What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected সেই ছেলেটি (1 Viewer)

Pegasus

Member
Joined
Mar 8, 2018
Threads
103
Messages
171
Credits
28,977
আজ অনেক দিন পর ময়মনসিংহ পার্কে হাঁটতে
বের হয়েছি । হাঁটতে ভালই লাগছে। সেই সাথে
এক ধরনের শূন্যতাও গ্রাস করছে। কাউকে
হারানোর শূন্যতা।
ময়মনসিংহ পার্কের এই পরিচিত রাস্তাগুলোতে
অনেকবার টুসির হাত ধরে হেঁটেছি । আজ আর টুসি
নেই । তাই একাই হাঁটতে হচ্ছে ।
টুসিকে আমার জীবন থেকে হারিয়ে
ফেলেছি,প্রায় ছয় মাস হয়ে গেল ।
পার্কের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে কালামের
ছোট চায়ের দোকানটা চোখে পড়লো ।
অনেকদিন এই দোকানটাতে চা খাওয়া হয় না । ১২-১৩
বছরের কালাম নামের এই ছেলেটা অসাধারণ চা
বানায় ।
টুসি আর আমি এই দোকানটাতে অনেকবার চা
খেয়েছি । টুসি যে স্যার এর কাছে Physics
প্রাইভেট পড়তো সেই স্যার এর বাসা ছিল
পার্কের কাছেই । বিকালবেলা ওর প্রাইভেট শেষ
হলে মাঝে মাঝেই আমাকে ফোন দিয়া পার্কে
আসতে বলতো । বিকালবেলা ওর সাথে পার্কে
হাঁটতে এসে প্রায়ই কালামের দোকানে চা খাওয়া
হতো ।
দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কালাম ডাকল,
`শাফিন ভাই,কই যান?'
এইতো, হাঁটতেছি ।'
চা খায়া যান । অনেকদিন ধরে তো আসেন না ।
আফা আহে নাই ?'
কালামের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দোকানে
গিয়ে বসলাম ।
দোকানে গিয়ে বসতেই কালাম এক কাপ চা বানিয়ে
হাতে দিল ।
চা খেতে গিয়ে টুসির কথা প্রবলভাবে মনে
হচ্ছিলো ।
ও আমার জীবনে কেন এলো , আর কেনইবা
কষ্ট দিয়ে চলে গেলো ?
মনে হচ্ছে , এইতো সেদিনের ঘটনা । পাশের
বাসায় আসা নতুন ভাড়াটিয়ার সুন্দরী মেয়েটিকে হঠাৎ
আমার নজরে পড়লো । সে দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার ।
কলেজ শেষ করে যখন বাসায় ফিরি তখন পাশের
বাসার ২য় তলার বারান্দায় চোখ চলে যায় । দেখলাম ,
উদাস উদাস ভাব নিয়ে একটি মেয়ে আকাশের
দিকে তাকিয়ে আছে । প্রথম দেখাতেই
মেয়েটিকে কেমন যেন ভালো লেগে
গেলো । তারপর মাঝে মাঝেই মেয়েটির সাথে
রাস্তায় দেখা হতো । কখনও দেখতাম বিকালে
প্রাইভেটে যাচ্ছে , কখনও দেখেছি স্কুল টাইম
এ রিকসার জন্য দাড়িয়ে আছে ।
একদিন হঠাৎ মাথায় ভূত চাপল টুসিকে রিকসার পেছন
পেছন ফলো করে ওর স্কুল পর্যন্ত যাবো ।
যেই ভাবা সেই কাজ । ওর স্কুল টাইম এ বাসা
থেকে সাইকেল নিয়ে বের হলাম । কিছুক্ষন
পরই টুসি বাসা থেকে বের হয়ে রিকসায় উঠলো ।
আমিও সাইকেল নিয়ে ফলো করে ওর স্কুল
পর্যন্ত গেলাম । ও স্কুলে ঢুকে গেলে আমি
আবার বাসায় চলে আসলাম । এভাবে মাঝে মাঝেই
ফলো করতাম । একদিন ফলো করছি এমন সময়
দেখলাম , টুসি বারবার রিকসার পেছন দিকে তাকিয়ে
আমাকে দেখছে । বুঝতে পারলাম ফলো করার
বেপারটা ও ধরে ফেলেছে । তাই , ওই দিনের
পর থেকে ভয়ে আর ফলো করি নাই । কিন্তু আমি
যে টুসির প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পরেছি সেটা
আস্তে আস্তে অনুভব করলাম । মনে মনে ছিন্তা
করছিলাম , কিছু একটা অবশ্যই করতে হবে ।
আল্লাহের রহমতে একটা রাস্তা পেয়েও গেলাম ।
আমার এক মেয়ে ফ্রেন্ড টুসিদের বাসার নিচের
তলার ফ্ল্যাট এ থাকতো । সুযোগ বুঝে আমার
