What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নির্বাসনের পর (1 Viewer)

Black Knight

Not Writer or Creator, Only Collector
Staff member
Supporter
Joined
Mar 6, 2018
Threads
265
Messages
25,763
Credits
560,184
Birthday Cake
Billed Cap
Rocket
Pizza
Mosque
Pizza
নির্বাসনের পর
লেখক - শ্রী অনঙ্গদেব রসতীর্থ


গত দু'দিন ধরেই শব্দটা পাচ্ছিলাম। বেশ জোরে। যেন আমাকে ইনটেশনালি জানান দিতেই, নিস্তব্ধ রাত্রিটা এমন আদিম-সরগমে মুখর হয়ে উঠছে!... আজ আর কৌতুহল দমন করতে পারলাম না কিছুতেই। ঘাপটি মেরে নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে পা টিপে-টিপে এগিয়ে গেলাম দোতলার সিঁড়ির দিকে।…
আমার নাম… থাক, ওসব ছোটোখাটো কথা পরে হবে। হঠাৎ করে শুরু করবার আগে, নিজের সম্পর্কে দু-একটা সামান্য কথা বলে নিই। আমি একজন বছর-ঊনত্রিশের সুস্থ-সবল, বাঙালী, ভদ্রঘরের যুবক। এম-এ পাশ দিয়ে জলপাইগুড়ির তরাই-ঘেঁষা মফস্বলের একটি অখ্যাত হায়ার-সেকেন্ডারি স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষকতা করি। ছেলেবেলাতেই বাবা মারা গিয়েছেন, চাকরিতে ঢোকার আগে মাও চলে গেলেন। তাই বসতবাটির অংশ কাকাদের লিখে দিয়ে, আমি এখন মুক্ত-বিহঙ্গ। কিন্তু আমার এই স্বাধীনতা, একাকীত্ব, বৈরাগ্যর পিছনেও একটা ছোট্টো ইতিহাস আছে। না-হলে তো অ্যাদ্দিনে বিয়ে-থা করে, শহরের দিকের কোনো স্কুলে ট্রান্সফার নিয়ে, আর পাঁচজন সাধারণ ছেলের মতোই সংসার পাততুম। কিন্তু আমার জীবনটা সেই বাইশবছর বয়সেই তছনছ করে দিয়ে গেছে আমার 'সোনাদি'। সেই ভাঙাচোরা মনের টুকরোগুলো আজও ঠিকমতো জোরা লাগাতে পারিনি আমি।…
আমাদের মফস্বল-কলেজে অনার্সে ভালো রেজাল্ট করায়, শহরের কলেজে এম-এ-তে আমি ডাইরেক্ট অ্যাডমিশন পাই। কিন্তু আমাদের বনগাঁ থেকে প্রতিদিন কলকাতায় যাতায়াত করে লেখাপড়া করাটা বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল। মেস বা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালাব, এমন রেস্ত-র জোরও আমাদের মা-ছেলের অভাবের সংসারে ছিল না। আমি এইচ-এস-এর পর থেকেই চুটিয়ে টিউশানি করতাম; বাবার জমিয়ে যাওয়া সামান্য ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স, আর আমার ওই ছেলে-পড়ানো টিউশানির ক'টা টাকা, ওতেই আমাদের মা-ছেলেকে রীতিমতো কষ্ট করে জীবনধারণ করতে হতো। কারণ কাকারা ষড়যন্ত্র আর ঝগড়া করা ছাড়া, অন্য ব্যাপারে আমাদের কোনো সাহায্যই করত না। তখন উপায়ন্ত না পেয়ে মা-র এক দূর-সম্পর্কের বোন, রাঙামাসির বাড়িতে আশ্রয় নিতে হল এম-এ পড়বার সময়। ওদের বাড়িটা ছিল মানিকতলায়, ওখান থেকে কলেজস্ট্রিটে প্রায়সই পয়সা বাঁচাতে হেঁটেই যাতায়াত করতাম আমি। শনিবারে-শনিবারে বাড়ি গিয়ে মা-র সঙ্গে দেখা করে আসতাম।…
মেসো মানুষটা ছিলেন রাশভারী ও একটু কিপটে টাইপের। উটকো ঝামেলা বলে, আমাকে প্রথমে বাড়িতে স্থান দিতে চাননি। পরে মাসির ক্রমাগত অনুরোধ-উপরোধে একরকম বাঁ-হাতে মনসা পুজোর মতো, আমাকে বাড়িতে থাকতে দেন। আমি মেসোদের প্রাচীন পৈত্রিক-বাড়িটার একতলার পিছনদিকে একটা সরু ঘরে থাকতাম। স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটার পিছন-দিকটাতেই পায়খানার চেম্বার আর একটা দুর্গন্ধময় কাঁচা-ড্রেন ছিল। মাঝেমধ্যেই ওই ড্রেনের পাইপ গলে রাত-বিরেতে ধেড়ে-ইঁদুর আমার ঘরে ঢুকে আসত। এসব নিয়ে আমি অবশ্য কখনও কিছু কমপ্লেইন করিনি। এমনিতেই গলগ্রহ হয়ে থাকতাম, তার উপরে আবার থাকা-খাওয়া নিয়ে অভিযোগ করলে, মেসো নির্ঘাৎ বাড়ি থেকে ঘাড়-ধাক্কা দিত!...
মাসির মেয়ের নাম ছিল সায়ন্তী। আমার চেয়ে দু-বছরের বড়ো। ও-ও হিস্ট্রি নিয়ে পাশ করেছে বলে শুনেছিলাম। বাড়িতে সবাই ওকে সোনা/সোনাই বলে ডাকতো। আমি মুখে কখনও কিছু বলিনি, কিন্তু মনে-মনে ডাকতাম, 'আমার সোনাদি' বলে!... সত্যি, চব্বিশবছর বয়সী ওই মেয়েটাকে দেখবার পর থেকেই, আমার বাইশবছর বয়সী মনের মধ্যে যেন এক-সমুদ্র উথালপাথাল শুরু হল। রাজহাঁসের মতো গ্রীবা, গায়ের রঙটাও ঠিক যেন কাঁচা-সোনার মতো। টিকোলো নাক, টানা-টানা চোখ, উড়ন্ত-পাখির মতো ভুরু, পুরুষ্টু লাল ঠোঁট, ঠোঁটের নীচে ছোট্টো কলো তিল, পানপাতার মতো থুতনি, কোমড় পর্যন্ত লম্বা, ঘন-কালো কোঁকড়ানো চুল। যেন নিখুঁত কোনো রূপকথার দেশ থেকে মানুষের সংসারে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে কোনো মোমের-পুতুল! সোনাদি যখন বাইরে থেকে এসে, একতলার সদর-দরজা খুলে দোতলার সিঁড়ি ভাঙতো, তখন একঝলক ওর কামিনীতরুর মতো দেহটার এঁকেবেঁকে উঠে যাওয়া দেখে, আমার শরীরের সব লোম কেমন-যেন নিজের অজান্তেই খাড়া হয়ে যেত।
সোনাদি আমাকে বিশেষ পাত্তা দিত না। আমার মতো একটা তুচ্ছ জীবও যে বাড়িতে থাকে, এটা যেন ওর নজরেও পড়ত না। আমিও কখনও সোনাদির সঙ্গে যেচে, সাহস করে কথা বলতে পারিনি। ওর নীল চোখের মণির দিকে সোজাসুজি তাকানোরই সাহস ছিল না আমার; মনে হতো, ওই চোখের দিকে তাকালে, আমি বুঝি কোনো অতলে ডুবে যাব! আর কখনও উঠতে পারব না, জাগতে পারব না, চিরকালের জন্য রূপকথার রাজ্যে বন্দি হয়ে যাব!...
