাসবো তুমায় একটু অনুমতি দিবা?
- একটু আগে যে বললেন কোনদিনও বাসতে পারবেন না বলে মনে হয়।
- আসলে কিভাবে বাসবো বলো? তুমায় তো আমি সাপ্তাহে তিন দিন শপিং করতে নিয়ে যেতে পারবো না। আমার তো গাড়ি নেই।
- আবারো অপমান করলেন।
- বিশ্বাস করো সত্যি বলছি।
- আমি কি বলছি কখনও যে আমার সাপ্তাহে তিন দিন শপিং করতে নিয়ে যেতে হবে। গাড়ি লাগবে?
- তুমার তো ছোট বেলা থেকে এরকম অভ্যাস।
- আমার কিছুই লাগবেনা। শুধু বলেন আপনার থেকে দূরে রাখবেন না। আমি সহ্য করতে পারিনা।
- আর দূরে রাখবো না।
- সত্যিই?
- বিয়েরপর কি কি মিথ্যা বলছি?
- না এভাবে বলেন কেন? আমি কি তা বলছি নাকি?
- তো?
- আজকের মতো খুশি আমি কোনোদিন ও হয়নি। এখন মনে হচ্ছে আমি পৃথীবির সবচেয়ে সুখি মানুষ। ছোট বেলায় মা মারা যাবার পর থেকে বাবার কাছেই মানুষ হয়েছি জানেন-ই তো। বাবাও সবসময় ব্যাবসার কাজ নিয়ে বিজি থাকে।
- সরি আমি মনে হয় তোমার মন খারাপ করে দিলাম।
- আরে না আজকেই তো আমার মন সবথেকে ভাল। আর তা করেছেন আপনি।
- তাই?
- আপনার মা কে পেয়ে আমার মনে হয় আবার আমি আমার মাকে ফিরে পেয়েছি।
- সবার মা সবার কাছে বেষ্ট।
- হু, আর আমার অনেক চুল লম্বা ওয়ালী একটা চুইট ননদ আছে।
- আর ওরা কি?
- হুম সবাই। আর কে আপনার আপন বোন কে কাজিন তা কি বলা যাবে নাকি? সবাই এক মনে হয়।
- এবার ভাল লাগলো।
- অনেক দুষ্টু একটা দেবর আছে। কত চুইট করে ভাবী ডাকে। যখন ভাবী বলে ডাক দেয় তখন সব কিছু ভুলে যায়।
- তাহলে আমিও কি ভাবি বলে ডাকব নাকি?
- না না কি বলেন। সত্যিই আমি আপনাদের পরিবার এর সদস্য হতে পেরে ধন্য। তার উপর যদি বাড়ির বড় বউ।
- হা একটা অনুরোধ করবো রাখবা?
- জীবন দিতে রাজি আছি। আপনি বলেন।
- জীবন দিতে হবেনা। যত অপমান করার আমাকে করো কিন্তু বাসার কাউকে মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলোনা। তাহলে আমি ঠিক থাকতে পারিনা।
- আবারো আমাকে ছোট করলেন। আমাকে এখনো আপনার তাই মনে হয়? একদিন ছাড়া আর কোনোদিন আমি বলছি?
- না বলতেও তো পারো। আমাদের তো আবার এতো টাকা পয়সা নেই।
এবার কেঁদেই দিলো।
- এখনো আপনি আমাকে সেরকম মেয়ে ভাবেন। আমি যদি আগের মতো টাকা দিয়ে বিচার করতাম। তাহলে কি আর এতো কষ্ট করি। উউউউউ।
- আরে এতে কেঁদে দেয়ার কি আছে?
- ওহ এখন আমার বাবার এতো টাকা আছে বলে কি সবাইকে খোটা দিয়ে বেরুবো ? আমি বোঝি তাই করি?
কেঁদেই চলল। এবার বুকে না নিয়ে কোন উপায় খোঁজে পাচ্ছিনা। তারপরেও কান্না কমেই না।
- কি হলো আরো বেশি জোড়ে কান্না করছো কেন?
- আমার কান্না করার বিনিময়ে যদি আপনি এভাবে জড়িয়ে ধরেন তো আমার কান্না করতে সমস্যা কি?
- না না এবার কান্না থামাও। নাহয় আমি গেলাম তুমি থাকো।
ছাড়ার একটা অভিনয়। তখন ও জড়িয়ে ধরলো।
- সারাজীবন এভাবে বুকে জড়িয়ে রাখবেন তো?
- বিশ্বাস হয়না? নাকি টাকা লাগবে?
- আবারো! হারানোর ভয়।
- কেন আমি কি তুমাকে ডিভোর্স দিবো নাকি? দিলে তো তুমিই দিবা।
- না না বেচে থাকতে তা হতে দেবো না। আমি যে আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
- থাকতে বলছে কে?
- আপনি রাখলে তো থাকতে হবে।
- আমি রাখলে থাকতে হবে কেন?
- আমার কি আরো স্বামী আছে যে তাদের কথা শুনবো।
- শুনে ভাল লাগল যে আমার কথা শুনবা।
- প্লিজ এভাবে আর বলবেন না। আমি অনেক কষ্ট পাই।
- চলে গেলেই তো পারো।
- না জীবন থাকতে চলে যাবোনা। যত কষ্ট-ই দেন।
- সত্যিই তো?
