বর্তমান মুসলমানদের গোড়ায় গলদ আছে। এরা শুধু ওপর মুসলমানের দোষ দেখতে পায়, নিজের দোষ খুজেও পায় না।
"তোমরা অপরের দোষ গোপন রাখ, আল্লাহ তোমার গোপন দোষ সমুহ মিটিয়ে দিবেন"। (আল কুরআন)
মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা হুজরাতের এগার নম্বর আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, "হে মুমিনগণ কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ইসলামের প্রতি ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা অতি জঘণ্য। যারা এমন কাজ থেকে বিরত না থাকে তারাই জালিম"। সূরা হুজরাতের বার নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে' "হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত খেতে চাইবে"?
দেখুন, পবিত্র কুরআনে গিবত করাকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে ব্যক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্র অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সর্বত্রই গিবত ও পরনিন্দার চর্চার প্রতিযোগিতা হয়।
গিবত ও পরনিন্দা একটি মনস্তাত্ত্বিক রোগ। যে রোগ অন্যের ভালো কিছু সহ্য না হওয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। যার কোনো রকম আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা বা দাওয়াই নেই। অথচ এ দূরারোগ্য সামাজিক ক্যান্সারকে নিত্যদিনের সঙ্গি বানিয়ে আমরা বেশ ভালো জীবনযাপনের মিথ্যা চেষ্টায় মত্ত রয়েছি। অন্যের সম্পত্তি, বাড়ি-গাড়ি, ভালো চাকরি, ব্যবসায়িক আয়-উন্নতি, রুজি-রোজগার, বিয়ে-শাদি, প্রভাব প্রতিপত্তি ও সামাজিক অবস্থান দেখে মানুষ মাত্রই কম বেশি হিংসুটে হয়। পবিত্র কোরআনে সূরা হিজরের ৮৮ আয়াতে বলা হয়েছে, "আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়াছি, তার প্রতি তুমি কখনও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না"। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদের তাগিদ দেয়ার পেছনে অনেক গুপ্ত রহস্য রয়েছে। মানুষ মাত্রই চোখের দৃষ্টি যতটুকু যায় সেই সঙ্গে হিংসা-প্রতিহিংসা কুদৃষ্টি ও ততটুকু প্রসারিত হয়।
তখন প্রতিবেশীর বাড়িঘর কাজকর্মে সাফল্য দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজের কাজকর্ম রেখে অন্যের গিবত ও পরনিন্দায় ব্যাকূল হয়ে পড়ি। পরিবার, সমাজ কিম্বা রাষ্ট্রের অসঙ্গতি ও বিশৃংখলার মূলে রয়েছে হিংসা, গিবত ও পরনিন্দা চর্চা।
পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে হিংসার চর্চা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, পরিবারে যার আয়-রোজগার বেশি, যার আয়-রুজি একটু কম, তার সন্তানদের দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, ফুফু-ফুফা এবং আত্মীয়স্বজনেরা অবহেলা করেন। বিভিন্ন উৎসব কিংবা পারিবারিক আয়োজনে দেখা যায় স্বল্প আয়-রোজগারের আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর তেমন একটা কেউ নেন না। আমরা প্রায়ই প্রত্যক্ষ করি একই পরিবারে দুই ছেলের বউ থাকলে যার গায়ের রং কালো তিনি ফর্সার তুলনায় কম সম্মান-শ্রদ্ধা পেয়ে থাকেন। বউয়ের গায়ের রঙের পাশাপাশি তার বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থা অসচ্ছল হলে সময় সময় নানা রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে যায়। অফিস-আদালতেও দেখা যায় কিছু সহকর্মী থাকেন যারা নিজেকে নির্দোষ ভাবেন এবং ক্যান্টিনে কিংবা অফিসের বারান্দায় অন্য সহকর্মীর গিবত করতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সহকর্মীর সামনে-পেছেন নিজের অযোগ্যতাকে ঢাকতে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অকপটে অপপ্রচার চালিয়ে যান।