কিন্তু একদিন গ্রীষ্মের খাঁখাঁ দুপুরে একটা অযাচিত কাণ্ড ঘটে গেল। সেটা ছিল কোনো উইক-ডেজের দুপুর। সামনে পরীক্ষা বলে আমি কলেজে না গিয়ে, ঘরে বসেই পড়ছিলাম। মেসো অফিসে চলে গিয়েছিল, মাসিও কাজের-লোককে আমার দুপুরের খাবার দিতে বলে দিয়ে, কোথাও একটা বেড়িয়েছিল; যাওয়ার আগে আমাকে বলে গিয়েছিল, ফিরতে সন্ধে হবে। আমার ধারণা ছিল, সোনাদিও মাসির সঙ্গে গিয়েছে। কারণ আমি ওকে সকালেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখেছিলাম। শুনেছিলাম, ও এখন এম-ফিল্ করছে, এরপর পিএইচডিও করবে।… হঠাৎ বেলা সাড়ে-বারোটা নাগাদ সোনাদি কোথ্থেকে ফিরে এলো। এই প্রথম সরাসরি আমার ঘরের দরজায় এসে, বিনা ভনিতায় হুকুম করল: "মিনিট-পাঁচেক বাদে একটু উপরে আসিস তো, দরকার আছে।…" কথাটা বলেই আর দাঁড়ালো না; টগবগ করে দোতলায় উঠে গেল। আমিও কিছুক্ষণ পর দুরুদুরু বক্ষে উপরে গেলাম। দেখলাম, সোনাদি ততক্ষণে চেঞ্জ করে একটা ক্রিম-রঙা ঢোলা, গোল-গলা গেঞ্জি আর হট্-প্যান্ট পড়েছে। নির্লোম, থাই বের করা ওর ফর্সা পা-দুটো, আর হট্-প্যান্টের মধ্যে থেকে ওর ফেটে পড়তে চাওয়া হিপস্-দুটো দেখে ততক্ষণে আমার হার্ট-বিট্ তিনগুণ রেটে বেড়ে গেছে। কিন্তু আমার অবস্থার প্রতি বিন্দুমাত্র দৃকপাত না করে সোনাদি ক্যাজুয়াল গলায় বলল: "শুনেছি তুইও ইতিহাস নিয়ে পড়ছিস। ভালো স্টুডেন্ট। গুড্!... আমিও এম-ফিল্ শেষ করে এবার পিএইচডি করব, সেটা জানিস বোধহয়। আসলে আমার পিএইচডি-র থিসিস্-ম্যাটারটা একটু চ্যালেঞ্জিং। এটাকে সাকসেসফুল করতে আমার তোর হেল্প দরকার। আমাকে সাহায্য করবি? প্লিজ…" কথাটা বলেই সোনাদি আমার হাতের উপর ওর নরম আঙুলগুলো ছোঁয়ালো। আর সঙ্গে-সঙ্গে আমার শরীরে যেন ইলেকট্রিক-শক্ লাগল। আমি কোনোমতে খাবি খেয়ে জিজ্ঞেস করলাম: "থিসিস-এর ম্যাটার-টা কী?" সোনাদি চোখে-মুখে একটা দুষ্টুমি মাখানো হাসি দিয়ে বলল: "প্রি-এরিয়ান টু গুপ্তা-ডাইনেস্টি পর্যন্ত ভারতীয় কালচারে যৌনতার চর্চা!…" তারপর মুখটা গম্ভীর করে নিয়ে বলল: "কিন্তু বাবা যা কনজারভেটিভ মাইন্ডের, তাতে বাড়িতে তোর-আমার একসঙ্গে কাজ করা অসম্ভব। আমাদের বেশীরভাগ সময়ই বাইরে কোথাও মিট্ করে নিতে হবে। তবে আজকের মতো দিনে, এইরকম বাবা-মা না থাকলে, আমরা বাড়িতেও নিরিবিলিতে বসতে পারি।…" সোনাদির কথার শেষটায় কী যেন একটা সূক্ষ্ম ইঙ্গিত ছিল, যেটা আমার হৃৎপিণ্ডের গতি মুহর্তের মধ্যে যেন আরও বাড়িয়ে দিল! আমি বললাম: "আমাকে কী করতে হবে?" সোনাদি তার শহুরে স্ক্যানার-চোখদুটো দিয়ে আমার হাবাগোবা, গ্রাম্য সরল মুখটাকে বেশ কয়েক-সেকেন্ড জরিপ করে নিয়ে বলল: "আগে তোকে জানতে হবে, সেক্স ব্যাপারটা আসলে কী!.." কথাটা বলেই সোনাদি এক ঝটকায় মাথা গলিয়ে গায়ের রাউন্ড-নেক্ টি-শার্টটা খুলে ফেলল। তারপর বেশ কয়েকমাস কেটে গেল সুখের সাগরে ভাসতে-ভাসতে। আমার বাইশ-বছরের দীনহীন জীবনটা এক-লহমায় খোলিফা হয়ে উঠল যেন! সেক্সের ইতিহাস-বর্তমান, প্রত্নতত্ত্ব-শরীরতত্ত্ব সব এমন নিখুঁত ভাবে শিখে ফেললাম মাত্র কয়েকদিনে, এখন ভাবলে যেন মনে হয়, সবটাই কোনো রূপকথার গল্প ছিল। সেদিনের পর থেকে আমি আর সোনাদি বাইরেই মিট্ করতাম। দমদমের কাছে সোনাদির এক বান্ধবীর ফাঁকা স্পেয়ার ফ্ল্যাটে চলত আমাদের যৌথ যৌন-গবেষণা! ফ্ল্যাটের দরজা লক্ করেই প্রথমে আমরা দু'জন সুতোহীন করে নিতাম নিজেদের। তারপর শরীরকে শরীর দিয়ে খুঁড়ে-খুঁড়ে তুলে আনতাম, প্রচীন আর্য-সভ্যতার যত যৌন-অসভ্যতার কলা, রীতি, প্রকার, আচারের ইতিহাস।…
এই হঠাৎ ঠুকে যাওয়া চকমকি পাথরর মতো, শরীরের দহন-জ্বালায় দাউদাউ করে জ্বলতে-জ্বলতে, আমি আর সোনাদি কখন যে পরস্পরের মনের জানলা গলে চোরের মতো ঢুকে পড়েছিলাম, দু'জনেই বুঝতে পারিনি। কিন্তু যেদিন মেসো রীতিমতো পুলিশ নিয়ে এসে, ফাঁকা ফ্ল্যাটে আমাদের প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় ধরে ফেলল, সেদিন প্রথম বুঝলাম, চোটটা কোথায় গিয়ে লাগল!... মেসো এফআইআর-এ আমার নামে এক-তরফা, উইথ্-ফোর্স রেপ্-কেসের চার্জই দিয়েছিল উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করে। ফলে বিচারে আমার ভবিষ্যৎ কেরিয়ার দুমড়ে-মুচড়ে কমপক্ষে বারো-বছরের জেলই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমার মায়ের মেসোর হাতে-পায়ে ধরে ক্রমাগত কান্নায়, সোনাদির দিনের-পর-দিন না খেয়ে-খেয়ে সুইসাইড করবার হুমকিতে, এবং সর্বপোরি নিজের একমাত্র অবিবাহিতা মেয়ের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারীর খবর পাঁচ-কানে চাউর হয়ে যাওয়ার ভয়ে, মেসো তরিঘড়ি কেস্-টা উইথ-ড্রো করে নেয়।
এর একমাসের মধ্যেই একজন বছর-আটত্রিশের বুড়ো-ভামের সঙ্গে সাত-তাড়াতাড়ি সোনাদির বিয়ে দিয়ে কুয়েত না দুবাই কোথায় যেন মেয়েকে চিরতরে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয় মেসো। সোনাদির সঙ্গে তারপর থেকে আর কখনও দেখা হয়নি আমার। মোবাইল, ফেস-বুক, হোয়াটস্-অ্যাপ-এর যুগে দাঁড়িয়েও, এই ছ-সাত-বছরে ওর একটা ছবিও কোথাও খুঁজে পাইনি আমি। আমার সোনাদি যেন রূপকথার মধ্যেই হারিয়ে গেল শেষ-পর্যন্ত।…

