ওয়াহ্হাবী আন্দোলন : উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ এবং মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব
মধ্য আরবের প্রাচীন উচ্চভূমি অঞ্চল ‘নাজদ’। অষ্টাদশ শতকে এভূখন্ডে ঘটে যায় এক অসাধারণ ইসলামী বিপ্লব। ইসলাম আগমনের পূর্বে অজ্ঞতার তিমির প্রহেলিকা আরব জাতিকে যেমন আচ্ছাদিত করে রেখেছিল, ঠিক তেমনি আববাসীয় শাসনামলের পতনের পর থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী অবধি পুনরায় খোদ ‘অহি-র অবতরণ স্থল’ আরবের বুকে ধীরে ধীরে জমাট বেঁধেছিল জাহেলিয়াতের গাঢ় তমিস্রা। শিরক-বিদ‘আতের ভয়াবহ আগ্রাসনে অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছিল ইসলামের ব্যক্তি, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির আদি কাঠামো। এমনই এক ক্রান্তিলগ্নে বলা যায় ইসলামের পুনর্জন্মবার্তা নিয়েই ‘ওয়াহ্হাবী আন্দোলন’ তথা ইসলামের বিশুদ্ধ রূপের দিকে প্রত্যাবর্তনবাদী ও সংস্কার-অনুবর্তী এই আন্দোলনের জন্ম হয়। বৈশিষ্ট্যগত কারণে এ আন্দোলনকে সালাফী আন্দোলন বা মুওয়াহ্হিদীন আন্দোলন বলে আখ্যা দেয়া হয়। এ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন সালমান বিন আলী আত-তায়মী (১৭০৩-১৭৬১ খৃঃ) রাহিমাহুল্লাহ। অহী নাযিলের পবিত্র ভূমি আরবের বুকে এই মহান যুগসংস্কারক কেবল রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের পুনরুজ্জীবনই ঘটাননি; বরং নাজদ থেকে এমন এক ইসলামী সমাজের উত্থান ঘটান যা খুলাফায়ে রাশেদীনের পর অহি-র প্রাণকেন্দ্রে পুনরায় তাওহীদ ও সুন্নাতের উপর ভিত্তিশীল একটি বৃহত্তর আরব রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হয়েছিল। যার বিকীর্ণ আলোকচ্ছটা আরব মরুর দিকচক্রবাল পেরিয়ে পরবর্তীতে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলন ছিল মুসলিম বিশ্বে শিরক, বিদ‘আত অর্থাৎ ইসলামী শরী‘আতের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট নবসৃষ্ট বিধি-বিধান, বিজাতীয় সংস্পর্শ থেকে আগত যাবতীয় শিরকী ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজ ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম একটি সংগঠিত ও সফল আন্দোলন, যা মধ্যযুগীয় অবক্ষয়কালীন দুর্যোগ কাটিয়ে ইসলামের নবতর বিকাশের জন্য এক যুগান্তকারী মাইল ফলকে পরিণত হয়। আধুনিক যুগের সকল ইসলামী সংস্কারবাদী আন্দোলনের আদর্শিক প্রেরণা এই আন্দোলন। সৈয়দ আব্দুল কুদ্দূস যথার্থই বলেন, ‘আধুনিক যুগে ইসলামী রেঁনেসার উৎপত্তি মূলতঃ অষ্টাদশ শতকের ‘ওয়াহ্হাবী’ আন্দোলন থেকে। দার্শনিক ও আদর্শগত দিক থেকে এই রেঁনেসার ইতিহাস মূলতঃ ওয়াহ্হাবী আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা’। (Syed Abdul Quddus, The Challenge of Islamic Renaissance, (Dehli : Adam Publishers, 1990), P. 17. ) মহাকবি ইকবাল এই আন্দোলনকে আখ্যা দিয়েছেন- ‘‘The first throb of life in modern Islam" অর্থাৎ ‘আধুনিক ইসলামের প্রথম হৃদস্পন্দন’ হিসাবে। (প্রাগুক্ত, ১৭ পৃঃ।) আল্লামা যিরিকলী বলেন, ‘এই দাওয়াত ছিল সমগ্র মুসলিম বিশ্বের আধুনিক নবজাগরণে সর্বপ্রথম বিচ্ছুরিত আলোকধারা। যার প্রভাবে ভারত, মিসর, ইরাক ও সিরিয়ার সংস্কারবাদীগণ উদ্বুদ্ধ হন’। (খায়রুদ্দীন আয-যিরিকলী, আল-আ‘লাম (বৈরূত : দারুল ইলম লিল মালায়ীন, ১৫ তম প্রকাশ : ২০০২ খৃঃ), ৬/২৫৭ পৃঃ।)