ফ্রেন্ডকে একদিন সব খুলে বললাম । ওর
সাহায্যেই আমি পরে টুসির মোবাইল নাম্বারটা
পেয়ে গেলাম । শুরু হল মেসেজ পাঠানো ।
টুসিকে মাঝে মাঝেই মেসেজ পাঠাতাম । একদিন
সাহস করে কল করে বসলাম । ও ফোন রিসিভ করার
পর ভদ্র ভাষায় কিছু গালি শুনতে হল । তবুও
নাছোড়বান্দার মত লেগেই রইলাম । মাঝে মাঝেই
কল করতাম ।কিন্তু ও রিসিভ করতো না । তারপর
কলেজ এ পরীক্ষা শুরু হুএ যাওয়ায় ব্যস্ততায় টুসির
কথা ভুলেই গিয়েছিলাম । ওকে পাবার আশাও প্রায়
ছেড়ে দিয়েছিলাম । পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর
হঠাৎ একদিন টুসির নাম্বার থেকে আমার মোবাইল এ
একটা কল আসে ।
আমিতো আকাশ থেকে পড়লাম । ভয়ে ভয়ে
কলটা রিসিভ করলাম । রিসিভ করার পর টুসি যে
কথাগুলো বলেছিল সে কথাগুলো হচ্ছে :
আপনি কে সে সম্পর্কে আমি জানতে পেরেছি
। তিথি আপু (আমার সেই মেয়ে ফ্রেন্ড ,যে
টুসিদের বাসার নিচের ফ্ল্যাট এ থাকে) আমাকে সব
বলেছে ।
কাউকে ভালো লাগলে সেটা বলতে হয় ।
কাপুরুষের মত ফোন দিয়ে কাউকে বিরক্ত করে
ভালবাসা আদায় করা যায় না । আর কাউকে ভালবাসতে
হলে তাকে বুঝতে হয় , ভালো লাগতে হয় , যাচাই
করতে হয় । তারপর তো ভালবাসা । হুট করে
ভালবাসার কথা বললেই ভালবাসা যায় না । '
এই কথাগুলো বলে ও লাইন কেটে দেয় ।
এভাবেই আমাদের রঙিন স্বপ্ন বোনা শুরু হয়ে
ছিল । ওই দিনের ফোন কলের পর থেকে আমি
সব সময় টুসির পাশে থাকার চেষ্টা করেছি । মাঝে
মাঝেই ওর স্কুল এ যাওয়ার সময় সাইকেল দিয়ে
রিকসার সাথে সাথে ওর স্কুল পর্যন্ত গিয়েছি ।
বিকালেও প্রায়ই ওর প্রাইভেট এ যাওয়ার সময় সাথে
সাথে গিয়েছি । ও শুধু পিছনে ফিরে মুচকি হাসত ।
এই মুচকি হাসিটাই আমার কাছে চাদের আলো মনে
হতো ।
এভাবে চলার দুই মাস পর টুসিকে সরাসরি প্রপোজ
করলাম । ও কিছু না বলে শুধু একটু হেসেছিল । ২
দিন পর ও যখন আমার প্রস্তাবে হ্যাঁ' বলল তখন আমি
যে কি খুশি হয়েছিলাম সেটা বলে বোঝানো
যাবে না ।
আমাদের দিনগুলো স্বপ্নের মত এগিয়ে যেতে
লাগলো । টুসির ভালবাসায় নিজেকে পৃথিবীর
সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হতো ।
আমার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝেই টুসি
জিজ্ঞেস করতো , আমাকে ছেড়ে কখনো
যাবে নাতো ?'
আমি ওর হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বলতাম ,
আমার এই লক্ষ্মী পাগলীটাকে ছেড়ে আমি
কখনোই যাবোনা ।'
এইভাবে স্বপ্নের ঘোরে অনেকগুল দিন
কেটে গেলো । টুসি এস .এস .সি তে জি .পি . এ
- ৫ পেয়ে ভিকারুন্নিসা কলেজ এ ভর্তি হল । ও ঢাকা
চলে যাওয়ার আগের দিন আমাকে জড়িয়ে ধরে
অনেক কেদেছিল । ও ঢাকায় ওর খালার বাসায়
থাকতো । কলেজ বন্ধ হলে ও যখন ময়মনসিংহ
আসতো তখনি শুধু আমাদের দেখা হতো । আর
ফোন এবং ফেসবুক এ তো সব সময়
যোগাযোগ থাকতোই ।
আমিও ব্যস্ত হয়ে পড়লাম এইচ .এস . সি পরীক্ষা
নিয়ে । কেটে যেতে লাগলো দিনগুলো
..........
এইচ.এস.সি পরীক্ষা হয়ে গেল । জি .পি . এ – ৫
পেয়ে ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হলাম । তারপর শুরু
হয়ে গেল ভর্তি যুদ্ধ । চান্স পেলাম শাহজালাল
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে । নতুন
বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালি দিন আর টুসির ভালবাসা নিয়ে