নিশুতি রাত। মফস্বল পাড়ায় কোথাও কোনো শব্দ নেই। শুধু এই বাড়ির দোতলার উপরে যেন যুদ্ধ চলছে! যুদ্ধটা যে রাজনৈতিক বা বিদ্রোহতান্ত্রিক নয়, সেটা বলাই বাহুল্য। ক্যাঁচ্-ক্যাঁচ্ করে খাট নড়ার অনর্গল শব্দ, আহ্-উহ্ করে চাপা শীৎকার – এসব যে কীসের ইঙ্গিতবাহী, আমার মতো আহত বাঘ সেটা ভালোই বোঝে। তাই ঘাপটি মেরে দোতলার দিকেই পা বাড়ালাম। অন্ধকার দোতলার করিডোরটা পেরতেই, পাশের ঘরের খোলা দরজা দিয়ে আলোর রেখা দেখতে পেলাম। ওই ঘর থেকেই যাবতীয় বিজাতীয় শব্দ আসছিল। আমি অদম্য কৌতুহল দমন না করতে পেরে, আস্তে-আস্তে উঁকি দিলাম ঘরের মধ্যে। কিন্তু দৃশ্য দেখে তো আমার চক্ষু চরকগাছ হয়ে গেল। দেখলাম, একজন পঁয়তাল্লিশ-বছর বয়সী পৃথুলা উলঙ্গিনী, একজন বছর-চৌত্রিশের মধ্যবয়সী পুরুষের শ্রোণীদেশের উপর পা ছড়িয়ে বসে রীতিমতো ঘোড়-সওয়ারের মতো যৌন-সঙ্গম- ধ্যাৎ, যাকে বলে, হার্ড-কোর চোদাচুদি করছে!...
দৃশ্যটা দেখে আমি রীতিমতো বিহ্বল হয়ে গেলাম। তখনই বিপুল-সাইজ দুটো মাই টিপতে-টিপতে তাঁতি-স্যার দরজার দিকে মুখ ঘোরালেন। আমাকে দেখতে পেয়ে, ওই অবস্থাতেও একটা সম্ভাষণের হাসি দিয়ে সঙ্গিনীর উদ্দেশে বললেন: "ওই তো, ও এসে গেছে…" আমি কিছুই না বুঝতে পেরে, যেখানে ছিলাম সেখানেই বোকার মতো স্ট্যাচু হয়ে রইলাম।

