জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত
ভূমিকা :
আমলের মাধ্যমে ব্যক্তিরপরিচয় ফুটে উঠে এবং সে আল্লাহর পরীক্ষায়উত্তীর্ণ হয়। সৎ আমল করা একজন মুসলিমব্যক্তির প্রধান দায়িত্ব। আরসেজন্যই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশমানুষই আমলের বিশুদ্ধতাযাচাইয়ের প্রয়োজন মনে করে না। যে আমল সমাজে চালু সেটাইসকলে করছে। এমনকিআল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম ছালাতেরক্ষেত্রেও তাই।কারণ প্রচলিত ছালাতের হুকুম-আহকামের অধিকাংশই ত্রুটিপূর্ণ। ওযূ, তায়াম্মুম, ছালাতের ওয়াক্ত, আযান, এক্বামত, ফরয, নফল, বিতর, তাহাজ্জুদ, তারাবীহ, জুম'আ, জানাযা ও ঈদের ছালাত সবই দূষিত ও ভুলে ভরা। ফলেরাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এরছালাতের সাথে আমাদের ছালাতের অনেকাংশেই মিল নেই। এরঅন্যতম প্রধান কারণ হ'ল জাল ওযঈফ হাদীছভিত্তিক আমল এবং মানুষের রচিতমনগড়া বিধান। জাল ও যঈফ হাদীছের করাল গ্রাসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত সমাজ থেকে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।
মূলত: বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে না জানার কারণেই এই করুণ পরিণতি। এছাড়াও অনেকে বলে থাকে, যারা ছালাত পড়ে না তাদের নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই; যারা ছালাত আদায় করছে তাদেরই ভুল-ত্রুটি ধরা নিয়ে ব্যস্ত। এই অজ্ঞতাও একটি কারণ। অথচ ছালাতের প্রধান শর্তই হ'ল, রাসূল (ছাঃ) যেভাবে ছালাত আদায় করেছেন ঠিক সেভাবেই ছালাত আদায় করা।
(ইমামআবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈলআল-বুখারী, ছহীহ বুখারী (রিয়ায:মাকতাবাতু দারিস সালাম, ১৯৯৯ খৃঃ/১৪১৭ হিঃ), হা/৬৩১; ছহীহ বুখারী (করাচীছাপা: ক্বাদীমী কুতুবখানা, আছাহহুল মাতাবে' ২য় প্রকাশ:১৩৮১হিঃ/১৯৮১খৃঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৮৮; মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল্লাহ আল-খত্বীবআত-তিবরীযী, মিশকাতুল মাছাবীহ, তাহক্বীক : শায়খ আলবানী (বৈরুত: আল-মাকতাবুলইসলামী, ১৯৮৫/১৪০৫), হা/৬৮৩, ১/২১৫ পৃঃ; মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী, বঙ্গানুবাদমিশকাত (ঢাকা: এমদাদিয় পুস্তকালয়, আগস্ট ২০০২), হা/৬৩২, ২/২০৮ পৃঃ; ছহীহবুখারীহা/৬০০৮, ৭২৪৬।)
এ ব্যাপারে শরী'আতের নির্দেশ অত্যন্ত কঠোর। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'সুতরাং দুর্ভোগ সেই মুছল্লীদের জন্য, যারা ছালাতের ব্যাপারে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য আদায় করে' (মাঊন ৪-৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, 'ক্বিয়ামতের মাঠে বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে ছালাতের। ছালাতের হিসাব শুদ্ধ হ'লে তার সমস্ত আমলই সঠিকহবে আর ছালাতের হিসাব ঠিক না হ'লেতার সমস্ত আমল বরবাদ হবে'।
(আবুল ক্বাসেম সুলায়মান ইবনু আহমাদ আত-তাবারাণী, আল-মু'জামুল আওসাত্ব (কায়রো: দারুল হারামাইন, ১৪১৫), হা/১৮৫৯; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ-ছহীহাহ হা/১৩৫৮।)
জনৈক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর উপস্থিতিতে তিনবার ছালাত আদায় করেন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তিনবারই তাকে বলেন, তুমি ফিরে যাও ছালাত আদায় কর, তুমি ছালাত আদায় করনি।
(ছহীহ বুখারী হা/৭৫৭, ১/১০৪-১০৫; মিশকাত হা/৭৯০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৩৪, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৫০।)
ঐ ব্যক্তি রাসূলের সাক্ষাতে তিন তিনবার অতি সাবধানে ছালাত আদায় করেও তাঁর পদ্ধতি মোতাবেক না হওয়া তা ছালাত বলে গণ্য হয়নি। অন্য হাদীছে এসেছে, হুযায়ফাহ (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে ছালাতে রুকূ-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করতে না দেখে ছালাত শেষে তিনি তাকে ডেকে বললেন, তুমি ছালাত আদায় করনি। যদি তুমি এই অবস্থায় মারা যাও তাহ'লে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে যে ফিতরাতের উপর আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সেই ফিতরাতের বাইরে মারা যাবে।