মুহূর্তগুলো ভালই কাটছিল । কিন্তু আমাদের সুখটা
আর বেশি দিন স্থায়ী হল না । আমাদের
সম্পর্কের ব্যাপারে টুসির ফ্যামিলিতে জানাজানি হয়ে
গেল । ফ্যামিলির চাপে এক সময় টুসি আমার সাথে
যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিল । ভেবেছিলাম
সব ঠিক হয়ে যাবে । কিন্তু , কিছুই ঠিক হল না ।
জীবনটা কালো অন্ধকারে ঢেকে গেলো
হঠাৎ করেই । দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছিলো ।
মোবাইলে কল আসলে মনে হতো এই বুঝি টুসি
ফোন করলো । কিন্তু , সেই আশা আশাতেই
থেকে যেতো । শুধু ভাবতাম , ফ্যামিলির চাপে ও
আমাকে এত সহজেই ভুলে গেলো ।
প্রায় দেড় মাস পর যখন সত্যি ঘটনাটা জানতে পারলাম
তখন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো ।
আসলে , টুসি আরেকটি ছেলের সাথে
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল । তাই , ফ্যামিলির
চাপের অজুহাত দেখিয়ে ও আমার কাছ থেকে
দূরে সরে যাচ্ছিলো । হিমি নামে টুসির এক
বান্ধবীর কাছ থেকে যেদিন কথা গুলো
শুনেছিলাম সেদিন কিছুতেই নিজের কানকে বিশ্বাস
করাতে পারছিলাম না । মনে হচ্ছিলো এটা একটা
স্বপ্ন , আর স্বপ্নটা বুঝি এখনি ভেঙে যাবে ।
যেই মানুষটাকে এত বেশি বিশ্বাস করতাম , এত
বেশি ভালবাসতাম সেই মানুষটা আমাকে আজ এভাবে
কষ্ট দিলো ।
ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সেদিনই টুসিকে ফোন
দিয়েছিলাম । ভেবেছিলাম সবই মিথ্যা বলে প্রমাণিত
হবে । কিন্তু , সব কিছু ভুল প্রমাণিত করে টুসি যখন
সত্যি ঘটনাটি স্বীকার করলো তখন আমি
কিছুক্ষনের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম । ইচ্ছা
হচ্ছিলো দৌড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাই ।
' কি দোষ ছিল আমার ? কি ভুল করেছিলাম আমি ?
আমিতো শুধু ভালবেসেছিলাম । '
' হে আল্লাহ , আমার ভালোবাসাটাই কি দোষ ছিল ।
এটাই কি আমার ভুল ছিল । '
আসলে , এরকম দুঃখ পাওয়াটাই মনে হয় ভালোবাসা ।
কথাগুলো চিন্তা করতে করতে কখন যে
অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে বুঝতেই পারলাম
না । ঘর ভাঙল কালামের ডাকে ।
-শাফিন ভাই , আপনের চা তো অনেক আগেই
ঠাণ্ডা হইয়া গেছে । আরেক কাপ চা বানায়া দেই ?
-না থাক । আজকে আর লাগবে না । আরেকদিন
এসে খাবো ।
চায়ের কাপটা রেখে টাকা দিয়ে যখন চলে
আসছিলাম , তখন আবার পিছন থেকে কালাম ডাক
দিলো ।
-শাফিন ভাই , একটু শুইনা যান ।
যাওয়ার পর কালাম আমাকে ওর দোকানের পিছনে
একটা গোলাপ গাছ দেখাল । গাছটাতে একটা
গোলাপ ফুটে আছে । তখনি আমার গাছটার কথা
মনে পড়লো । আমিতো একবারে ভুলেই
গিয়েছিলাম । গত বছর , বৃক্ষ মেলা থেকে এই
গোলাপ গাছটা কিনে টুসি এখানে এনে রোপণ
করেছিলো । বলেছিল , আমাদের ভালোবাসার
নিদর্শনস্বরূপ গাছটা এখানে থাকবে । গাছটা ঠিকই
রয়ে গেছে , কিন্তু আমাদের ভালোবাসাটা হারিয়ে
গেছে ।
-শাফিন ভাই , আরেকদিন আসার সময় আফারে সাথে
কইরা নিয়া আইসেন । আফা গাছে ফুল দেখলে
অনেক খুশি হইব ।
সে কি আর কখনো আসবে এই দোকানে চা
খেতে ? হয়তো আসবে অন্য কারো হাত ধরে
......... কথাগুলো চিন্তা করতে করতে হেঁটে
যাচ্ছি পার্কের সেই চিরচেনা পথটি
ধরে...............

...The End...
 

Users who are viewing this thread

Back
Top