এর পরের ঘটনা বলবার আগে, আগের একটা গ্যাপ্ পূরণ করা দরকার। আগে সেটাই বলি।… সোনাদি আমার জীবনে এসেছিল যেন ধূমকেতুর মতো। তার চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার পর, আমি মেন্টালি একেবারেই ভেঙে পড়েছিলাম। দেশে-দশে তখন দুশ্চরিত্র, লম্পট, হাজত-ফেরত বলেও আমার খুব সুনাম রটল। মা এসব সহ্য না করতে পেরে অকালেই চলে গেল। আমিও তখন বিবাগী সন্ন্যাসীর মতো কিছুদিন এদিক-সেদিক ফ্যা-ফ্যা করে ঘুরে বেড়ালাম। তারপর কলকাতায় এসে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে, প্রাইভেট একটা স্কুলে চাকরিতে ঢুকলাম। গ্র্যাজুয়েশনের রেজাল্টটা ভালো ছিল বলে চাকরিটা কোনোমতে জুটে গেল। এই করতে-করতেই অসমাপ্ত এম-এ-টা কমপ্লিট করে, বি-এড করে নিয়ে স্কুল-সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরিটা পেলাম, এই বছর-দুয়েক আগে। ইচ্ছে করেই নিজের গ্রাম, কলকাতা শহর এসব অভিশপ্ত যায়গা ছেড়ে, নর্থ-বেঙ্গল চলে এলাম অতীতকে প্রাণপণে ভুলব বলে। কিন্তু আজও ঘুমের ভেতর প্রতিদিন সোনাদির সেই মোমের-পুতুল অবয়বটা আমার দিকে হানা দেয়!… যাইহোক, এখানে স্কুলের কাছেই একটা ঘর ভাড়া নিয়ে বছর-দেড়েক থাকছিলাম। কিন্তু দুম্ করে গত আগস্টে বাড়িওয়ালা বলল, সে বাড়ি বেচে দেবে, আমাকে দু-মাসের নোটিশেই উঠে যেতে হবে। তখনই স্কুলের সিনিয়ার ইংরেজির মাস্টারমশাই, তাঁতি-স্যার এগিয়ে এলেন আমাকে সাহায্য করতে।

তাঁতি-স্যার তিনতলা একটা বাড়ি কিনেছেন আমাদের স্কুল থেকে বেশ খানিকটা দূরে, আরও ইন্টিরিয়রে। সস্তায় পেয়ে গিয়েছিলেন বোধহয়। পাড়াটা ভদ্র, শান্ত, নিরিবিলি। স্যার নিজে থাকেন দোতলায়; একা। তেতলায় একজন বিধবা থাকেন, শুনেছি সম্পর্কে স্যারের মাসিমা হন। তাঁতি-স্যার নিজেই আমার প্রবলেম শুনে, আমাকে ওনার বাড়ির একতলায় দুটো বড়ো-বড়ো রুম নামমাত্র ভাড়ায় দিয়ে দিলেন। সেই ইস্তক মাস-পাঁচেক হল আমি এ-বাড়িতে আছি। কিন্তু আজ যে দৃশ্যের আমি মুখোমুখি হলাম, তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।...