(ছহীহ বুখারী হা/৭৯১; মিশকাত হা/৮৮৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮২৪।)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হুযায়ফাহ প্রশ্ন করলে সে জানায় যে, সে ৪০ বছর যাবৎ ছালাত আদায় করছে। তখন তিনি উক্ত মন্তব্য করেন।
(ছহীহ সুনানে নাসাঈ, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, (রিয়ায : মাকতাবাতুল মা'আরিফ, তাবি), হা/১৩১২, ১/১৪৭ পৃঃ; ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৮৯৪, সনদ ছহীহ।)
উক্ত দলীল সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বছরের পর বছর ছালাত আদায় করেও কোন লাভ নেই। লাভ হবে না যদি তা রাসূলের পদ্ধতি মোতাবেক আদায় করা না হয়। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় হ'ল, সমাজের উপর এই ছালাত যেন কোন প্রভাব ফেলছে না। অথচ আল্লাহ তা'আলার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা হ'ল, 'নিশ্চয়ই ছালাত অন্যায় ও অশ্লীল কর্ম থেকে বিরত রাখে' (আনকাবূত ৪৫)। সমাজে মুছল্লীর সংখ্যা বেশী হ'লেও অন্যায় কর্ম কিন্তু হ্রাস পাচ্ছে না; বরং মসজিদ ও মুছল্লীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও অন্যায়, অপকর্ম ও দুর্নীতি কমেনি; বরং আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হিসাবে বলা যায়, প্রচলিত ছালাতের কোন প্রভাব সমাজে পড়ছে না। এই ছালাত দুনিয়াবী জীবনে যদি কোন প্রভাব না ফেলে তাহলে পরকালে কোন প্রভাব ফেলবে কি? অতএব প্রচলিত ছালাতে একাগ্রতাও নেই বিশুদ্ধতাও নেই। সঠিক পদ্ধতিতে ছালাত আদায় না করলে একাগ্রতা সৃষ্টি হবে না। আর আল্লাহভীতি ও একনিষ্ঠতা স্থান না পেলে সে পাপাচার থেকে মুক্ত হবে না (বাক্বারাহ ২৩৮; মুমিনূন ২)। তাই আমাদেরকে এই করুণ পরিণতি থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজে বের করতে হবে। আর তা হলো রাসূল (ছাঃ)-এর দেখানো সঠিক পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করা। এজন্য সকল ব্যক্তিস্বার্থ ও মতামতকে ডিঙ্গিয়ে নিম্নের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।
ভূমিকা :
আমলের মাধ্যমে ব্যক্তিরপরিচয় ফুটে উঠে এবং সে আল্লাহর পরীক্ষায়উত্তীর্ণ হয়। সৎ আমল করা একজন মুসলিমব্যক্তির প্রধান দায়িত্ব। আরসেজন্যই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশমানুষই আমলের বিশুদ্ধতাযাচাইয়ের প্রয়োজন মনে করে না। যে আমল সমাজে চালু সেটাইসকলে করছে। এমনকিআল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম ছালাতেরক্ষেত্রেও তাই।কারণ প্রচলিত ছালাতের হুকুম-আহকামের অধিকাংশই ত্রুটিপূর্ণ। ওযূ, তায়াম্মুম, ছালাতের ওয়াক্ত, আযান, এক্বামত, ফরয, নফল, বিতর, তাহাজ্জুদ, তারাবীহ, জুম'আ, জানাযা ও ঈদের ছালাত সবই দূষিত ও ভুলে ভরা। ফলেরাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এরছালাতের সাথে আমাদের ছালাতের অনেকাংশেই মিল নেই। এরঅন্যতম প্রধান কারণ হ'ল জাল ওযঈফ হাদীছভিত্তিক আমল এবং মানুষের রচিতমনগড়া বিধান। জাল ও যঈফ হাদীছের করাল গ্রাসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত সমাজ থেকে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।
মূলত: বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে না জানার কারণেই এই করুণ পরিণতি। এছাড়াও অনেকে বলে থাকে, যারা ছালাত পড়ে না তাদের নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই; যারা ছালাত আদায় করছে তাদেরই ভুল-ত্রুটি ধরা নিয়ে ব্যস্ত। এই অজ্ঞতাও একটি কারণ। অথচ ছালাতের প্রধান শর্তই হ'ল, রাসূল (ছাঃ) যেভাবে ছালাত আদায় করেছেন ঠিক সেভাবেই ছালাত আদায় করা।
(ইমামআবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈলআল-বুখারী, ছহীহ বুখারী (রিয়ায:মাকতাবাতু দারিস সালাম, ১৯৯৯ খৃঃ/১৪১৭ হিঃ), হা/৬৩১; ছহীহ বুখারী (করাচীছাপা: ক্বাদীমী কুতুবখানা, আছাহহুল মাতাবে' ২য় প্রকাশ:১৩৮১হিঃ/১৯৮১খৃঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৮৮; মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল্লাহ আল-খত্বীবআত-তিবরীযী, মিশকাতুল মাছাবীহ, তাহক্বীক : শায়খ আলবানী (বৈরুত: আল-মাকতাবুলইসলামী, ১৯৮৫/১৪০৫), হা/৬৮৩, ১/২১৫ পৃঃ; মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী, বঙ্গানুবাদমিশকাত (ঢাকা: এমদাদিয় পুস্তকালয়, আগস্ট ২০০২), হা/৬৩২, ২/২০৮ পৃঃ; ছহীহবুখারীহা/৬০০৮, ৭২৪৬।)