- হুম।
- তো একটা থাপ্পড় দেই?
- থাপ্পড় না, আমাকে এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিন হাসি মুখে মরে যেতে রাজি আছি।
- এতো ভালবাসো আমায়?
- হুম।
- আচ্ছা আমায় একটা থাপ্পড় দাও তাহলে।
- তা দেয়ার আগে যেন আল্লাহ আমার হাত কেটে নিয়ে যান।
সত্যিই মেয়েটা আমাকে অনেক ভালবাসে।
অনেক বড় শিল্পপতির মেয়ে হলেও। এখন আমাদের সাথে একদম মিশে গেছে। সবাই এখন জলি কে ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা। মেয়েটা সবাইকে আপন বানিয়ে ফেলেছে।
মন থেকে ভালবাসলে মনে হয় এরকমটা হয়। জেলাস লাগে তখন যখন সবাই প্রতিদিন আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকে এখন সবাই জলিকে নিয়ে। ইচ্ছে করেও বোনদের সাথে ঝগড়া করতে পারিনা ওরা জলিকে নিয়ে বিজি। হয় এটা করছে নাহয় ওটা করছে। জলি বলে।
- দেখছেন এখন সবাই আমাকে কতটুকু ভালবাসে। শুধু আপনিই না।
জেলাস এর থেকে বেশি ভালও লাগে। রাতে মুখ ব্যাকা করে বসে আছি। উনি আবার ভাল মেহেদী দিতে পারে তাই সবাইকে মেহেদী দিচ্ছে। অবশেষ এ আসলো।
- কি হলো আপনি এভাবে গম্ভীর মুখ করে বসে আছেন কেন? আমি কি কিছু করলাম আবার?
- না এতো মেহেদী দেয়া লাগে ওদের?
- হুম দেয়া লাগে। আমি দিবোই কোন সমস্যা? আমি দিয়ে দিবো না তো কে দিয়ে দিবে?
কিছুই বলার নাই। চুপ করে বসে আছি মনে একটা আনন্দ বা সুখ পাচ্ছি।
- সরি বলবনা কিন্তু। আচ্ছা আপনি মেহেদী দিবেন?
- নাহ আমার মনে এতো রং লাগে নাই।
- আমার লাগছে হাত বের করেন দিয়ে দেই।
- বললাম না লাগবে না।
- এই রাগ করছেন নাকি? আমি ভাবলাম কই আপনি খুশি হবেন ওদের মেহেদী দিয়ে দিছি বলে। হাহ আর কই আপনার..
- আরে আমি কি বলছি আমি খুশি হই নাই?
- তো এরকম করছেন কেন?
- হানিমুন এ যাবো।
- মানে?
- বাংলা বুঝনা?
- না বিয়ের পর একদিন ও বাইরেই ঘুরতে যান নি আমাকে নিয়ে আর হানিমুন?
- যাবা কি না বলো?
- আমি কি না করছি?
- কোথাই যাবা বলো।
- আপনার ইচ্ছা।
- মানে কি আমি একাই হানিমুন এ যাবো তুমি যাবেনা?
- আপনি যখন আদর করে ডাক দেন। তখনি আমি হানিমুন এর থেকেও বড় মুন আপনার বাসায় খোঁজে পাই বোঝলেন?
- ওকে তাহলে যাবোনা।
- আচ্ছা কক্সবাজার যাওয়া যায়? নাহয় বান্দরবন যাওয়া যেতে পারে কি বলেন?
আমি মনে মনে ভাবছিলাম। হয়ত সুইজারল্যান্ড বা সুইডেন এর কথা বলবে। নাহ মেয়েটার আর অহংকার নেই মনে হয়।
না ভাই হানিমুন এর কথা আর বলব না। এর পরের কথা বলি?? অনেক দিন পর প্রেগন্যান্ট । আর সেদিন থেকে মনে হয় বাসায় ঈদ লেগে আছে। সবাই জলিকে নিয়ে এটা ভাবে ওটা ভাবে। ছেলে হলে এ নাম রাখবে মেয়ে হলে ও নাম রাখবে। আর তখন জলি সুখ ব্যাপার টা বোঝতে পারলো। রাতে প্রতিদিন সুখের কান্না কাঁদে। যে এতোটা ভালবাসা জলির কপালে আছে বলে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ছেলে সন্তান হয়েছে কাল। সবাই এতো খুশি হয়েছে যে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। রিনা কিছুক্ষন পরপর ওর কাছে গিয়ে বলে।
-ভাবি তুমার ছেলেকে বলে দাও এক্ষনি যেন শান্ত শিষ্ট না হয়। একটু দুষ্টু না হলে ভাল লাগবেনা।
সোহান গিয়ে বলে
- ভাবি তুমার ছেলে যদি একটুও দুষ্টু হয় না তো খবর আছে বলে দাও এখনি।
এ দৃশ্যগুলি সারাজীবন বেচে থাকার প্রেরণা। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো একেকজন একেক নাম ঠিক করে রেখেছে সবাই নিজের দেয়া নাম ধরে ডাকবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top