কিন্তু আমাকে ঘরের দরজায় পিপিং-টম্ অবস্থায় দেখে ফেলেও সঙ্গমরত নারী-পুরুষ দু'জন রাগলেনও না, চমকালেনও না। এমনকি নিজেদের ঢেকে নেওয়ারও বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলেন না। তাঁতি-স্যার কথাটা বলবার পরই, সেই মধ্যবয়সী নগ্নিকা আমার দিকে ঘুরে তাকালেন। মহিলাটির বয়স হলেও, বিগত-যৌবন এখনও দেহের খাঁজে-ভাঁজে রীতিমতো গনগন করে জ্বলছে। আমার তো এমন এমব্যারাসিং পরিস্থিতিতে নিজের পৌরুষকে প্যান্টের মধ্যে সংযত রাখাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠল। কিন্তু তাঁতি-স্যারের বিধবা মাসিমা আমার সঙ্কোচকে বিন্দুমাত্র পরোয়া করলেন না। স্যারের দৃঢ়োচ্চ শিশ্ন-মুখ থেকে নিজের যৌনকেশ ট্রিম্-করা রসসিক্ত পদ্ম-যোনিটাকে সগর্বে বিযুক্ত করে, দিগম্বরী অবস্থাতেই হেসে আমার দিকে এগিয়ে এলেন: "এসো, ভেতরে এসো। লজ্জা পেও না; লজ্জার এখানে কিছু নেই। তুমি যা দেখছো, এটা মানুষের সাধারণ প্রবৃত্তি। এমনটা তো প্রতি রাতে সব সংসারেই কম-বেশী ঘটে থাকে।…"

মাসিমা আমার হাত ধরে ঘরের মধ্যে নিয়ে এলেন। তারপর আমাকে খাটে বসিয়ে, পাশে বসে বললেন: "খুব অবাক হচ্ছো না, আমাদেরকে এ-অবস্থায় দেখে?" আমি কী যে বলব, সহজে ভেবে পেলাম না। তাঁতি-স্যার খাট থেকে লুঙ্গিটা কুড়িয়ে নিয়ে, ঘর থেকে বাথরুমের দিকে যেতে-যেতে আমার কাঁধে চাপড় দিয়ে হাসলেন: "বি কম্ফর্টেবল, ইয়ং-ম্যান!..." মাসিমা কিন্তু নিরাবরণ গাত্রে যোগিনী-মুর্তিতেই আমার দিকে ঘুরে বললেন: "তুমিও তো ভাঙা-মন নিয়ে এই বিদেশে একরকম পালিয়ে এসেছো, তাই না?" আমি চমকে উঠলাম, এ-কথা শুনে। মাসিমা তখন হেসে বললেন: "তোমার ওই কাতর চোখ-দুটোর দিকে তাকিয়েই বুঝেছি।… তবে তোমাকে একটা গল্প বলি, শোনো। গল্প অবশ্য নয়, সত্যি ঘটনা। তবে অতীত-স্মৃতি তো আসলে গল্পেরই মতো, কী বলো?..."

কলকল করে বয়ে চলেছে রায়মঙ্গল, এই হাত-বিশেক দূরে, নদী-বাঁধের উঁচু আল-পথের ওপাড়ে। এখন মাঝ-ফাল্গুনের অবসন্ন দুপুর। দূরে-দূরে গাছগাছালির ফাঁকে এক-টানা ডেকে চলেছে বিরহী কোকিল। দুপুরের রোদটায় কেমন একটা ঝিম-ধরানো নেশা। সেই নেশাতেই বুঝি মাতাল হয়ে, আমগাছটার বোলে-বোলে উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল।…

চুপ করে মাটির দাওয়ায়, দেওয়ালে পিঠ দিয়ে বসেছিল সমু। প্রতিদিনই দুপুর-বিকেলে এমন একটানা নিঃশব্দ-নিঃসঙ্গ প্রকৃতির দিকে একা-একা চেয়ে বসে থাকে ও। কারও সঙ্গে কথা বলে না, উঠে কোথাও বেড়াতেও যায় না এদিক-ওদিক। দিনের-পর-দিন এমন করেই নীরবে একা বসে থাকে ও।
কলকাতায় থাকলে, এখন ও ইস্কুলে। পড়ছে ক্লাস নাইনের মাঝামাঝি। কিন্তু… সে-সব সোজা হিসেব ওলোট-পালোট হয়ে গেছে ছ-মাস আগেই।… সেদিনও সমু আর পাঁচটা দিনের মতো ইস্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ টিফিনের পর পুলিশ তাকে স্কুল থেকে অসময়ে ফেরত নিয়ে যেতে আসে। অবাক সমু ছ-নম্বর বস্তিতে নিজেদের ঘর পর্যন্ত চিনে আর ফিরতে পরেনি সেদিন। অর্ধেক বস্তিটাই ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে!... মর্গ থেকে রিলিজ হওয়া যে-দুটো পোড়া, দলা পাকানো শরীরকে তারপর নিয়ম মেনে মুখাগ্নি করেছিল সে, পুলিশে না বলে দিলে ও চিনতেই পারত না, এই দুটো পোড়া-লাশ ওর মা আর বাবার!...

