২০০২ সালে আমেরিকায় এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে! লিডিয়া ফেয়ারচাইল্ড নামে এক মহিলা স্বামীর সাথে ডিভোর্সের পর তার দুই সন্তানের দায়িত্ব নেয়ার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত লিডিয়ার মাতৃত্ব নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ডিএনএ টেস্ট করতে বলে। কিন্তু টেস্টের রেজাল্ট আসে নেগেটিভ! অর্থাৎ, ডিএনএ টেস্ট অনুযায়ী লিডিয়ার সাথে তার সন্তানদের কোনো সম্পর্কই নেই! আদালত তখন লিডিয়াকে প্রতারক বলে অভিহিত করে এবং লিডিয়ার কাছ থেকে দুই সন্তানকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণও ছিলো। বহুদিন ধরেই আমেরিকায় মোটা টাকার বিনিময়ে বন্ধ্যা দম্পতিকে গর্ভ ভাড়া দেয়ার চল আছে। স্বাভাবিকভাবেই আদালত ভেবে নেয়, লিডিয়াও হয়তো তা-ই করেছেন। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এই ঘটনার সময় লিডিয়া গর্ভবতী ছিলেন। তাই তৃতীয় সন্তান জন্মের সময় আদালতের নির্দেশে সেখানে আইনজীবী হাজির করা হয়। যথাসময়ে লিডিয়া সন্তান প্রসব করলেন। তাৎক্ষণিকভাবে সেই সন্তানের ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করা হলো। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে আবারো রেজাল্ট আসলো নেগেটিভ! অর্থাৎ, ডিএনএ টেস্ট অনুসারে লিডিয়া এই সন্তানেরও মা নন! এই ঘটনায় আদালত নিজেই বিপাকে পড়ে যায়!
লিডিয়া ফেয়ারচাইল্ড
একই বছরের গোড়ার দিকে কারেন কীগান নামে বোস্টনের এক মহিলার কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। কীগানের সন্তানেরা মাকে নিজেদের কিডনি দান করতে চাইলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষার পরে তাদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়। কিন্তু ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট আসে নেগেটিভ! অর্থ্যাৎ কীগান যাদেরকে এতোদিন মাতৃস্নেহে লালনপালন করেছেন, তাদের কারো সাথেই তার ডিএনএ মিলছে না! তাহলে কি তারা কেউই কীগানের সন্তান নয়? এই বিস্ময়কর ঘটনার ব্যাখ্যা নিয়ে ঐ বছরেই "নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন"-এ একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়!
সৌভাগ্যক্রমে কীগানের ঘটনাটি লিডিয়ার মামলার সাথে জড়িত এক ব্যক্তির নজরে আসে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য লিডিয়ার আইনজীবী অ্যালান টিন্ডেলকে পরামর্শ দেন। টিন্ডেল তখন ঐ জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধটি আদালতে হাজির করেন এবং লিডিয়ার মায়ের (বাচ্চাদের নানীর) ডিএনএ টেস্ট করার অনুমতি চান। টেস্টের রেজাল্ট এবার পজেটিভ আসে। অর্থাৎ নানীর সাথে বাচ্চাদের ডিএনএ-র মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা তখন এই ধাঁধার ব্যাখ্যা দাঁড়া করান। তাঁরা বলেন, লিডিয়া ফেয়ারচাইল্ড একজন "জেনেটিক কাইমেরা"।
কাইমেরা (Chimera)
ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে বলে নেই, কাইমেরা (Chimera) হচ্ছে গ্রিক পুরাণের দুই মাথাওয়ালা কাল্পনিক জন্তু, যার একটি মাথা সিংহের আর অন্য মাথাটি শিংওয়ালা ছাগলের। এর লেজের অগ্রভাগটি আবার সাপের মাথার আকৃতি নিয়েছে। অর্থ্যাৎ কাইমেরা মানে একের ভেতর অনেক। কীগানের মতো লিডিয়াও এই কাইমেরিজমের শিকার! অর্থ্যাৎ তার শরীরে দুই ধরণের ডিএনএ আছে! সাধারণত মানবদেহের সকল কোষে একই ধরণের ডিএনএ থাকে। অর্থাৎ মানুষের মুখের লালায় এবং জনন কোষে একই ধরণের ডিএনএ বিদ্যমান। কিন্তু যারা কাইমেরিক ব্যক্তি, তাদের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন দুইটি ডিএনএ সেট থাকে। দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথম টেস্টের সময় লিডিয়ার যে কোষ পরীক্ষা করা হয়েছিলো, তার সেট ছিলো A (মুখের লালা)। কিন্তু বাচ্চারা লিডিয়ার কাছ থেকে যে ডিএনএ পেয়েছে, তার সেট ছিলো B (জনন কোষ)। এজন্যই প্রথমবার লিডিয়ার সাথে তার বাচ্চাদের ডিএনএ মিলে নি।
এবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে লিডিয়ার দেহ থেকে এমন কোষ নিয়ে পরীক্ষা করা হলো, যাতে B সেটের ডিএনএ রয়েছে (জরায়ুর অগ্রভাগের কোষ)। সেই নমুনার সাথে বাচ্চাদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হলো। এইবার রেজাল্ট আসলো পজেটিভ। অর্থ্যাৎ প্রমাণ হলো লিডিয়া প্রতারক নন, তিনি সত্যিকার অর্থেই ঐ তিন সন্তানের মা।
কিন্তু কেন এমন হলো? কারণটা বেশ মজার। লিডিয়া কিংবা কীগান কেউই আসলে একক স্বত্বা নন। তাদের প্রত্যেকের ভেতরেই নিজেদের জমজ ভাই কিংবা বোনের ছায়া রয়েছে। সাধারণত নন-আইডেন্টিক্যাল জমজ বাচ্চাদের দেহে আলাদা ডিএনএ সেট থাকে এবং তারা মায়ের গর্ভে আলাদা স্বত্বা হিসেবে বিকশিত হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কখনো কখনো একটি ভ্রূণের ভেতরে অন্য ভ্রূণটি ঢুকে পড়ে এবং একটিমাত্র বাচ্চা হিসেবে মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে। যথাসময়ে বাচ্চাটি দুইজনের ডিএনএ প্রোফাইল নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আর এভাবেই মাতৃগর্ভে হারিয়ে যাওয়া ভ্রূণ সহোদরের দেহে ছায়া হয়ে রয়ে যায়।
লিডিয়া ফেয়ারচাইল্ড
একই বছরের গোড়ার দিকে কারেন কীগান নামে বোস্টনের এক মহিলার কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। কীগানের সন্তানেরা মাকে নিজেদের কিডনি দান করতে চাইলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষার পরে তাদের ডিএনএ টেস্ট করা হয়। কিন্তু ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট আসে নেগেটিভ! অর্থ্যাৎ কীগান যাদেরকে এতোদিন মাতৃস্নেহে লালনপালন করেছেন, তাদের কারো সাথেই তার ডিএনএ মিলছে না! তাহলে কি তারা কেউই কীগানের সন্তান নয়? এই বিস্ময়কর ঘটনার ব্যাখ্যা নিয়ে ঐ বছরেই "নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন"-এ একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়!