সমাজের অসঙ্গতি দূর করতে হলে এবং পরকালে মুক্তি পেতে হলে ব্যক্তি পর্যায়ে কিংবা গোষ্ঠীগতভাবে হিংসা পরনিন্দা চর্চা থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। শুক্রবারের জুমার আলোচনায় হিংসা গিবত সম্পর্কে কোরআনভিত্তিক আলোচনার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। অনেক মসজিদে ঈমাম কমিটির ইচ্ছানুযায়ী বয়ান করেন এ মর্মে সমাজে একটি প্রচলিত ধারণাও রয়েছে। পবিত্র কুরআনের আলোকে বেশি বেশি আত্ম সংশোধনমূলক বক্তব্য দেয়া হলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, 'হে রাসূল! আপনি যতই তাদের বলেন না কেন তারা শুনবে কিন্তুু তাদের মনের মধ্যে কোনো ধরনের বোধশক্তি আসবে না। কারণ এরা প্রতিবন্ধী। আমি তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছি। হে রাসূল! আপনার দায়িত্ব জানিয়ে দেয়া'। আসুন, আমরা পরস্পর হিংসা ও গিবতের আজাব সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করি। আমাদের দায়িত্ব হল প্রতিবেশীকে গুরুত্বের সঙ্গে হিংসার ফলাফল সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা হেদায়াত করার মালিক। যেসব জায়গায় তাফসিরুল কোরআনের মাহফিল হয় সেখানেও হিংসা, গিবত ও পরনিন্দার ওপর তেমন একটা বয়ান কিংবা আলোচনা করা হয় না। এমনকি ওয়াজ মাহফিলেও পরনিন্দা তথা ওপর আলেমদের দোষ চর্চাও হয়ে থাকে। তাই মাহফিলের আয়োজকদের প্রতি আমার সবিনয় অনুরোধ আপনারা এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেবেন।
আসুন, আমরা সবাই নিজের দোষ অন্বেষণে বেশি মনোযোগী হই। হিংসা-গিবত পরিহার করি। মহান আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদের সবাইকে হিংসা, গিবত ও পরনিন্দা থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন।
আমিন।
"তোমরা অপরের দোষ গোপন রাখ, আল্লাহ তোমার গোপন দোষ সমুহ মিটিয়ে দিবেন"। (আল কুরআন)
মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সূরা হুজরাতের এগার নম্বর আয়াতে ঘোষণা করা হয়েছে, "হে মুমিনগণ কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ইসলামের প্রতি ঈমান আনার পর তাকে মন্দ নামে ডাকা অতি জঘণ্য। যারা এমন কাজ থেকে বিরত না থাকে তারাই জালিম"। সূরা হুজরাতের বার নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে' "হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে দূরে থাক; কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত খেতে চাইবে"?
দেখুন, পবিত্র কুরআনে গিবত করাকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে ব্যক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্র অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সর্বত্রই গিবত ও পরনিন্দার চর্চার প্রতিযোগিতা হয়।
গিবত ও পরনিন্দা একটি মনস্তাত্ত্বিক রোগ। যে রোগ অন্যের ভালো কিছু সহ্য না হওয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। যার কোনো রকম আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা বা দাওয়াই নেই। অথচ এ দূরারোগ্য সামাজিক ক্যান্সারকে নিত্যদিনের সঙ্গি বানিয়ে আমরা বেশ ভালো জীবনযাপনের মিথ্যা চেষ্টায় মত্ত রয়েছি। অন্যের সম্পত্তি, বাড়ি-গাড়ি, ভালো চাকরি, ব্যবসায়িক আয়-উন্নতি, রুজি-রোজগার, বিয়ে-শাদি, প্রভাব প্রতিপত্তি ও সামাজিক অবস্থান দেখে মানুষ মাত্রই কম বেশি হিংসুটে হয়। পবিত্র কোরআনে সূরা হিজরের ৮৮ আয়াতে বলা হয়েছে, "আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়াছি, তার প্রতি তুমি কখনও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না"। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদের তাগিদ দেয়ার পেছনে অনেক গুপ্ত রহস্য রয়েছে। মানুষ মাত্রই চোখের দৃষ্টি যতটুকু যায় সেই সঙ্গে হিংসা-প্রতিহিংসা কুদৃষ্টি ও ততটুকু প্রসারিত হয়।