তারপর থেকেই সমু এখানে চলে এসেছে।… এই গ্রামটার নাম 'উইডো-পাড়া'। গ্রাম মানে, সুন্দরবন লাগোয়া গোসাবা ব্লকের মধ্যে এটা একটা ক্ষুদ্র ব-দ্বীপ। এই দ্বীপটার বয়স ষাট-সত্তর বছরের বেশী নয়। রায়মঙ্গল আর ঠাকুরাণীর জলধারা দ্বীপটাকে অন্যদিকের সাতজেলিয়া আর মোল্লাখালি-র থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। সাতজেলিয়া আর মোল্লাখালি বর্দ্ধিষ্ণু গ্রাম। দ্বীপ-দুটো আয়তনেও অনেক বড়ো। ওখানে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাজার, ফেরিঘাট সবই আছে। তাই এই উইডো-পাড়া থেকে যে-কোনো প্রয়োজনেই নৌকো ভাসাতে হয় সাতজেলিয়া কিম্বা মোল্লাখালি-র দিকে। এখানে ঘরে-ঘরে সকলের নৌকা আছে। কারণ এটা কলকাতা শহর নয়। এখানের মূল পরিবহন-ব্যবস্থাই হল জল-যান। এই জল-প্রদেশে সাইকেল-বাইকের মতোই নারী-পুরুষ সকলেই তাই নৌকা চালাতে পারে।… উইডো-পাড়া দ্বীপটা অন্য দুটো আপাত স্বচ্ছল ও জনপূর্ণ বড়ো দ্বীপের থেকে বেশ খানিকটা দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এই দ্বীপের পূবদিকে রায়মঙ্গলের ওপাড়ে যে ঘন সবুজ দ্বীপের রেখাটা মাথা উঁচু করে রয়েছে, ওটাই 'মরণঝাঁপি'। ওখানে শুধুই জঙ্গল। ওই জঙ্গলেই বাস বনের রাজার! মাঝে-মাঝে নিস্তব্ধ মাঝরাতে তাঁর সেই চাপা গর্জন ভেসে আসে এপাড়েও!...

ঘটাং করে একটা শব্দ হল কাছেই। ঘাড় ঘুরিয়ে কলতলার দিকে তাকাল সমু। মূল মাটির এই বাড়িটা থেকে কলতলাটা উঠোন দিয়ে কয়েক-পা এগিয়ে বামদিকে। সমু দেখল, মাসি এসে কলতলার সামনে নীচু হয়ে কাচা-ভর্তি সিলভারের-বালতিটা রাখল। তারপর উঠোনের তারে মেলতে লাগল ভিজে জামা-কাপড়গুলো। মাসি নীচু হচ্ছে, উঁচু হচ্ছে… আর মাসির নধর বুক-দুটো… চেষ্টা করেও চোখ সরাতে পারল না সমু। ওর শরীরটা নিজের অজান্তেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল আবার। একটা বাঁধ-ভাঙা কী যেন অবয়বহীন আবেগ, ওই চোরা-ঘূর্ণির রায়মঙ্গলের জলে ক্রমশ তলিয়ে নিয়ে যেতে চাইল সমুকে!...

সমুর ভালোনাম সম্বিৎ তাঁতি। সে পড়ত মানিকতলার একটা সরকারী-সাহায্যপ্রাপ্ত মাধ্যমিক স্কুলে ক্লাস-এইটে। ক্লাসে বরাবরই প্রথম পাঁচজনের মধ্যে থাকত সমু। এই নিয়ে তার বাবার কম গর্ব ছিল না। সমুর বাবা বাপ্পাদার গ্যারেজে মোটোর-মেকানিকের কাজ করতেন। মা দু-বাড়িতে রান্নার কাজ। বাবা বিয়ের পর, কাজের খোঁজে গ্রাম থেকে কলকাতায় চলে আসেন। সমুর জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, তাই সবই এই ছ-নম্বর বস্তির ভাড়া ঘরটাতেই।… সেদিন একটু ঘুষ-ঘুষে জ্বর আসায় বাবা আর কাজে বেরোননি। মাও রান্নার কাজ সেরে ফিরে এসেছিল দুপুর বারোটা নাগাদ। বস্তির অন্য একটা ঘরে যখন আসন্ন ভোটের জন্য জমা করে রাখা পেটোগুলো একসঙ্গে ফাটে, তখন দুপুর দেড়টা মতো হবে; মা-বাবা তখন দু'জনে একসঙ্গে খেতে বসেছিলেন।…

