What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কুশান গানের অতীত-বর্তমান (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
ADVyNx7.jpg


বাংলাদেশে মানুষের সাংস্কৃতিক ভিত্তি নির্মাণে যে সকল উপাদানের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদেশের মানুষের যাপিতজীবনের সঙ্গে নাট্যরীতি প্রমাহমান। বাংলাদেশের মানুষ কখনো সাংস্কৃতিক এই উপাদানটির প্রভাবকে এড়িয়ে যেতে পারেনি। এর প্রাণবন্ত প্রবাহ সেই প্রাচীনকাল থেকে অদ্যবধি স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে চলমান। বিবর্তনের অশেষ স্রোত তাকে দিয়েছে অকৃত্রিম এক গতিবেগ, যে গতির উপর ভর করে হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীর স্রোতধারার মতো এদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারা সময়ের মহাসমুদ্রের দিকে নিরন্তর এগিয়ে চলেছে। আর এই গতিময় নাট্যধারার সম্মুখগামী শত সহস্র পদযাত্রা নদীর জীবন্ত স্রোতধারার মতো বৈচিত্রময় এবং তা নিত্যই নানান ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে পরিবর্তনশীল। সে পরিবর্তন সহজে চোখে পড়ে না। কিন্তু কালের মোচড়ে কখনো কখনো পরিবর্তনটা খুবই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর তখনই একটি নাট্যধারার ঘটে পালাবদল। এই পরিবর্তনের সূত্র মেনে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগের ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারা বরাবর নতুন নতুন রূপ গ্রহণ করেছে। তবে, বিস্ময়ের ব্যপার এই যে, কোনো কালেই এদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারা অনুশীলনের কোনো বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা ছিল না এবং এখনও নেই। কীভাবে এটা রচনা করতে হয়, কীভাবে এটা স্মৃতিপথে রক্ষা করতে হয়, কিংবা কীভাবে এর সুর, তাল, নৃত্য, অভিনয় শিক্ষা লাভ করতে হয় তার সুনির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি আজও নেই এবং আমরা তা অন্বেষণও করিনি। যাঁরা এ নাট্যধারা আয়ত্ত করেন, তাঁরা সাধারণত স্বভাবদত্ত ক্ষমতার গুণে কেবল চোখে দেখে, কানে শুনে এবং নাট্যশিল্পীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে আপনা হতেই তা আয়ত্ত করে থাকেন। আর এভাবেই এ ভূ-খণ্ডে সহস্র বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী নাট্যচর্চার ধারা প্রচলিত রয়েছে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য কোনোদিন কোনো বর্হিমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন পড়েনি।

বাংলাদেশে ধ্রুপদী মহাকাব্য রামায়ণের আখ্যান পরিবেশনা অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বৈচিত্রপূর্ণ। রামায়ণের কেন্দ্রীয় চরিত্র রাম মূলত আর্য পৌরাণিক দেবতা। তবে এই আর্য পৌরাণিক রামচন্দ্রের সঙ্গে সাধারণত রামায়ণের আখ্যান পরিবেশনায় জনসমাজে প্রচলিত রামচন্দ্রের লোককথাকে যোগ করা থাকে। রামায়ণের আখ্যান পরিবেশনায় রামচন্দ্র মুখ্য চরিত্র হলেও একই সঙ্গে রামের ভাই লক্ষণ, স্ত্রী সীতা, পুত্র লব-কুশ, রাবণ ও রাবণ মেঘনাদ, বিভীষণ ও বিভীষণ পুত্র তরণীসেন এমনকি বাল্মীকি, হুনুমান ইত্যাদি চরিত্র সমধিক গুরুত্বের সাথে আসরে উপস্থাপন করা হয়। এদেশে রামায়ণ ও তার চরিত্রসমূহের মাহাত্ম্য প্রকাশক আখ্যান কুশান গান, রামলীলা, রামায়ন কীর্তন, রামমঙ্গল, ইত্যাদি বিচিত্র পরিবেশনারীতি নিয়মিতভাবে অভিনীত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারায় রামায়ণের আখ্যান নির্ভর পরিবেশনারীতির মধ্যে কুশানগান উল্লেখযোগ্য। এধরনের পরিবেশনারীতি মূলত উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট অঞ্চলের রাজবংশীদের মধ্যে অধিক প্রচলিত।