মধ্য আরবের প্রাচীন উচ্চভূমি অঞ্চল ‘নাজদ’। অষ্টাদশ শতকে এভূখন্ডে ঘটে যায় এক অসাধারণ ইসলামী বিপ্লব। ইসলাম আগমনের পূর্বে অজ্ঞতার তিমির প্রহেলিকা আরব জাতিকে যেমন আচ্ছাদিত করে রেখেছিল, ঠিক তেমনি আববাসীয় শাসনামলের পতনের পর থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী অবধি পুনরায় খোদ ‘অহি-র অবতরণ স্থল’ আরবের বুকে ধীরে ধীরে জমাট বেঁধেছিল জাহেলিয়াতের গাঢ় তমিস্রা। শিরক-বিদ‘আতের ভয়াবহ আগ্রাসনে অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছিল ইসলামের ব্যক্তি, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির আদি কাঠামো। এমনই এক ক্রান্তিলগ্নে বলা যায় ইসলামের পুনর্জন্মবার্তা নিয়েই ‘ওয়াহ্হাবী আন্দোলন’ তথা ইসলামের বিশুদ্ধ রূপের দিকে প্রত্যাবর্তনবাদী ও সংস্কার-অনুবর্তী এই আন্দোলনের জন্ম হয়। বৈশিষ্ট্যগত কারণে এ আন্দোলনকে সালাফী আন্দোলন বা মুওয়াহ্হিদীন আন্দোলন বলে আখ্যা দেয়া হয়। এ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন সালমান বিন আলী আত-তায়মী (১৭০৩-১৭৬১ খৃঃ) রাহিমাহুল্লাহ। অহী নাযিলের পবিত্র ভূমি আরবের বুকে এই মহান যুগসংস্কারক কেবল রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের পুনরুজ্জীবনই ঘটাননি; বরং নাজদ থেকে এমন এক ইসলামী সমাজের উত্থান ঘটান যা খুলাফায়ে রাশেদীনের পর অহি-র প্রাণকেন্দ্রে পুনরায় তাওহীদ ও সুন্নাতের উপর ভিত্তিশীল একটি বৃহত্তর আরব রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হয়েছিল। যার বিকীর্ণ আলোকচ্ছটা আরব মরুর দিকচক্রবাল পেরিয়ে পরবর্তীতে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলন ছিল মুসলিম বিশ্বে শিরক, বিদ‘আত অর্থাৎ ইসলামী শরী‘আতের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট নবসৃষ্ট বিধি-বিধান, বিজাতীয় সংস্পর্শ থেকে আগত যাবতীয় শিরকী ও বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজ ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম একটি সংগঠিত ও সফল আন্দোলন, যা মধ্যযুগীয় অবক্ষয়কালীন দুর্যোগ কাটিয়ে ইসলামের নবতর বিকাশের জন্য এক যুগান্তকারী মাইল ফলকে পরিণত হয়। আধুনিক যুগের সকল ইসলামী সংস্কারবাদী আন্দোলনের আদর্শিক প্রেরণা এই আন্দোলন। সৈয়দ আব্দুল কুদ্দূস যথার্থই বলেন, ‘আধুনিক যুগে ইসলামী রেঁনেসার উৎপত্তি মূলতঃ অষ্টাদশ শতকের ‘ওয়াহ্হাবী’ আন্দোলন থেকে। দার্শনিক ও আদর্শগত দিক থেকে এই রেঁনেসার ইতিহাস মূলতঃ ওয়াহ্হাবী আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা’। (Syed Abdul Quddus, The Challenge of Islamic Renaissance, (Dehli : Adam Publishers, 1990), P. 17. ) মহাকবি ইকবাল এই আন্দোলনকে আখ্যা দিয়েছেন- ‘‘The first throb of life in modern Islam" অর্থাৎ ‘আধুনিক ইসলামের প্রথম হৃদস্পন্দন’ হিসাবে। (প্রাগুক্ত, ১৭ পৃঃ।) আল্লামা যিরিকলী বলেন, ‘এই দাওয়াত ছিল সমগ্র মুসলিম বিশ্বের আধুনিক নবজাগরণে সর্বপ্রথম বিচ্ছুরিত আলোকধারা। যার প্রভাবে ভারত, মিসর, ইরাক ও সিরিয়ার সংস্কারবাদীগণ উদ্বুদ্ধ হন’। (খায়রুদ্দীন আয-যিরিকলী, আল-আ‘লাম (বৈরূত : দারুল ইলম লিল মালায়ীন, ১৫ তম প্রকাশ : ২০০২ খৃঃ), ৬/২৫৭ পৃঃ।)