অ্যানড্রয়েড মোবাইলের জন্য ১০ টি ফ্রি সেরা ভিডিও এডিটিং অ্যাপস (10 Best Free Android Apps for Video Editing
বর্তমান যুগ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। মানুষ দিনের অনেকটা সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটায়। আর তাই বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা, বিভিন্ন সার্ভিসের আদান প্রদানসহ বিনোদনের বিষয়গুলোও এখন সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক। আমরা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এসব সেবা ও সুযোগ সুবিধা নিচ্ছি, পাশাপাশি অনেকেই এই সার্ভিসগুলো দিচ্ছি এবং অনেকেই মানুষের বিনোদনের জন্য কন্টেন্ট বানাচ্ছি। আর এই কন্টেন্টগুলো যে শুধু বিনোদনই দিচ্ছে তা না, এগুলো যারা কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের আয়েরও বেশ ভালো একটা উৎস। রুচিশীল ও মানসম্মত কন্টেন্ট বানানোকেই আজকাল অনেকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে, আর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের জন্য পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে।
যারা অলরেডি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা অবস্থান করে নিতে পেরেছেন এবং এখান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আয়ও করছেন তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই হয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় জন্য নতুন নতুন কন্টেন্ট বানানোর চিন্তা করছেন। আমাদের আজকের পোস্টটি বিশেষ করে নতুন যারা কন্টেন্ট বানাতে চাচ্ছেন তাদের কথা চিন্তা করেই লিখা।
এক্ষেত্রে একটা কথা শুরুতেই মাথায় রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে মানসম্মত কন্টেন্টের কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের সংখ্যা অনেক বেশি, আর মোটামুটি সবাই বেশ ভালো কোয়ালিটির কন্টেন্ট বানাচ্ছে। তাই প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। ভালো কন্টেন্ট না হলে তাই নিজের জন্য জায়গা করে নেওয়া সম্ভুব না। আর তাই আপনার ভিডিও কন্টেন্টের বিষয় ও উপস্থাপনা যেমন জরুরী তেমনি ভিডিওটি মানুষের চোখে ভালো লাগছে কিনা সেটাও জরুরী।
এই ক্ষেত্রে শুরুতেই বেশিরভাগ মানুষের যে সমস্যাটার সম্মুখিন হতে হয় সেটা হচ্ছে ভিডিও কন্টেন্ট বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় গেজেট বা এডিটিং টুল না থাকা। অনেকের পক্ষেই হয়তো প্রথম প্রথম ভালো কোন গেজেট বা টুলের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়না। তারা তাহলে কিভাবে ভালো কন্টেন্ট বানাবে ??
শুরুতে শুরুতে আপনারা চাইলেই আপনাদের ব্যবহার্য যে মোবাইল ফোনটি আছে সেটা দিয়েই কন্টেন্ট বানানো শুরু করতে পারেন। আপনার যদি একটি মোটামুটি ভালো মানের মোবাইল থাকে তাহলেই হবে।
আর ভিডিও এডিট করার জন্য কম্পিউটারও লাগবে না। আপনার মোবাইল থেকেই এডিট করতে পারবেন। এখন অ্যানড্রয়েডের অনেক ভালো ভালো ভিডিও এডিটিং অ্যাপস আছে যেগুলো আপনারা ফোনে গুগল প্লে-স্টোর থেকে ইন্সটল করতে পারবেন। আর এই অ্যাপগুলো দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের এডিটিং এর সবকিছুই করা যায়।
তাহলে আপনারা কিভাবে বুঝবেন কন অ্যাপটা আপনি ব্যবহার করবেন ??
