গতকাল তামিম যে কাজটা করল তার জন্য যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন তামিমকে সবাই মনে রাখবে। ক্রিকেট খেলা দেখার সাথে আমার পরিচয় ২০০৩ সালে যখন ক্লাস ওয়ানে পড়তাম। ছোটবেলায় বাবা অনেক খেলা দেখত আর আমিও তখন বসে যেতাম বাবার সাথে। স্পষ্ট মনে আছে তখন বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের ওয়ানডে সিরিজ চলছিল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ পুরো ৫০ ওভার খেলে অল-আউট না হয়ে ১৩৪ করেছিল আর তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৮৬ রান তুলেছিল। তখন বাংলাদেশের পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করা কিংবা ১৬০ রানের বেশি করাই ছিল যেন একটা আনন্দের উপলক্ষ। আমাদের এলাকায় তখন ক্রিকেট বলতেই ছিল ভারত-পাকিস্তানের খেলা। তখন ভারত-পাকিস্তান খেলার উত্তেজনা যেন ফুটবলের ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতই ছড়িয়ে পড়ত এলাকাতে।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর স্মৃতি
আমাদের বাবা-চাচা-ফুফাদের কাছে শুনতাম কপিল দেব, জাভেদ মিয়াদাদ,জোয়েল গার্নার কিংবা ভিভ রিচার্ডসের কথা। এরপর ৯০এর দশক গেল ওয়াসিম আকরাম, সৌরভ গাঙ্গুলি আর ওয়াকার ইউনুসের গল্প শুনতে শুনতে। বাংলাদেশ তখন এক পুচকে শিশু। বড় ভাইদের কাছে শুনেছি বাংলাদেশ যখন ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জিতেছিল তখন নাকি সারা দেশে মহা-উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরপর ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে যখন পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ তখন নাকি বাংলাদেশের উৎসব বিশ্বকাপ জয় করার উৎসবের চেয়ে কোনও অংশে কম ছিল না।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর স্মৃতি
ছোটবেলায় তো বড় ভাইদের মুখে শুধুই ঐ জয়ের কথা শুনতাম। এরপর একুশ শতক আসে। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে। অনেক দেশ বাংলাদেশে এসে ম্যাচ খেলে যায় কিন্তু বাংলাদেশ কখনও জিতে না। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ হারিয়েছিল স্কটল্যান্ড এবং শক্তিশালী পাকিস্তানকে৷ কিন্তু ২০০৩ বিশ্বকাপ যেন বাংলাদেশের জন্য ছিল একটা দুঃস্বপ্ন। কোনও ম্যাচে জয়তো পেলই না বরং কানাডার মত দলের কাছেও লজ্জাজনকভাবে হারল। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে জয়ের পর অনেক ম্যাচই খেলল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই জয় আর ধরা দিচ্ছিল না। মাঝে ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিততে জিততে ১ উইকেটে হেরে যায়। খালেদ মাহমুদসহ সারা বাংলাদেশ কেঁদেছিল সেদিন। ৫ বছর কেটে গেল কিন্তু জয় যেন অধরাই রয়ে গেল বাংলাদেশের কাছে!! এরপর আসল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
শততম ম্যাচে স্মরণীয় জয়
২০০৪ সালের ২০ মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ রানের জয় ছিল ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের প্রথম জয় আর সবমিলিয়ে চতুর্থ জয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে পরের দিন পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম ছিল, "কতদিন পর বাংলাদেশের জয়!" সে বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ তাদের শততম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ভারতের বিপক্ষে। এমনিতেই ছিল শততম ম্যাচ, তার উপরে তখনকার বাংলাদেশ যখন ভারতকে ১৫ রানে হারিয়ে দিল তখন আমার মত ক্লাস টু পড়ুয়া বাচ্চাদেরও যেন আনন্দের সীমা ছিল না।
শততম ম্যাচে স্মরণীয় জয়
২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসেই বাংলাদেশ আমাদের এনে দিল আরও বেশি বড় উপলক্ষ। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিতার সাথে সাথে জিতে নিল প্রথম টেস্ট সিরিজও। টেস্ট সিরিজ জিতার পর জিতে নিল ওয়ানডে সিরিজও। তখন বাংলাদেশের তারকা বলতে ছিল বর্তমান তারকা তামিমের অগ্রজ নাফিস ইকবাল, হাবিবুল বাশার, তাপস বৈশ্য, মাশরাফি মুর্তজা, মানজারুল ইসলাম রানা, আশরাফুল প্রমুখ। বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলার কৃতিত্বে আরেকজন ছিলেন যিনি হলেন তখনকার বাংলাদেশের কোচ ডেভ হোয়াটমোর। আজও বাংলাদেশ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ডেভ হোয়াটমোরকে।