আপনি জানেন আপনার কি করা উচিৎ কিন্তু আপনি করছেন না কাজটি। কিংবা আপনি একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে কাজটি করছেন। এবং বারবারই এই অলসতার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলছে আপনার জীবনে। ব্যাপারটি সোজাসাপ্টা ভাবে অলসতা বললে ভুল হবে। উদ্বিগ্নতার যাঁতাকলে আটকে পড়েও এই গড়িমসির মনোভাব থেকে বের হতে পারে না অনেকেই। শুধু অলস, অগোছালো ব্যক্তিরাই যে এই সমস্যায় পড়েন তা নয়। অনেক কর্মক্ষম, বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী ব্যক্তিরাও ধরতে পারেন না ঠিক কি কারণে তারা চাইলেও অনেক কাজ করা হয়ে ওঠে না তাদের দ্বারা সময়মত।
Source: Pinterest
যদি আপনিও বোধ করেন আপনি এই দীর্ঘসূত্রিতার শিকলে বন্দী হয়ে গেছেন, তাহলে নিচের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করে মিলিয়ে নিতে পারেন আপনার মানসিক অবস্থাটিকে।
১) কোন কাজ হাতে থাকা অবস্থায় আপনার কি মনে হতে থাকে, এ কাজটি সম্পূর্ণ ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে?
২) আপনি ব্যর্থ হলে আপনার কাছের লোকেরা কেমন বোধ করবে তা কি আপনার চোখে ভাসে?
Source: Horned Frog Blog – WordPress
৩) আপনি কি বিশ্বাস করেন সবকিছুতে প্রাণপণ লেগে থাকার চেয়ে আপনি যেটাতে ভাল সেটায় লেগে ব্যর্থ হলেও ব্যাপারটা খারাপ না?
৪) আপনি সফলতা পেলে যেই দায়িত্বগুলো আপনার ওপর বর্তাবে তা ভেবে কি আপনি উচ্ছ্বসিত বোধ করেন?
৫) "আমি ভাল করলে অন্যরা আমার প্রতি আরো আশাবাদী হয়ে উঠবে"-আপনি কি এই মতাদর্শী?
৬) আপনি সফলতা পেলে অন্য ব্যক্তিরা 'আসল আমি' কে খুঁজে পাবে, এমনটা ভাবেন?
৭) কিছু করতে চাইলে তা নিখুঁতভাবে করা উচিত বলে ভাবেন কি?
৮) কিছুই যখন আপনার অনুকূলে না তখন কি জিদ চেপে যায়?
৯) খুঁত নিয়ে কোনো কাজ না করে বরং কাজটি বাদ দেয়াই ভাল বলে ভাবেন কি?
আপনি কি জবাব দিচ্ছেন, কিভাবে জবাব দিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে বলে দেয়া সম্ভব আপনার গড়িমসি মনোভাব বা দীর্ঘসূত্রিতার কারণগুলো।
১ থেকে ৩ প্রশ্নগুলোয় আপনার উত্তর 'হ্যাঁ' হলে বলে দেয়া যায় আপনি ব্যর্থ হতে যথেষ্ট ভয় পান এবং এটিই আপনার দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারণ। আপনি মেধা ও শ্রম দুটোই দিচ্ছেন তারপরও সম্ভাবনা থাকছে আপনার বিফলতার, এ ব্যাপারটি ভয় ও উদ্বেগ তৈরি করে আপনার মাঝে। তাই আপনি কাজটি নিয়ে গড়িমসি শুরু করে দেন আপনার মনের ভিতরেই। আপনি কাজটি করে বাস্তবিকভাবেই ব্যর্থ হয়ে গেলে আপনার দুর্বল চিত্ত অজুহাত খোঁজে, এটি আপনার যোগ্যতার আসল পরিমাপ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সময় পেলেই আপনি কাজটি সুষ্ঠুতার সাথে সম্পন্ন করতে পারতেন।
Source: Odyssey
অপরদিকে ৪ থেকে ৬ প্রশ্নগুলোর উত্তর 'হ্যাঁ' হওয়ার মানে হল আপনি বিফলতাকে না ভয় পেয়ে ভয় পান সফলতাকে। সফলতার হাত ধরে যেই দায়িত্ববোধ এসে বর্তায় তা এড়িয়ে চলতে এসব ব্যক্তি বন্ধু পাতান দীর্ঘসূত্রিতার সাথে।
৭-৯ প্রশ্নগুলোতে আপনার উত্তর 'হ্যাঁ' এর অর্থ হল আপনি ব্যক্তি হিসেবে নিখুঁতবাদী। যেহেতু খুঁত নিয়ে কোনো কাজ আপনার ধাঁচে নেই এমনটি আপনি ভেবে থাকেন, আপনার ঐ কাজটিই করা হয়ে ওঠে না কারণ বাস্তবিক অর্থে অন্য সকল ব্যক্তির মত আপনিও একই মানসিক সমস্যায় ভুগেন।
গড়িমসি করার কারণগুলো ভিন্ন হলেও এর ফলাফলগুলো একই। উদ্বেগ, এড়ানো ও লজ্জা-এই তিন জিনিসের শিকলের আবর্তে হতাশ হয়ে গিয়ে কিছুই করা হয়ে উঠছে না আর এই চিন্তার ভারে ক্রমশ ম্রিয়মাণ হয়ে যাওয়াই এর ফলাফল।
কাজটি না করে আপনি বোধ হয় আড্ডা দিচ্ছেন বন্ধুর সাথে কিন্তু আপনার আড্ডাও উপভোগ্য হয়ে ওঠে না কাজটি না করতে পারার চাপে।
Source: SlideShare
মোদ্দা কথা কি জানেন?
গড়িমসি বলেন আর দীর্ঘসূত্রিতাই বলেন, এটি আপনাকে শুধু কষ্ট দিয়ে হতাশই করে যাবে, সমাধান বা সাফল্য কিছুই দিবে না।
তবে, এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ আছে।
'কগনিটিভ বিহেভিয়ারিয়াল থিওরি' এর হাত ধরে মানসিক খচখচানি জনিত এমন সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পেয়ে যান বহু লোক।