প্লে-স্টোরে গেলেই আপনারা অনেক অনেক ভিডিও এডিটিং অ্যাপ পাবেন। তাই বোঝা কঠিন কোন অ্যাপটা সবচেয়ে ভালো। তাছাড়া ইদানিং কিছু ভিডিও এডিটিং অ্যাপে ম্যালওয়ারও থাকে যা আপনার নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। এজন্য সঠিক আর নিরাপদ অ্যাপ ব্যবহার করা খুবই জরুরি।
তাই আপনাদের জন্য কিছু ফ্রি অ্যাপস এর তালিকা দিচ্ছি। এগুলো ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের কন্টেন্ট পছন্দমত এডিট করতে পারবেন, সেই সাথে আপনার ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম বা অন্য যেকোনো সোশ্যাল সাইটে শেয়ারও করতে পারবেন।
১. কুইক (Quik)
আপনি যদি দ্রুত ভিডিও এডিট করতে চান তাহলে আপনার জন্য এটা খুব ভালো একটা অ্যাপ। এটা নিজে থেকেই আপনার ভিডিও এনালাইজ করে এডিট করতে পারে। তাই আপনার আর ম্যানুয়ালি জায়গায় জায়গায় এডিট করতে হবে না। তবে আপনি যদি চান তাহলে এই অ্যাপের সাহায্যে ম্যানুয়ালিও এডিট করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি ভিডিও ক্রপ করা, বিভিন্ন ইফেক্ট দেওয়া, ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক যোগ করা, এমনকি বিভিন্ন ট্রানজিসনও যোগ করতে পারবেন।
২. অ্যাডোব প্রিমিয়ার রাস (Adobe Premiere Rush)
এটা অনেক জনপ্রিয় একটা ভিডিও এডিটিং অ্যাপ। এর সাহায্যে আপনি ভিডিওর স্পিড কমাতে বা বাড়াতে পারবেন, ট্রিম ও ক্রপ করতে পারবেন, জুম ইন জুম আউট করতে পারবেন, কালার কারেকশন করতে পারবেন। একটা ভিডিওতে আপনি যে এডিটগুলো করবেন সেগুলি আপনি চাইলে প্রি-সেট ও করে রাখতে পারবেন। পরবর্তীতে অন্য কোন ভিডিও এডিটিং এর সময় প্রি-সেটটা সিলেক্ট করলেই হবে। ম্যানুয়ালি আর এডিট করতে হবে না। এছারাও এই অ্যাপে বিল্ট-ইন অ্যানিমেশন আছে যেগুলো পছন্দমতো কাস্টমাইজ করা যায়।
আর একটা বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি এই অ্যাপের সাহায্যে ভিডিও কোন নির্দিষ্ট এস্পেক্ট রেশিওতে রিসাইজও করতে পারবেন। তাই আপনি যদি ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক বা একাধিক সোশ্যাল সাইটে ভিডিও আপলোড করতে চান সেই প্লাটফর্ম এর এস্পেক্ট রেশিওতে খুব সহজেই ভিডিও রিসাইজ করতে পারবেন।
এছাড়াও এই অ্যাপের সাহায্যেই আপনি ভিডিওতে থাম্বনেল যোগ করে নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পাবলিশ করার জন্য শিডিউল করে রাখতে পারবেন। এই অ্যাপ থেকেই সময়মত সরাসরি পাবলিশ হয়ে যাবে।
এটা একটি ফ্রি অ্যাপ। তবে এটার পেইড ভার্শনও আছে। সেখানে অটো-রিফ্রেম, সাউন্ড ব্যালেন্স, 4K ভিডিও এক্সপোর্টসহ কিছু বাড়তি ফিচার আছে। তবে এসব ফিচার ছাড়াও ফ্রি ভার্শনটা মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ একটা অ্যাপ।
৩। ফিল্মোরা গো (FilmoraGo)
ফিল্মোরা গো ইতিমধ্যে অনেকের পছন্দের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এটাতে ট্রিমিং, কাটিং, বিভিন্ন থিম ব্যবহার করা, মিউজিক লাগানোসহ অনেক সুবিধাই আছে। এটা ব্যবহার করাও সহজ। এটার সাহায্যে ইন্সটাগ্রামের জন্য 1:1 রেশিওর ভিডিও, ইউটিউবের জন্য 16:9 রেশিওর ভিডিও এক্সপোর্ট করা যায়। এছাড়াও ট্রানজিশন, স্লো মোশন, টেক্সট অ্যাড করেও আপনার কন্টেন্টকে আরও সুন্দর বানাতে পারবেন। আপনি চাইলে ভিডিও গ্যালারিতে সেভ করতে পারবেন, অথবা সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করতে পারবেন।
ফিল্মোরাগোর পেইড ভার্সনও আছে। তবে ফ্রি ভার্সনেই আপনি মোটামুটি সব ধরণের ভালো ভালো ফিচার পেয়ে যাবেন। কিন্তু ফ্রি ভার্সনে আপনার ভিডিও কন্টেন্টের শেষে ফিল্মোরাগোর ওয়াটারমার্ক থাকবে।
৪। ভিডিওশো (VideoShow)