k74a5P2.jpg


কুশ থেকে কুশান শব্দের উৎপত্তি। লব ও কুশের ভূমিকায় দু'জন বালক মুলত গান করেন। উত্তরবঙ্গের উপভাষায় 'কুশ' নামটি কুশান হিসেবে উচ্চারিত। কুশের গান থেকেই কুশান গানের নামকরণ হয়েছে। আবার কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের ধারণা, 'সংস্কৃত কুশলীব শব্দ থেকে কুশান শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে।' এক্ষেত্রে গবেষক জানান, 'কুশলীবই বাল্মীকির রামায়ণের প্রথম প্রচারক।' তবে, বাংলাদেশের বিখ্যাত কুশান শিল্পী কৃপাসিন্ধু রায় জানান, 'কু কথাকে রামায়ণের এ ধরনের গানে শান বা ধার দিয়ে মানুষের মঙ্গল কথা প্রকাশ করা হয় বলে এই গানকে কুশান বলে।' রামায়ণের কাহিনী ছাড়া কুশান গান হতে পারে না। কুশান গানকে কেউ কেউ 'ব্যাণা কুশান'ও বলেন। বেণা (ব্যাণা) সহযোগে কুশান গান গীত হয় বলে এর নাম 'ব্যাণা কুশান' হয়েছে। বেণা বা ব্যাণা 'বীণা' থেকে উদ্ভূত।

রামায়ণের কাহিনী হতে জানা যায় যে, নির্বাসিতা সীতার গর্ভে, বাল্মীকির আশ্রমে লব ও কুশ জন্মগ্রহণ করেন। বাল্মীকির শিক্ষায় লব ও কুশ রামায়ণ আয়ত্ত করেন। পরে মহর্ষির অনুমোদনক্রমে দুই ভাই রামচন্দ্রের সভায় এসে বীণা সহযোগে রামায়ণ গান পরিবেশন করেন। রামায়ণ গান প্রচলনের ধারাবাকিতা অনুসরণ করেই কুশান গানের সৃষ্টি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। কুশান গানের সঙ্গে শ্রীরামচন্দ্রের সভায় গীত রামায়ণ গানের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। রামায়ণ গানই উত্তর বাংলার কুশান গান।

দশ থেকে পনেরো-বিশজন লোক নিয়ে কুশান গানের দল তৈরি হয়। এর মধ্যে একজন মূল গায়েন। দু-জন পাছ (পার্শ) দোহার। একজন লব। একজন কুশ। বাকীরা প্রয়োজনে অন্যান্য ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেন। ভূমিকা যখন থাকেনা, তখন বাদ্যযন্ত্র বাজান। কুশান দলের সকলেই আসরে দণ্ডায়মান হয়ে আসর রচনা করেন। মূল গায়েনের হাতে থাকে বেণা। তাছাড়া থাকে চামর। তিনি আসরের সম্মুখভাগের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দল পরিচালনা করেন। তাঁকে দলের সূত্রধরও বলা যেতে পারে। তাঁর দু-পাশে দু-জন পাছ-দোহার তাঁকে সাহায্য করেন। দলের অন্যান্য সদস্যরা গুণানুযায়ী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে আসরে অংশ নেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন চরিত্রে অংশগ্রহণও করেন। লব ও কুশের ভূমিকায় দু-জন সুদর্শন বালক অংশগ্রহণ নেন। উত্তম বেশে সজ্জিত বালকদ্বয় আসরের মধ্যস্থলে দাঁড়িয়ে থাকেন। এঁরা সাধারণত সুগায়ক হর। দলের সুনাম, বদনাম, দুর্নাম সবকিছু এঁদের গানের উপর নির্ভর করে। সাধারণত বেণা বাজাতে এঁরা পারদর্শী। বেণায় পারঙ্গম হতে না পারলেও এদের হাতে বেণা থাকবেই। সুগায়ক বালকদ্বয় প্রায় সব গানগুলিই পরিবেশন করেন। তাছাড়া মূল গায়েনকে আরও অনেক কাজ করতে হয়। যতক্ষণ অনুষ্ঠান চলতে থাকে তার সারাক্ষণই মূল গায়েন বেণা যন্ত্রটি বাজিয়ে যান, তবে মধ্যে মধ্যে প্রয়োজনবোধে তিনি বেণা যন্ত্রটি নামিয়ে রেখে কোনো ধরনের পোশাক পরিবর্তন ছাড়াই নাট্য কাহিনীর একটি চরিত্র রূপদান করেন। মূলগায়েনের বর্ণনাত্মক অভিনয় অংশ যখন শেষ হয় তখন আবার তিনি মূলগায়ক বা গীদালের ভূমিকায় ফিরে এসে বেণা যন্ত্রটি কাঁধে করে বাজাতে থাকেন। এভাবে কুশান গানের মূল গায়ক কখনো বাদ্যকার, কখনো অভিনেতা রূপে আসরে অংশ নেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন চরিত্রের অভিনয় সংযোজক অংশের সংলাপ, গান, বর্ণনাত্বক সংলাপ কথা ও গানের মাধ্যমে মূল গায়েনকে পরিবেশন করতে হয়।

