What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মসলিন: বাংলার হারিয়ে যাওয়া সোনালী ঐতিহ্যের নাম (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
1zFA3EU.jpg


মসলিন, বাংলাদেশের একটা ঐতিহ্যের বাহকের নাম। ঔপনিবেশিক বাংলার বুনন শিল্পের একটি অনবদ্য অংশ এই মসলিন কাপড় যা কয়েক শত বছর ধরে চলে আসছে দাপটের সাথে আজ অবধি এতটুকু কদর কমেনি।

চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশে আসেন বিশ্বখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা। দিল্লীর সুলতান মুহাম্মদ ইবনে তুঘলকের পক্ষ হতে ইয়েনের সম্রাটের কাছে উপহার স্বরূপ পাঠানো ৫ ধরণের কাপড়ের ১০০ পিচ কাপড়ের মধ্যে চার ধরণের কাপড় ছিলো মসলিনের তৈরী। এই বস্ত্রকে অতি মূল্যবান বলে অভিহিত করেন।

চীনা পর্যটক ইয়ান চং মসলিনের বর্ণনা দেন ঠিক এভাবে," কাপড়টি দেখতে ঠিক ভোরের সেই হালকা বাষ্পের মতোই মসৃণ। "

পঞ্চদশ শতাব্দীতে দেখা মিলে আরে খ্যাত চীনা পর্যটক মাহুয়ান। তিনিও সরাসরি সোনারগাঁয়ের মলমল ও অন্যান্য মসলিন তৈরীর সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন। এরপর বাইরের মানুষ আসলো আর গেলো এবং প্রশংসায় ভাসালো মসলিন কাপড়কে। ষোড়শ শতাব্দীতে ইংরেজ পর্যটক রলফ ফিচ, পর্তুগীজ পর্যটক ডুয়ার্টে বারবোসা এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে ডাচ পর্যটক স্ট্যাভোরিনাস বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরেফিরে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে মসলিন বানানোর কার্যাদি এবং তারা সবাই একই সাথে এমন সূক্ষ্ণ ও মিহি বুনন প্রক্রিয়ার ভূয়সী প্রশংসায় মগ্ন হোন।

k5X2sQN.jpg


সাম্প্রতিককালে প্রস্তুতকৃত মসলিনের একটি কাপড় - Source: bengalmuslin

পর্তুগীজ পর্যটক ডুয়ার্টে বারবোসার বর্ণনামতে ১৬ দশকের দিকেও বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু কাপড়ের নামের সন্ধান পাওয়া যায় যা তিনি নামাঙ্কিত করেছিলেন 'সারবান্দ', 'মামোনা', 'ফোগজা', 'চৌতারা' এবং 'সিনাবাকা' নামে।

বাংলার প্রাচীনকালের গর্ব করার মতো ঐতিহ্যের একমাত্র নিদর্শন হলো এই মসলিন। মূলত এই মসলিন তৈরী হতো ঢাকা শহরে এবং এটা তৈরীতে ব্যবহার করা হতো দেশীয় জনশক্তি, তুলা এবং এর জনপ্রিয়তা ছিলো সারা বিশ্বব্যাপী। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, জর্জ ওয়াশিংটনের পুরো পরিবার এবং নেপোলিয়নের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী জোসেফিনের গায়ের পরিধেয় বস্ত্রটি ছিলো আমাদের দেশের গর্ব মসলিন কাপড়ের তৈরী। ১৭ এবং ১৮ দশকে মসলিন কাপড়ের খ্যাতি দেশ পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য বাণিজ্য উন্নত দেশে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাস বহু প্রাচীন। বাংলাদেশের বুনন শিল্পের মালামাল মূলত রপ্তানী করা হতো রোমান এবং চীন সাম্রাজ্যে যা বিভিন্ন ইতিহাস এবং চীনের বিখ্যাত পর্যটকদের বর্ণনায় উঠে আসে। তবে মসলিন ব্যাপক পরিচিত লাভ করে ঢাকার অভ্যন্তরে মোঘল রাজধানী স্থাপনের পরে এবং এরই মধ্যে বিদেশী এবং তাসমেরিয়ান ক্রেতাদের নজর কাঁড়ে এই মসলিন কাপড়। পরবর্তীতে মোঘল সম্রাট এবং তাঁদের আভিজাত্যের স্বরূপ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সম্রাটদের জন্য প্রচুর পরিমাণে উন্নতমানের মসলিন কাপড় উৎপন্ন করা হতো।

