What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কাসিদা: সেহরিতে রোজাদারদের ঘুম ভাঙানোর হারিয়ে যাওয়া ঢাকাই সংস্কৃতি (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
ITv7g0w.jpg


আমরা কাসিদাওয়ালা

যাই ডেকে যাই

ওঠ ওঠ মমিন

সেহরির সময় নাই।

মুঘল আমলে পুরান ঢাকার রমজানের রাতে এমন সুরেলা কন্ঠ দিয়ে একদল তরুণ রোজাদারদের ঘুম থেকে তোলার 'মহান' দায়িত্ব পালন করত। ঢাকঢোল পিটিয়ে দলবেঁধে রমজান মাসের স্তুতির পাশাপাশি পাড়ার লোকদের জানিয়ে দিত সেহরীর সময় এসেছে, ঘুম থেকে উঠতে হবে। ফারসি ও উর্দু ভাষার এসব গীত কালের বিবর্তনে বাংলার রূপ পরিগ্রহ করে বিশ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ প্রায় হারিয়ে গেছে। যদিও আজো পুরান ঢাকায় রমজান আসলে ভোররাতে এমন হাকডাক শুনা যায় কিন্তু তা নেহাত ঐতিহ্যিক ধারা রক্ষা। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের ঘুম ভাঙে এখন মুঠোফোনের এলার্মের শব্দে, আর প্রয়োজন পড়েনা এসব সওয়াব অর্জনের ব্রত নিয়ে ঘুম থেকে তোলা তরুণের দলকে। সেহরীর পূর্বে উর্দু ফার্সি ভাষায় রোজাদারদের জাগিয়ে তোলার এ পদ্ধতির নাম কাসিদা। পুরান ঢাকার হারিয়ে যাওয়া সেই কাসিদা সম্পর্কে জানব আজ।

60iwgYW.jpg


Source: The Islam

কাসিদা কি?

কাসিদা একটি ফার্সি শব্দ। এর মূল অর্থ হচ্ছে কবিতার ছন্দে প্রিয়জনদের প্রশংসা করা। কাসিদা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে আরবি ক্বাসাদ থেকে। ক্বাসাদ শব্দের অর্থ পরিপূর্ণ । ক্বাসাদ বিবর্তিত হয়ে ফারসি কাসিদায় রূপান্তরিত হয়েছে । সহজ ভাষায় বলতে গেলে যে কবিতায় প্রিয়জনের প্রশংসা করা হয় তাকে কাসিদা বলে। ইবনে কুতাইলা রচিত নবম শতকের বই আন-শিরা ওয়া আন শুয়ারা'য় কাসিদার গঠনতন্ত্র উল্লেখ করা হয়েছে। এ গ্রন্থ অনুযায়ী কাসিদার রয়েছে তিনটি অংশ। প্রথম অংশকে বলা হয় নসিব, যেখানে স্মৃতিকাতরতা প্রাধান্য পায়। দ্বিতীয় অংশকে বলা হয় তাখাল্লাস, যেখানে জীবনযাত্রার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হয়। আর তৃতীয় অংশকে বলা হত হিজা, যেখানে মূলত অন্যের প্রতি ব্যঙ্গার্থে ব্যবহার করা হত। কাসিদা বিভিন্নরকম হয়ে থাকে। দর্শনতত্ত্ব, প্রশস্তিমূলক, ভক্তিমূলক, রমজান ও ইদের কাসিদা।

বাংলাদেশে কাসিদা

বাংলাদেশে কাসিদার প্রচলন মুঘলদের হাত ধরে। ১৬০৮ সালে সুবাদার ইসলাম খানের সাথে মুঘল সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ঢাকায় কাসিদার বিকাশ ঘটে। রাজবন্দনা, আল্লাহ-নবীর সিফত, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হত এসব কাসিদায়। ঊনিশ শতকের পর থেকে রোজার মাসে কাসিদা পাঠের ধুম পড়ে যায় ঢাকার অলিতে গলিতে। প্রথম প্রথম ফার্সি ও উর্দুতে হলেও পরে ঢাকার স্থানীয় হিন্দুস্তানি ভাষায় কাসিদার চর্চা হতে থাকে। বিশ শতকের সেই জমজমাট কাসিদার আসর কিংবা কাসিদাওয়ালাদের হাকডাক আজ ঐতিহ্যের ইটের গাঁথুনিতে বিলীনপ্রায় যদিও তবুও রমজানের রাতে আজো পুরান ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে সেই পুরনো সংস্কৃতির কিঞ্চিত চর্চা লক্ষ্য করা যায়।