সমুর মায়ের নাম ছিল কুসুমকলি। আর তার মায়ের থেকে প্রায় ন'বছরের ছোটো এই মসির নাম ময়নামতি। মাসি মায়ের থেকেও বেশী লম্বা আর সুন্দরী। গায়ের রঙ চন্দন-বাটার মতো ফর্সা। টিকোলো নাক, ঢেউ খেলানো পিঠ পর্যন্ত চুল, সুন্দর লম্বাটে মুখশ্রী এবং পাঁচ-ছয় হাইটের মধ্যেই মাসির শরীরের সমস্ত খাঁজ-ভাঁজ একদম যাকে বলে পারফেক্ট-ভাবে সজ্জিত!... কিন্তু মাসির জীবনও বহু চড়াই-উৎরাই পেড়িয়ে এখন এই বিজন-দ্বীপে এসে থেমেছে।

এই পাড়াটার এমন অদ্ভুদ নামকরণের কারণ, এই গ্রামে কেবল কয়েকঘর বিধবাই বাস করে। আরও স্পষ্ট করে বললে, যে-সব হতভাগিনীর স্বামী অকালে বাঘের পেটে গেছে, এই অরণ্য-প্রদেশের কু-সংস্কারে তারা অপয়া। তাই তাদের একরকম নির্বাসন দেওয়া হয়েছে এই দ্বীপে।... অঞ্চলের পুরোনো মানুষরা অবশ্য বলে থাকেন, অনেকদিন আগে এক গোরা সাহেব এই জঙ্গলে বাঘের পেটে যায়। সাহেব শিকারী ছিল; প্রায়সই এ তল্লাটে আসত। তখনই এক দেশী মাগীর সঙ্গে সাহেবের খুব আশনাই হয়। সাহেব ম'লে গ্রামের লোকেরা সেই জাত খোওয়ানো হতভাগিনীকে প্রথম এক-ঘরে করে এই দ্বীপে নির্বাসন দিয়েছিল। সাহেবের না বিয়ে করা বিধবা হলেও, সেই স্ত্রীলোকটির স্মৃতিতেই 'বিধবা'-র ইংরেজি 'উইডো' নামটা এই দ্বীপের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।...

মাসির বিয়ে হয়েছিল এই মাত্র বছর-দুয়েক আগে, এমনই এক ফাগুন মাসে। সমুর দাদামশাই গৌরচন্দ্র পটুয়া আগে একজন সাধারণ কুমোড় ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর তাঁর ক্রমে ক্ষমতা, বিত্ত সবই বাড়ে। তাছাড়া বড়োমেয়ে কুসুমকলির বিয়ে তিনি দিয়ে দিয়েছিলেন একদম বালিকা অবস্থায়, ক্লাস এইটে পড়বার সময়। কিন্তু কপাল ফেরবার পর, ছোটোমেয়ে ময়নাকে তিনি লেখাপড়া করান যতদূর সম্ভব। মাসির যদিও লেখাপড়ায় বিশেষকিছু মাথা ছিল না; সে কোনোমতে আর্টসে গ্র্যাজুয়েশন পাশ করে, নার্সিং-এর ট্রেনিং-এ ভর্তি হয়। এই নার্সিং-ট্রেনিং-এর সূত্রে একমাস দিল্লি গিয়ে, মাসি ইন্ডিয়ান-আর্মি-তে সদ্য জয়েন করা সৈনিক রাকেশ চতুর্বেদি-র প্রেমে পড়ে।

একদিকে নন্-বেঙ্গলী ও অন্যদিকে আর্মি-ম্যান জামাইকে দাদামশায়ের একেবারেই পছন্দ ছিল না। কিন্তু আদোরের ছোটোমেয়ের জেদের কাছে তিনি হার মানেন। তাড়াহুড়ো করে রাকেশ আর ময়নার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর-পরই রাকেশ বউ নিয়ে সাতজেলিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে আসে। রাকেশ ছিল প্রবল হুল্লোড়বাজ মানুষ। ঠিকঠাক বন্ধুসঙ্গ পেলে তার নেশা মাত্রাছাড়া হয়ে যেত। এমন করেই একদিন গ্রামের ছেলেদের হুজুগে সে একটা ছিপ-নৌকায় বেড়িয়ে পড়ল বাঘ দেখতে। গৌরচন্দ্র সেদিন বাড়ি ছিলেন না; ফলে কারুর বাঁধা রাকেশ মানল না। এক-পেটি আর-এস-এর বোতল নৌকা বোঝাই করে, সে সদলবলে নৌকো ভাসাল হইহই করে। ময়না অনেক কেঁদেও তাকে থামাতে পরল না। তারপর তিনদিন-তিনরাত তারা বেপাত্তা। অবশেষে গৌরচন্দ্রের উদ্যোগে কোস্টাল-পুলিশের একটা স্পেশাল-ফোর্স অনেক খোঁজাখুঁজির পর, তাদের কুমীরমারির একটা প্রত্যন্ত জঙ্গুলে খাঁড়ি থেকে উদ্ধার করে। চারজনের মধ্যে দু'জন স্পট-ডেড, আর বাকি দু'জন মারাত্মকভাবে আহত। এই মৃতদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিল ভারতীয় সৈনিক রাকেশ চতুর্বেদী; যার কাঁধ থেকে অনেকখানি মাংস খেয়ে গিয়েছিল একটি পূর্ণবয়স্ক মাদি বাঘ!...

