What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

জরথুস্ত্র ও জরথুস্ত্রবাদের ইতিকথা (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
uNVIBlu.jpg


খ্রিষ্টপূর্ব ৬৬০ অব্দে আজারবাইজানে জন্ম হয় এক ঐতিহাসিক চরিত্রের। নাম তার জরথুস্ত্র। পারস্যের প্রথম একেশ্বরবাদী ধর্ম জরথুস্ত্রবাদের গর্বিত প্রবর্তক হিসেবে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন তার অনুসারীদের মাঝে। ভারত, বর্তমান ইরান ও ইউরোপের কিছু দেশে জরথুস্ত্রবাদের অনুসারীদের সন্ধান পাওয়া যায়। ধর্মটি অতটা জনপ্রিয় না হলেও একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে এর গুরুত্বও নেহাতপক্ষে কম নয়। তবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে জরথুস্ত্র তার প্রচলিত ধর্মকে একেশ্বরবাদী বললেও আদতে তার ধর্মের নীতির সাথে দাবিটি সাংঘর্ষিক।

7tn1M5G.jpg


জরথুস্ত্রবাদের প্রতীক ; Source: clevelandpeople

জরথুস্ত্রের পরিচয়

জরথুস্ত্রের জন্মকাল, জন্মস্থান এমনকি তার প্রবর্তিত ধর্মীয় মতবাদ নিয়ে ঐতিহাসিকগণ বেশ দোলাচলে থাকা মত প্রদান করেছেন। খুব সম্ভবত তিনি আজারবাইজানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ কিংবা ৬৬০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তার জন্ম হয়। ম্যাগি সম্প্রদায়ভুক্র জরথুস্ত্র তার স্বজাতির দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হোন। এতে ম্যাগি সম্প্রদায় তার উপর বিরাগভাজন হয়। এমনি একদিন মরুভূমির মধ্যে ইতস্তত পদচারণ করার সময় দৈববাণী প্রাপ্ত হন তিনি। তিনি দাবি করেন ঐসমই তার ওপর স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ আসে। আর এরই সূত্র ধরে জন্ম নেয় এক নতুন ধর্ম জরথুস্ত্রবাদ বা Zoroastrianism এর। জন্মভূমিতে আশাহত হয়ে নতুন দর্শন প্রচারের উদ্দেশ্যে জরথুস্ত্র পাড়ি জমান খোরাসানে। খোরাসানের মানুষ নতুন এ ধর্মের স্বাদ নিতে জরথুস্ত্রের নিকট ভিড় করে, আশানুরূপ সাড়া পেয়ে জরথুস্ত্র নিজেকে আরো মেলে ধরেন। অচিরেই তার ভক্ত অনুসারী বাড়তে থাকে এবং স্বয়ং পারস্য সম্রাট দারায়ূসের পিতা পারথিয়া ও হিরকানিয়ার পারসিক শাসক হিসটেসপাস এ ধর্ম গ্রহণ করেন।

hPa2GoI.jpg


জরথুস্ত্র ; Source: WIZARD VARNISH

জরথুস্ত্রবাদের উদ্দেশ্য

জরথুস্ত্রবাদ প্রচারের উদ্দেশ্য এত গভীর ছিল না। তিনটি উদ্দেশ্যের উপর দাঁড়িয়ে এ ধর্মের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমত, প্রচলিত বিশ্বাসকে পবিত্র ও আরো সত্য করে তোলা। দ্বিতীয়ত, মানুষের মধ্যে বহু দেবতা বিশ্বাস ও যাদুবিদ্যার অবসান ঘটানো এবং ধর্মে নৈতিকতার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।

জরথুস্ত্রবাদের বৈশিষ্ট্য

জরথুস্ত্রবাদ প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে প্রধান যে বৈশিষ্ট্য সেটা হচ্ছে দ্বৈতবাদ বা Dualism. অর্থাৎ ধর্মের দ্বৈত বিশ্বাস। জরথুস্ত্র মত অনুসারে দুজন পরম শক্তিশালী দেবতা পুরো বিশ্বকে চালনা করেন। একজন হচ্ছেন আহুর মাজদা অন্যজন হচ্ছেন আহরিমান। এরা যথাক্রমে মঙ্গল ও অমঙ্গলের দেবতা। সত্য আর ন্যায়বানদের দেবতা হচ্ছেন আহুর মাজদা এবং আহরিমান হচ্ছেন হিংসা ও শঠতার প্রতীক। এই দেবতার মাঝে বিরতিহীন সংঘর্ষ চলছে এবং শেষ পর্যন্ত আহরিমানের উপর জয়ী হন আহুর মাজদা। এখানেই জরথুস্ত্রবাদের মূল খটকা। একেশ্বরবাদী ধর্ম বলা হলেও, জরথুস্ত্র নিজে বহু দেবতার অবসান চাইলেও তিনিই আবার একাধিক দেবতার অস্তিত্বের কথা স্বীকার করেছেন। তাই আদতে এখানে জরথুস্ত্র বহু দেবতার বিলোপ ঘটাতে পারেননি।

1fZFt33.jpg


ইয়াজদে জরথুস্ত্র জাদুঘর ; Source: blog.persiaport

হলি গার্ডিয়ান এঞ্জেল

জরথুস্ত্রবাদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি একটি পরকালবাদী ধর্ম বা Eschatological beliefs. জরথুস্ত্রবাদের মতে, এই পৃথিবী মাত্র বারো হাজার বছর স্থায়ী হবে। সমাপনী মুক্তির বার্তা নিয়ে নয় হাজার বছর পর জরথুস্ত্র আবার পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তারপর জন্ম হবে Messiah এর। পৃথিবী ধ্বংসের আগপর্যন্ত তার কাজ হবে মানুষকে পুণ্যের দিকে পরিচালনা করা। জরথুস্ত্রবাদ আরো বিশ্বাস করে আহরিমানের ওপর আহুর মাজদার জয়ের ফলে মৃত ব্যক্তিদের আবার পুনরুজ্জীবিত করা হবে এবং তাদের কৃতকর্ম অনুযায়ী বিচার করা হবে। সৎ ব্যক্তির জন্য স্বর্গ এবং অসৎ ব্যক্তির জন্য নরকের বিধান রাখা হয়েছে। তবে জরথুস্ত্রবাদ অনুসারে নরক চিরস্থায়ী নয়।