এ ব্যাপারে শরী'আতের নির্দেশ অত্যন্ত কঠোর। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'সুতরাং দুর্ভোগ সেই মুছল্লীদের জন্য, যারা ছালাতের ব্যাপারে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য আদায় করে' (মাঊন ৪-৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, 'ক্বিয়ামতের মাঠে বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে ছালাতের। ছালাতের হিসাব শুদ্ধ হ'লে তার সমস্ত আমলই সঠিকহবে আর ছালাতের হিসাব ঠিক না হ'লেতার সমস্ত আমল বরবাদ হবে'।
(আবুল ক্বাসেম সুলায়মান ইবনু আহমাদ আত-তাবারাণী, আল-মু'জামুল আওসাত্ব (কায়রো: দারুল হারামাইন, ১৪১৫), হা/১৮৫৯; মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ-ছহীহাহ হা/১৩৫৮।)
জনৈক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর উপস্থিতিতে তিনবার ছালাত আদায় করেন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তিনবারই তাকে বলেন, তুমি ফিরে যাও ছালাত আদায় কর, তুমি ছালাত আদায় করনি।
(ছহীহ বুখারী হা/৭৫৭, ১/১০৪-১০৫; মিশকাত হা/৭৯০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৩৪, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৫০।)
ঐ ব্যক্তি রাসূলের সাক্ষাতে তিন তিনবার অতি সাবধানে ছালাত আদায় করেও তাঁর পদ্ধতি মোতাবেক না হওয়া তা ছালাত বলে গণ্য হয়নি। অন্য হাদীছে এসেছে, হুযায়ফাহ (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে ছালাতে রুকূ-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করতে না দেখে ছালাত শেষে তিনি তাকে ডেকে বললেন, তুমি ছালাত আদায় করনি। যদি তুমি এই অবস্থায় মারা যাও তাহ'লে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে যে ফিতরাতের উপর আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সেই ফিতরাতের বাইরে মারা যাবে।
(ছহীহ বুখারী হা/৭৯১; মিশকাত হা/৮৮৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৮২৪।)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হুযায়ফাহ প্রশ্ন করলে সে জানায় যে, সে ৪০ বছর যাবৎ ছালাত আদায় করছে। তখন তিনি উক্ত মন্তব্য করেন।
(ছহীহ সুনানে নাসাঈ, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, (রিয়ায : মাকতাবাতুল মা'আরিফ, তাবি), হা/১৩১২, ১/১৪৭ পৃঃ; ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৮৯৪, সনদ ছহীহ।)
উক্ত দলীল সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বছরের পর বছর ছালাত আদায় করেও কোন লাভ নেই। লাভ হবে না যদি তা রাসূলের পদ্ধতি মোতাবেক আদায় করা না হয়। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় হ'ল, সমাজের উপর এই ছালাত যেন কোন প্রভাব ফেলছে না। অথচ আল্লাহ তা'আলার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা হ'ল, 'নিশ্চয়ই ছালাত অন্যায় ও অশ্লীল কর্ম থেকে বিরত রাখে' (আনকাবূত ৪৫)। সমাজে মুছল্লীর সংখ্যা বেশী হ'লেও অন্যায় কর্ম কিন্তু হ্রাস পাচ্ছে না; বরং মসজিদ ও মুছল্লীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও অন্যায়, অপকর্ম ও দুর্নীতি কমেনি; বরং আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণ হিসাবে বলা যায়, প্রচলিত ছালাতের কোন প্রভাব সমাজে পড়ছে না। এই ছালাত দুনিয়াবী জীবনে যদি কোন প্রভাব না ফেলে তাহলে পরকালে কোন প্রভাব ফেলবে কি? অতএব প্রচলিত ছালাতে একাগ্রতাও নেই বিশুদ্ধতাও নেই। সঠিক পদ্ধতিতে ছালাত আদায় না করলে একাগ্রতা সৃষ্টি হবে না। আর আল্লাহভীতি ও একনিষ্ঠতা স্থান না পেলে সে পাপাচার থেকে মুক্ত হবে না (বাক্বারাহ ২৩৮; মুমিনূন ২)। তাই আমাদেরকে এই করুণ পরিণতি থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজে বের করতে হবে। আর তা হলো রাসূল (ছাঃ)-এর দেখানো সঠিক পদ্ধতিতে ছালাত আদায় করা। এজন্য সকল ব্যক্তিস্বার্থ ও মতামতকে ডিঙ্গিয়ে নিম্নের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।