তখন প্রতিবেশীর বাড়িঘর কাজকর্মে সাফল্য দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিজের কাজকর্ম রেখে অন্যের গিবত ও পরনিন্দায় ব্যাকূল হয়ে পড়ি। পরিবার, সমাজ কিম্বা রাষ্ট্রের অসঙ্গতি ও বিশৃংখলার মূলে রয়েছে হিংসা, গিবত ও পরনিন্দা চর্চা।
পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে হিংসার চর্চা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, পরিবারে যার আয়-রোজগার বেশি, যার আয়-রুজি একটু কম, তার সন্তানদের দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, ফুফু-ফুফা এবং আত্মীয়স্বজনেরা অবহেলা করেন। বিভিন্ন উৎসব কিংবা পারিবারিক আয়োজনে দেখা যায় স্বল্প আয়-রোজগারের আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর তেমন একটা কেউ নেন না। আমরা প্রায়ই প্রত্যক্ষ করি একই পরিবারে দুই ছেলের বউ থাকলে যার গায়ের রং কালো তিনি ফর্সার তুলনায় কম সম্মান-শ্রদ্ধা পেয়ে থাকেন। বউয়ের গায়ের রঙের পাশাপাশি তার বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থা অসচ্ছল হলে সময় সময় নানা রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে যায়। অফিস-আদালতেও দেখা যায় কিছু সহকর্মী থাকেন যারা নিজেকে নির্দোষ ভাবেন এবং ক্যান্টিনে কিংবা অফিসের বারান্দায় অন্য সহকর্মীর গিবত করতে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সহকর্মীর সামনে-পেছেন নিজের অযোগ্যতাকে ঢাকতে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অকপটে অপপ্রচার চালিয়ে যান।
সমাজের অসঙ্গতি দূর করতে হলে এবং পরকালে মুক্তি পেতে হলে ব্যক্তি পর্যায়ে কিংবা গোষ্ঠীগতভাবে হিংসা পরনিন্দা চর্চা থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। শুক্রবারের জুমার আলোচনায় হিংসা গিবত সম্পর্কে কোরআনভিত্তিক আলোচনার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। অনেক মসজিদে ঈমাম কমিটির ইচ্ছানুযায়ী বয়ান করেন এ মর্মে সমাজে একটি প্রচলিত ধারণাও রয়েছে। পবিত্র কুরআনের আলোকে বেশি বেশি আত্ম সংশোধনমূলক বক্তব্য দেয়া হলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, 'হে রাসূল! আপনি যতই তাদের বলেন না কেন তারা শুনবে কিন্তুু তাদের মনের মধ্যে কোনো ধরনের বোধশক্তি আসবে না। কারণ এরা প্রতিবন্ধী। আমি তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছি। হে রাসূল! আপনার দায়িত্ব জানিয়ে দেয়া'। আসুন, আমরা পরস্পর হিংসা ও গিবতের আজাব সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করি। আমাদের দায়িত্ব হল প্রতিবেশীকে গুরুত্বের সঙ্গে হিংসার ফলাফল সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা হেদায়াত করার মালিক। যেসব জায়গায় তাফসিরুল কোরআনের মাহফিল হয় সেখানেও হিংসা, গিবত ও পরনিন্দার ওপর তেমন একটা বয়ান কিংবা আলোচনা করা হয় না। এমনকি ওয়াজ মাহফিলেও পরনিন্দা তথা ওপর আলেমদের দোষ চর্চাও হয়ে থাকে। তাই মাহফিলের আয়োজকদের প্রতি আমার সবিনয় অনুরোধ আপনারা এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেবেন।
আসুন, আমরা সবাই নিজের দোষ অন্বেষণে বেশি মনোযোগী হই। হিংসা-গিবত পরিহার করি। মহান আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদের সবাইকে হিংসা, গিবত ও পরনিন্দা থেকে বিরত থাকার তৌফিক দান করুন।
আমিন।