বিয়ের দশ-মাসের মধ্যেই বিধবা ময়না বাপের বাড়ি ফিরে আসে মুখ নীচু করে। অভিমানী দাদামশাই তখন তাকে এনে স্থাপিত করেন এই উইডো-পাড়ায়। সেই থেকে এখানে একা তপস্যিনীর মতো মুখ-বুজে দিন কাটাচ্ছিল ছাব্বিশের ভরা-যুবতী ময়না।… এদিকে বাপ-মায়ের অকাল-মৃত্যুর শোকে সমুও কেমন-যেন বিহ্বল, নির্বাক হয়ে যায়। সেইসময় সে প্রায়ই ঘন-ঘন অজ্ঞান হয়ে যেত। সপ্তা-দুয়েক হাসপাতালে কাটানোর পর, সমুর বাক্-শক্তি সাময়িকভাবে রূদ্ধ হয়ে যায়। সমুর বাবার দিকে আত্মীয়স্বজন তেমন-কেউ নেই। তাই ডাক্তার দাদামশাইকে বললেন: "সাংঘাতিক মেন্টাল-ট্রমায় ওর এমনটা ঘটেছে। ওকে একদম আলাদা কোনো পরিবেশে নিয়ে গিয়ে রাখুন। আস্তে-আস্তে দেখবেন, আবার সব নর্মাল হয়ে যাবে।…" দাদামশাই তখন সমুকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর সাতজেলিয়ায় গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু দিদিমা তাকে দেখে কান্নাকাটি করাতে, সমু আবারও অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। তখন দাদামশাই সবদিক বিবেচনা করে সমুকে মাসি'র এখানে পাঠিয়ে দেন।…

এখন সমু আগের থেকে অনেকটা রি-কভার করতে পেরেছে নিজেকে। যদিও কথা এখনও সে যথেষ্ট কমই বলে। মাসি যত্ন সহকারে তার সবকিছুই দেখাশোনা করে। অথচ সমুকে জোর করে আপন করবার, বা কথা বলানোর চেষ্টা মাসি কখনও করেনি। এই স্বাভাবিকতাটুকুই সমুকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহয্য করেছে বেশী। সে আরেকটু সুস্থ হলেই সামনের বছর মোল্লাখালি-হাইস্কুলে ভর্তি হবে; তেমনটাই ইচ্ছে গৌরচন্দ্রের।

শোক কারও দীর্ঘদিনের সঙ্গী হতে পারে না। একই দুঃখের স্মৃতি রোজ-রোজ ভাবলে সেটা একঘেয়ে হয়ে যায়। তাই সমুর মনে এখন আর সেই দগ্ধ-পোড়া মৃতদেহগুলোর বিকট স্মৃতি ততোটাও পীড়া দেয় না, যতটা প্রথম-প্রথম দিত। বাবা-মা'র না-থাকার সত্যিটা সমু এখন অনেকটাই হজম করে ফেলেছে। উল্টোদিকে ময়নার মনেও রাকেশ নামক সেই বুকে ঝড় তোলা প্রেমিকটির অকাল-মৃত্যুর কষ্ট এখন অনেকটাই প্রশমিত। জীবনে অভিজ্ঞতা নামক ঝড়-ঝাপটার সাক্ষী হয়ে, সে আজ অনেক-বেশী স্থিতধী ও ম্যাচিওর্ড। পান থেকে চুন খসলেই, সে আর এখন বাচ্চা-মেয়ের মতো বুক চাপড়ে কাঁদতে বসে না।

কাপড়-জামাগুলো মেলে দিয়ে মাসি ঘরে ঢুকে গেল। এখন বেলা তিনটে বাজে। মাসি এখন একটু গড়িয়ে নেবে। তারপর সাড়ে-পাঁচটার সময় হাত-মুখ ধুয়ে এসে, ভিজে-কাপড়েই সন্ধে দেবে তুলসী-মঞ্চের গোড়ায়। এই মাস-তিনেকে এসব প্রাত্যহিক রুটিনগুলো মুখস্থ হয়ে গেছে সমুর। সে জানে, ভিজে কাপড়ে মাসি যখন সন্ধে দেয়, তখন মাসির পরণে ওই ফিনফিনে শাড়িটার ভীতর আর কোনো সায়া-ব্লাউজ কিচ্ছু থাকে না। মাসির সরু কোমড়ের নীচে উপচে পড়া উপত্যকার গায়ে লেপ্টে থাকে অসহায় শাড়িটা। মাসি নীচু হয়ে প্রদীপ জ্বালে যখন, তখন সিক্ত চুলগুলো বুকের খাঁজ গলে… সমু তখন নিজের ভিতর একটা অদম্য কাঠিন্য-দৃঢ়তা টের পায়। ফাগুণ-দুপুরের তপ্ত ধুলোয় তার বুক থেকে উঠে আসে একটা নিদারুণ দীর্ঘশ্বাস। এ দীর্ঘশ্বাস কোনো অতীত-শোকের জন্য নয়! এ তপ্ত-শ্বাসের ব্যাখ্যা হয়তো জানে ওই দক্ষিণের ঘন বনানী; যেখানে সবকিছুই নগ্ন, খোলা ও প্রাকৃতিক! যেখানে মানুষর সংযম-নিয়ম খাটে না; খাটে কেবল খুল্লামখুল্লা জঙ্গলের কানুন!
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top