রমজানের কাসিদা

ঢাকার কাসিদা চর্চা বলতে প্রধানত রমজানের কাসিদাকেই নির্দেশ করে। তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল রমজানের কাসিদা। প্রথম পর্বকে বলা হত চাঁন রাতি আমাদ। এই পর্বে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে সেহরির জন্য ঘুম থেকে বাসিন্দাদের তুলত কাসিদাওয়ালারা। দ্বিতীয় পর্বকে বলা হত খোশ আমদেদ। রমজানে মধ্যভাগ পর্যন্ত তার গুরুত্ব উল্লেখ করা হত এ কাসিদায়। তৃতীয় পর্বকে বলা হত আল-বিদা। রমজানকে বিদায় জানিয়ে কাসিদাওয়ালারা সুমধুর আবেগঘন কন্ঠে ঘুম থেকে জাগাতো মানুষদের। এছাড়া কাসিদার আসর বসতো একটি বিশেষ জায়গায়।

sj2IiXB.jpg


Source: YouTube

যেহেতু হযরত আলী রমজানের ১৯ তারিখ খঞ্জরবিদ্ধ হোন এবং ২১ তারিখ মারা যান সেহেতু বিদায়ি কাসিদায় এই বিষয়টিকে ফুটিয়ে তোলা হত এবং সে অনুযায়ী শোকগাথা পরিবেশিত হত। রমজানের শেষদিকে পুরান ঢাকার পাড়ায় পাড়ায় কাসিদার আসর বসত, প্রতিযোগিতা হত এ পাড়া-ও পাড়ার কাসিদাওয়ালার মাঝে। প্রত্যেক পাড়ার নিজস্ব দলের কাছে ছিল পাড়ার মানমর্যাদার দায়িত্ব। পুরান ঢাকার উর্দু রোড ছিল কাসিদার মূল আসরকেন্দ্র। এছাড়া হোসনি দালান, বংশীবাজারেও নিয়মিত কাসিদার আসর বসত। সেহরির সময়ে যখন কাসিদাওয়ালারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাক দিত তখন জনপ্রিয় সব সিনেমার গানের অনুকরণে এসব কাসিদাকে মনে হত এক অপার্থিব সংগীতের দ্যোতনা। রমজানের বিদায়ী কিছু কাসিদার উল্লেখের লোভ সামলাতে পারছি না।

কাসিদা আল বিদা:

আয় তিশ দিনকে মেহমা

আয় মাহে রমজা আল বিদা

তুঝে সে থি সারি খুবইয়া

আয় মাহে রমজা আল বিদা

ত্যু হ্যায় নুযুলে মাগফেরাত

ত্যু হ্যায় নুযুলে মুরতুজা

ত্যু হ্যায় জাহান্নাম কি আসা

মাহে রমজা আল বিদা ।

[হে ত্রিশ দিনের মেহমান

তোমাকে বিদায় সম্ভাষণ

হে রমজান মাস, তোমাকে বিদায় সম্ভাষণ

তোমার ভেতর ছিল সব মাহাত্ম্য

হে রমজান মাস, তোমাকে বিদায় সম্ভাষণ

তুমি ছিলে ক্ষমার, তুমি ছিলে মর্যাদার

তুমি ছিলে জাহান্নাম থেকে মুক্তির

হে রমজান মাস, তোমাকে বিদায় সম্ভাষণ ]

k6TPMIP.jpg


Source: Poriborton

ইদের কাসিদা

ইদের দিন এবং ইদের মিছিলে পুরান ঢাকায় কাসিদা যোগ করত নতুন মাত্রা। ইদের কাসিদায় একজন মূল গায়ক থাকতেন যাকে বলা হত লোকমাদার। তার কথা শেষ হলেই দলবদ্ধভাবে কোরাস গাওয়াই ছিল কাসিদার রীতি।

ইদ-কাসিদা

ইদ আয়ী হারতারাফ

এশরাতকা সামা হোগিয়া

কিয়া গালে মিলমিলকে খোশ

হার মুসলমা এক হোগিয়া।

হো গায়্যি হ্যায় রোজায়ে

এলাহি মে কাবুল

আতি হ্যায় হার সেনতেসে

আল্লাহ আকবার কি সাদা

ইদ আয়ী হারতারাফ।

[ইদ এসেছে চারদিক উজ্জ্বল করে

ঐক্যের সময় হয়ে গিয়েছে

খুশিতে গলা গলায় মিলিয়ে

সব মুসলমান এক হয়ে গেছে

আল্লাহর কাছে রোজা কবুল হয়ে গেছে

চতুর্দিক হতে আল্লাহ আকবর শুনা যাচ্ছে

ইদ এসেছে চারদিক উজ্জ্বল করে]

কাসিদার বিলুপ্তি

ঊনিশ শতকের শেষ নাগাদ শুরু হওয়া কাসিদা পুরান ঢাকার সংস্কৃতিতে মিশে গিয়েছিল বেশ ভালভাবেই। রমজান আসলেই ঢাকার পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে যেত কাসিদা প্রতিযোগিতার ধুম, গঠন করা হত স্বেচ্ছাসেবক যারা কিনা সেহরিতে গীত গেয়ে পাড়ার লোকদের ঘুম ভাঙানোর পবিত্র দায়িত্ব পালন করত। উঠতি বয়সী এসব তরুণ আজ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে কিন্তু পুরান ঢাকার অলিগলিতে রেখে গেছে সেই পুরনো ছাপ। তাই আজো স্বল্প পরিসরে হয় কাসিদা প্রতিযোগিতা, ঐতিহ্যিক ধারা রক্ষার সাথে তারা মনে করিয়ে দেয় সেই সেকেলে জীবনের যাপিত কর্মের কথা। আজো বুঝি হোসনী দালান কিংবা উর্দু রোডের অলিতে গলিতে কান পাতলে শুনা যাবে,

আমরা কাসিদাওয়ালা

যাই ডেকে যাই

ওঠ ওঠ মমিন

সেহরির সময় নাই।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top