সময়কাল ১৮৫১ সালে লন্ডনের এক প্রদর্শনীতে মসলিন কাপড়ের সম্মানজনক স্থান লাভ করে যার ফলে এই কাপড়ের প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা বৃদ্ধি পেলো অকল্পনীয়ভাবে। ব্রিটিশ বক্তাদের মুখে মসলিন কাপড়ের প্রশংসার ফুলঝুরি ছিলো চোখে পড়ার মতো।

HgYC7ph.jpg


আনুমানিক ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় রমণীর জন্যে মসলিনের তৈরী পোষাক - Source: Wikipedia

মসলিন কাপড়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কিছু অংশ দেখে নেয়া যাক।

মসলিন ছিলো তৎকালীন সময়ের ঐতিহ্যের ধারাবাহক। তখনকার মোঘল সাম্রাজ্যে এর প্রচলন ছিলো অবাক করার মতো। বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদ কুলি খান প্রায়সময় মোঘল সম্রাটদের মসলিন দ্বারা তৈরী এক বিশেষ পোশাক যাকে বলা হতো 'মালবাস খাস' এবং এই পোশাক নবাব বাদশাহ এবং আমিরেরা গ্রীষ্মকালীন সময়ে পরিধান করতো।

মসলিন শব্দটি পারসিয়ান, সংস্কৃত বা বাংলা কোনটাই নয় বরং এটা ইউরোপীয়ানদের সৃষ্টি। এর পুর্বের ইতিহাস দেখতে গেলে জানা যায়, সে সময়ে ইউরোপীয়নরা ইরাক (মসোল) এবং অন্যান্য পূর্ব দেশ হতে প্রচুর পরিমাণে তুলায় বোনা কাপড় আমদানী করতো এবং পরবর্তীতে যখন তারা ঢাকায় উৎকৃষ্ট মানের কাপড়ের সন্ধান পেলো তখন সেটাকে তারা নাম দিলো ঢাকা ফেব্রিকস নামে এবং ধারণা করা হয় এ থেকেই মসলিন নামের উৎপত্তি। তবে এ ব্যাপারে কিছুটা সন্দেহ আছে কারণ ইউরোপীয়ানরা যেসব বস্ত্রাদি ভারতের গুজরাট, গোলকান্দ হতে আমদানী করতো ওইগুলোকেও মসলিন কাপড় নামেই অভিহিত করা হতো। তবে মার্কো পোলোর "দ্যা ট্রাভেলস" বইয়ে উল্লেখিত মসলিনের বর্ণনায় বুঝা যায় এই কাপড়ের উৎপত্তি ছিলো ইরাকেই (মসোল) এবং আরো সুস্পষ্টভাবে জানা যায় ফ্যাশন গবেষক সুসান গ্রিনই থেকে যে, ১৮ দশকের দিকে মসলিন শব্দটি পরিচিত হয় মোওসে (Mousse) যার উৎপত্তি ফ্রেঞ্চ। মোঘল সাম্রাজ্য চলাকালীন সময়ে মসলিনের প্রচল ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার পিছে কারণ ছিলো সম্রাজ্ঞী নুরজাহান কর্তৃক মসলিনকে মোঘলে হারেমের জন্য নির্বাচিত করায়।

সময়কাল ১৮৭৫ সাল। ওয়েলসের রাজপুত্র এডওয়ার্ড VI বঙ্গদেশ পরিদর্শনে আসেন। তৎকালীন নবাব স্যার আবদুল গণি ত্রিশ গজ মসলিন কাপড় উপহার হিসেবে দেন রাজপুত্রকে। জেনে রাখার স্বার্থে বলা যায়, প্রতি গজ মসলিনের ওজন ছিলো শুধুমাত্র ১০ গ্রাম প্রায়। ধারণা করা হতো, ৫০ মিটা দৈর্ঘ্যের মসলিন কাপড়কে একটি দিয়াশলাই কাঠির বাক্সে ধারণ করা যেতো।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top