7kNKLP5.jpg


বেণা যন্ত্রটি কুশান গানের মূল বাদ্যযন্ত্র। কাঠের বাটি ও বাঁশের দণ্ডযুক্ত একতারবিশিষ্ট যন্ত্র বেণা। তারের উপর ঘোড়ার লেজের চুল দিয়ে টেনে টেনে বেহালার মত বাজানো হয়। বেণা লম্বায় প্রায় দেড় ফুট। বাটিটির ব্যাস ছয় ইঞ্চি। কখনো কখনো কাঠের বাটির পরিবর্তে বাঁশের গুঁড়ি দিয়ে বাটিটি নির্মিত হয়। বেণা থেকে যে সুর বের হয়, তা সুমধুর। বেণা ছাড়া সাঁনাই, ঢোল, হারমোনিয়াম, খোল, বাঁশি, দোতারা, বেহালা ও করতাল ব্যবহৃত হয়।

বিভিন্ন পূজা-পার্বণ, মেলা, লোকউৎসব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিল্পীদের দ্বারা কুশান গান বেশি পরিবেশিত হত। সাধারণত বাড়ির উঠান, মন্দির প্রাঙ্গণ বা কোনো খোলাস্থানে উৎসব উপলক্ষে কুশান গানের আয়োজন করা হত। এ গানের আসর সাধারণত সন্ধ্যার পর, একটু রাত হলে শুরু হত আর চলত ভোর পর্যন্ত। সমতল ভূমিতে বর্গাকার স্থানে আসর তৈরি করা হত। অভিনয় স্থানে গায়েন, দোহার, বাদ্যকার বসার জন্য পাটি বা চট বিছিয়ে দেয়া হত। মূলত অভিনয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য বাদ্যকার, গায়েন, দোহার, ছোকরা অভিনয় স্থানে বৃত্তাকারে বসে এবং সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চারিদিকে ঘুরে অভিনয়ে অংশ নেন। দর্শক-শ্রোতাগণ মঞ্চের চারিদিকে বসে সারারাত আসর উপভোগ করতেন। কুশান গানের দলে যে সকল কুশলীব অভিনয় করেন তাঁদের একেকটা করে নাম রাখা হয়। যে সকল কিশোর-যুবা শাড়ি পরে মেয়ে সেজে আসরে নেচে গেয়ে অভিনয় করেন তাঁদের বলা হয় ছোকরা। এছাড়া কুশান গানের দলে ভাঁড় ধরনের একজন কুশলীব হাস্যরসের তুফান তুলে অভিনয় করেন। অভিনয়কালে তার চলাফেরা কথাবার্তা এমনকি তাকে দেখলেই দর্শকরা হাঁসিতে ফেটে পড়েন। এই শ্রেণির অভিনেতার নাম দোয়াড়ি। দোয়াড়ি যে চরিত্রে অভিনয় করেন মূল গায়েন তার বিপরীত চরিত্রটি ধারণ করেন। রামায়ণের কাহিনী অবলম্বনে কুশান গানের পরিবেশনায় মূলগায়েন সাধারণত সাদাধুতি ও পাঞ্জাবি পরে একটা উত্তরীয় কাঁধে অভিনয় করেন। সীতা চরিত্র রূপদানকারী অভিনেত্রী ও ছোকরাগণ উজ্জ্বল শাড়ি, ব্লাউজ পরে অভিনয় করেন। লব ও কুশলীব চরিত্র সাদাধুতি ও হাফহাতা গেঞ্জি পরে অভিনয় করেন।

আসর বন্দনা দিয়ে গান শুরু হয়। আসর বন্দনার পর রাম বন্দনা। রামকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। রামের কাছে অভয় প্রার্থনা করা হয়। বন্দনা শুরু করা হয় এইভাবে:

এইস ওগো প্রভু এইস আমার থানে।

অধমক্ তরাইতে প্রভু আইসেন ত গেলে।।

আমার আসর ছেইরে গো রাম অন্যের আসরে যাবো।

দোহাই নাগে বিশ্বামিত্রের কৌশলার মু- খাবো।।- ইত্যাদি।

বন্দনার পরের অংশের নাম 'ভুলালি'। দেশ, বিভিন্ন দেবদেবী, গুরু ও আসরে সমবেত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করা হয়। আসর বন্দনা, দেব বন্দনা, রাম বন্দনা ইত্যাদির পর মূল গায়েন সেদিন কোন পালা গাইবেন তা জানিয়ে দেন। রামায়ণের বিশেষ ঘটনা অবলম্বন করে পালা রচনা করা হয়। রাজবংশীদের আঞ্চলিক উপভাষায়। এই পালা সাধারণত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গাওয়া হয়। এর ভাষা লৌকিক।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top