(আলিয়ঁস ফঁসেজ, গ্যোয়েটে ইন্সটিটিউট, ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র)
কাঁটাতারের সীমানা কিংবা ভৌগলিক দূরত্বকে ছাপিয়ে শিল্প সাহিত্য এবং সংস্কৃতি সর্বদা প্রবাহমান। আর তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন সংগঠন তাদের নিজস্ব শিল্প সাহিত্য এবং সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছে এদেশে। প্রতিটি সংগঠনই এদের নিজেদের জায়গায় অনন্য। প্রত্যেকের রয়েছে সুনির্দিষ্ট কার্যাবলী যা তাদের সংস্কৃতি প্রচারের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে,আলিয়ঁস ফঁসেজ, গ্যোয়েটে ইন্সটিটিউট,ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র, ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আমেরিকান সেন্টার, এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড দ্বারা দেশ এবং আন্তজার্তিক অঙ্গনে ব্যাপক সমাদৃত। এ পর্বে আমরা জানবো, আলিয়ঁস ফঁসেজ, গ্যোয়েটে ইন্সটিটিউট, এবং ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সম্পর্কে।
আলিয়ঁস ফঁসেজ (Alliance Française de Dhaka):
ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত আলিয়ঁস ফঁসেজ একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ফ্রান্স দূতাবাসের সাথে মৈত্রী স্থাপনের মধ্য দিয়ে এটি ১৯৫৯ সাল থেকে বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে কাজ করে আসছে। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি তার প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত করলো। এর প্রধান শাখা ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত হলেও গুলশান এবং উত্তরাতেও দুটি শাখা আছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে এর আরেকটি শাখা বিদ্যমান। নানাবিধ সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আলিয়ঁস ফঁসেজ মূলত ফরাসি সংস্কৃতি এবং ভাষা বিকাশে সহযোগিতা করে থাকে। ফরাসি সংস্কৃতির প্রতি উত্সাহী ব্যক্তিত্বরা এ প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কমিটি হিসেবে কাজ করে। ফরাসি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি সাধারণত চারটি কোর্সের সুবিধা দিয়ে থাকে। প্রতিটি কোর্সের সময় সীমা চার মাস। নির্দিষ্ট পরিমান কোর্স ফি এর বিনিময়ে শিশু,তরুণ এবং বৃদ্ধ এই তিন শ্রেণীতে কোর্স দেয়া হয়। এছাড়া বছর ব্যাপী না না কর্মশালার আয়োজন করা হয় এখানে। এসব কর্মশালার মধ্যে রয়েছে শিল্প,আভ্যন্তরিন নকশা,নৃত্য,সংগীতযন্ত্র,ফ্যাশন ডিজাইনিং,ভিডিও,চলচিত্র,এবং স্থিরচিত্র।
আলিয়ঁস ফঁসেজ - Source: en.wikipedia.org
এছাড়া সাংস্কৃতি সন্ধ্যা,স্থিরচিত্র প্রদর্শনী এবং প্রতি সপ্তাহে ফরাসি ভাষার চলচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় যা সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে রয়েছে ৬৫ আসন বিশিষ্ট একটি নিজস্ব মিলনায়তন। এছাড়া আছে ক্যাফেলা ভ্যারেনদা নামে একটি ক্যাফে। এটি বাংলাদেশের তরুণ শিল্পীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের জন্য জুম গ্যালারি দেয়া হয়ে থাকে। ফরাসি ভাষা ছাড়াও এখানে গান,নৃত্য এবং গীটার শেখার বিশেষ সুবিধা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে Le fleuve বা নদী নামে একটি ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। এখানে ফুড কোর্টের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া প্রায় সাত হাজার বই সম্বলিত একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার রয়েছে এখানে। এটি গান, সিনেমা, চিত্রকলা,এবং স্থিরচিত্রের এক অনন্য সংগ্রহশালা। রয়েছে ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সুবিধা। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির বই যেমন ডিজাইন, আধুনিক দর্শন, ধর্ম, বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাস, ফ্রান্সের ইতিহাস, চিত্রকলা, জাদুঘর, থিয়েটার, আত্মজীবনি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, প্যারিসের ভূগোল, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ব্যান্ড ডিজাইন সহ শিল্পকলা সহায়ক অন্যান্য বই। পাঠাগারটি সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও কেবল সদস্যরা এখানে থেকে বই ধার নেয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। বছরব্যাপী এটি বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সদ্যপ্রাক্তন পরিচালক অলিভিয়া লিভবিন এর নিজস্ব উদ্যোগে "ওরাল হিস্ট্রি কালেকশন" নামে একটি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মানুষকে ইতিহাস জানানোর অভিপ্রায়েই এ ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির অনুষ্ঠান কর্মকর্তা মামুন হাসান। বর্তমানে পরিচালক পদটি ফাঁকা তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নতুন ডিরেক্টর হিসেবে ব্রুনো প্লেসির যোগ দেবার কথা জানান তিনি। এছাড়া বর্তমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগ, ফ্রান্স দূতাবাস এবং কানাডা দূতাবাসের সাথে যৌথ উদ্যোগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ওপর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হবে। যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। রোববার সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে এটি প্রতি সোমবার থেকে বৃহঃস্পতিবার বেলা ২ টা থেকে ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯.০০ টা থেকে দুপুর ১২.০০ টা এবং বিকেল ৫.০০ টা থেকে ৮.০০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।