তৃতীয় বৈশিষ্ট্য অনুসারে জরথুস্ত্রবাদ একটি নৈতিক ধর্ম। মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছার মালিক, সে ইচ্ছামত পাপপুণ্য করতে পারে এবং এজন্য পরকালে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। জরথুস্ত্রবাদে পুণ্য কাজের একটি তালিকা করে দেয়া হয়েছে। দয়া, প্রতিশ্রুতি রক্ষা, শাসকের প্রতি আনুগত্য, অধ্যবসায় এসব কাজ করলে পুণ্য অর্জন করা সম্ভব। দেবতা আহুর মাজদার নির্দেশমতো যে সত্যবাদী হবে, একে অন্যকে সাহায্য করবে তারাই পরকালে শান্তিতে থাকতে পারবে। অপরদিকে যারা অহংকার, লোভ, অলসতা, ব্যভিচার ইত্যাদিতে লিপ্ত হবে তাদের জন্য নরক অনিবার্য।

8qRPG2P.jpg


হলি গার্ডিয়ান এঞ্জেলের অর্থ - Source: haip.site

জরথুস্ত্রবাদের চতুর্থ বৈশিষ্ট্য বলছে এটি একটি ঐশী ধর্ম। এ ধর্ম সন্ন্যাস জীবনকে নিরুৎসাহিত করেছে। তারা বিশ্বাস করে সরাসরি ঈশ্বর প্রদত্ত ধর্ম হচ্ছে জরথুস্ত্রবাদ। এ ধর্মমত অনুসারে জরথুস্ত্রের অনুসারীরা ঈশ্বর সম্পর্কে লুকানো জ্ঞান লাভ করতে পারত। প্রাচ্যের ইতিহাসে জরথুস্ত্রবাদই প্রথম ধর্ম যেখানে সরাসরি ঈশ্বরের সংশ্লিষ্টতার দাবি স্বীকার করা হয়েছে।

জরথুস্ত্র ধর্মগ্রন্থ

জরথুস্ত্রবাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের নাম জেন্দাবেস্তা। জেন্দ অর্থ ভাষ্য আর আবেস্তা অর্থ মূল গ্রন্থ। আবেস্থা মোট একুশটি গ্রন্থে বিভক্ত যা বারো হাজার খণ্ড চামড়ার উপর স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। আবেস্তা র রয়েছে আবার চারটি বিভাগ। তা হচ্ছে,

১. বেন্দিদাদ:

এই খণ্ডে প্রায়শ্চিত্ত বিধি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। এই খণ্ড জরথুস্ত্রের মৃত্যুর কয়েক শতক পরে রচিত হয়েছে।

২. বিসপেরেদ:

আহুর মাজদার স্তুতিগান গাওয়ার মন্ত্রগ্রন্থ।

৩.যাসঞ্জা:

এই গ্রন্থ পুরোহিতদের জন্য প্রার্থনার জন্য রচিত।

BVAHJEe.jpg


জরথুস্ত্র ধর্মগ্রন্থ ; Source: blogs.bl

৪. খোদান আবেস্ত:

দেবতা ও দেবশক্তির পূজার বিধানের জন্য রচিত।

জরথুস্ত্র প্রার্থনা

জরথুস্ত্রবাদে দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করার রীতি প্রচলিত আছে। সূর্যোদয় হতে দুপুরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পালনীয় প্রার্থনাকে বলে হাওয়ান। দুপুর থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত পালনীয় প্রার্থনাকে বলে রাপিথিউন। বেলা ৩ টা থেকে সূর্যাস্ত মধ্যবর্তী সময়ে পালনীয় প্রার্থনাকে বলে উজেরিন। সূর্যাস্ত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সময়ে পালনকৃত প্রার্থনাকে বলে আইউইশরুথ্রুম। শেষ প্রার্থনার নাম উশাহিন যেটি পালন করা হয় মধ্যরাত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যবর্তী সময়ে।

FiSJPqo.jpg


জরথুস্ত্রদের প্রার্থনা ; Source: diaryofamadinvalid.blogspot

মৃতদের নিয়ে জরথুস্ত্রবাদের ধারণা

জরথুস্ত্রবাদ বিশ্বাস করে মানুষের দেহ শক্তির হাতের পুতুল এবং মৃত্যুর পর মানুষের দেহের কোন দাম থাকেনা। এজন্য মৃতদেহ নিয়ে পারসিকরা এতটা মাথা ঘামাত না। মৃতদেহকে দূষিত এবং নীচ মনে করা হত, কেউ যদি মৃতদেহ স্পর্শ করত তবে তাকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পবিত্র করা হত।

Kuzi89t.jpg


জরথুস্ত্রবাদের আদিস্থান ইয়াজদ, Source: blog.persiaport

জরথুস্ত্রবাদের বাস

পৃথিবীতে জরথুস্ত্রবাদের অনুসারীগণ তেমন একটা নেই। আধুনিক ইরান এবং ভারতে কিছুসংখ্যক জরথুস্ত্রীয় ধর্মের লোক বাস করে। ভারতের মুম্বাইয়ে জরথুস্ত্রীয়দের সংখ্যাধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top