সৌভাগ্যক্রমে কীগানের ঘটনাটি লিডিয়ার মামলার সাথে জড়িত এক ব্যক্তির নজরে আসে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য লিডিয়ার আইনজীবী অ্যালান টিন্ডেলকে পরামর্শ দেন। টিন্ডেল তখন ঐ জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধটি আদালতে হাজির করেন এবং লিডিয়ার মায়ের (বাচ্চাদের নানীর) ডিএনএ টেস্ট করার অনুমতি চান। টেস্টের রেজাল্ট এবার পজেটিভ আসে। অর্থাৎ নানীর সাথে বাচ্চাদের ডিএনএ-র মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা তখন এই ধাঁধার ব্যাখ্যা দাঁড়া করান। তাঁরা বলেন, লিডিয়া ফেয়ারচাইল্ড একজন "জেনেটিক কাইমেরা"।
কাইমেরা (Chimera)
ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে বলে নেই, কাইমেরা (Chimera) হচ্ছে গ্রিক পুরাণের দুই মাথাওয়ালা কাল্পনিক জন্তু, যার একটি মাথা সিংহের আর অন্য মাথাটি শিংওয়ালা ছাগলের। এর লেজের অগ্রভাগটি আবার সাপের মাথার আকৃতি নিয়েছে। অর্থ্যাৎ কাইমেরা মানে একের ভেতর অনেক। কীগানের মতো লিডিয়াও এই কাইমেরিজমের শিকার! অর্থ্যাৎ তার শরীরে দুই ধরণের ডিএনএ আছে! সাধারণত মানবদেহের সকল কোষে একই ধরণের ডিএনএ থাকে। অর্থাৎ মানুষের মুখের লালায় এবং জনন কোষে একই ধরণের ডিএনএ বিদ্যমান। কিন্তু যারা কাইমেরিক ব্যক্তি, তাদের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন দুইটি ডিএনএ সেট থাকে। দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথম টেস্টের সময় লিডিয়ার যে কোষ পরীক্ষা করা হয়েছিলো, তার সেট ছিলো A (মুখের লালা)। কিন্তু বাচ্চারা লিডিয়ার কাছ থেকে যে ডিএনএ পেয়েছে, তার সেট ছিলো B (জনন কোষ)। এজন্যই প্রথমবার লিডিয়ার সাথে তার বাচ্চাদের ডিএনএ মিলে নি।
এবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে লিডিয়ার দেহ থেকে এমন কোষ নিয়ে পরীক্ষা করা হলো, যাতে B সেটের ডিএনএ রয়েছে (জরায়ুর অগ্রভাগের কোষ)। সেই নমুনার সাথে বাচ্চাদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হলো। এইবার রেজাল্ট আসলো পজেটিভ। অর্থ্যাৎ প্রমাণ হলো লিডিয়া প্রতারক নন, তিনি সত্যিকার অর্থেই ঐ তিন সন্তানের মা।
কিন্তু কেন এমন হলো? কারণটা বেশ মজার। লিডিয়া কিংবা কীগান কেউই আসলে একক স্বত্বা নন। তাদের প্রত্যেকের ভেতরেই নিজেদের জমজ ভাই কিংবা বোনের ছায়া রয়েছে। সাধারণত নন-আইডেন্টিক্যাল জমজ বাচ্চাদের দেহে আলাদা ডিএনএ সেট থাকে এবং তারা মায়ের গর্ভে আলাদা স্বত্বা হিসেবে বিকশিত হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কখনো কখনো একটি ভ্রূণের ভেতরে অন্য ভ্রূণটি ঢুকে পড়ে এবং একটিমাত্র বাচ্চা হিসেবে মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে। যথাসময়ে বাচ্চাটি দুইজনের ডিএনএ প্রোফাইল নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আর এভাবেই মাতৃগর্ভে হারিয়ে যাওয়া ভ্রূণ সহোদরের দেহে ছায়া হয়ে রয়ে যায়।