গুগল প্লে-স্টোরে যতগুলো ভিডিও এডিটিং অ্যাপ আছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অ্যাপগুলোর একটি হচ্ছে ভিডিওশো। ভিডিওশো অনেকগুলো পুরষ্কারও পেয়েছে। ভিডিও এডিটিং এর জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য ফিচারগুলো ছাড়াও এতে টেক্সট অ্যাড করা, ভিন্ন ইফেক্ট দেওয়া, সাউন্ড ইফেক্ট অ্যাড করার সুযোগ আছে। এছাড়াও এই অ্যাপে ভিডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করাসহ লাইভ ডাবিং করার সুবিধা আছে।
এখানে পঞ্চাশটারও বেশি বিভিন্ন ধরণের থিম আছে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি ভিডিওকে আরও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।
অনেক সময় ভিডিওর সাইজ অনেক বড় হয়ে যায়। তখন ভিডিও আপলোড করতে সময় বেশি লাগে, ব্রাউজারও ভিডিওকে অটো রিসাইজ করতে যেয়ে কোয়ালিটি নষ্ট করে দেয়। তাই ভিডিও আপলোড করার আগেই আপনি চাইলে এই অ্যাপের সাহায্যে কোয়ালিটি নষ্ট না করেই ভিডিও সাইজ ছোট করে নিতে পারবেন। আর ভিডিওর ডিউরেশন নিয়েও কোন লিমিট নেই। ভিডিও যত লম্বাই হোক আপনি এই অ্যাপ দিয়ে এডিট করতে পারবেন।
৫। পাওয়ার ডিরেক্টর (PowerDirector)
পাওয়ার ডিরেক্টর একটি ফুল ফিচারড অ্যানড্রয়েড ভিডিও এডিটিং অ্যাপ। এই এডিটর এর ফিচারগুলো ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগতে পারে। তবে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে খুব সহজেই কম সময়ে প্রফেশনাল ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। এর সাহায্যে গ্রিন স্ক্রিন ভিডিও বানানো যায়। এছাড়াও এর ফিচারগুলো কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেগুলোর টিউটোরিয়ালও পাওয়ার ডিরেক্টরে দেওয়া আছে।
ফ্রি ভার্সনেই মোটামুটি সব ফিচার আছে। তবে আপনি চাইলে পেইড ভার্সনে আপগ্রেড করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি ভিডিও থেকে পাওয়ার ডিরেক্টরের ওয়াটারমার্ক বাদ দিতে পারবেন এবং 1080 বা 4K রেজুলেশনের ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।
৬। ম্যাজিস্টো (Magisto)
যাদের ভিডিও এডিটিং এর পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তাদের জন্য এটি খুব ভালো একটি ভিডিও এডিটিং টুল। আপনি এর সাহায্যে খুব সহজেই ভিডিও ক্লিপস, ছবি, মিউজিক, বিভিন্ন ভিডিও ইফেক্ট ও ফিল্টারের সমন্বয়ে ভিডিও বানাতে পারবেন। এছাড়া এটির অটো-এডিটিং ফিচারও আছে। আপনি শুধু পছন্দমতো ভিডিও ক্লিপস এবং মিউজিক সিলেক্ট করবেন, তারপর বাকি কাজ ম্যাজিস্টোর।
ভ্লগার ও মার্কেটারদের জন্য এতে এডভান্স টুলও আছে।
৭। ফানিমেট (Funimate)
যারা ফান ভিডিও বানাতে চান তাদের জন্য ফানিমেট অ্যাপটি কাজে দিবে। এটি আপনার দৈনন্দিন মুহূর্তগুলোকে খুব সুন্দর একটি ভিডিও কন্টেন্টে রুপান্তরিত করে দিবে এবং সেই সাথে বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে অটোমেটিক শেয়ারিং এর সুযোগও আছে। ছোট ছোট ভিডিও বানানোর জন্য এখানে একশোর উপরে এডভান্স ভিডিও ইফেক্ট আছে। তাছাড়া এখানে কয়েকজন মিলে কোলাবরেশনে ভিডিও বানানোর সুযোগও আছে।
৮। ভিভা ভিডিও (Viva video)
এই অ্যাপটি বিশেষ করে প্রফেশনাল ভিডিও তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এখানে স্টিকার, ফিল্টার, অ্যানিমেটেড ক্লিপস, সাবটাইটেলসহ অনেক ইউজার ফ্রেন্ডলি ইফেক্ট আছে। বর্তমানে অ্যাপটির ১০০ মিলিয়নের উপর ইউজার আছে।
৯। কাইনমাস্টার (KineMaster)
কাইনমাস্টারও একটি খুব ভালো ভিডিও এডিটিং অ্যাপ। এটাতে ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ অপশন আছে, তাই আপনি খুব সহজেই মিডিয়া ফাইল মোবাইল থেকে এডিটরে নিতে পারবেন। আপনি ভিডিওর মাঝে ট্রানজিশন দিতে পারবেন, টেক্সট অথবা সাবটাইটেলও দিতে পারবেন। এখানে আপনি অডিও রেকর্ড করে সেটা ভিডিওতে দিতে পারবেন। ফ্রি ভার্সনে দরকারি ফিচারগুলোর সবগুলোই মোটামুটি আছে। তবে ওয়াটারমার্ক সরাতে চাইলে এবং প্রিমিয়াম ফিচারগুলো ব্যবহার করতে হলে পেইড ভার্সনে আপগ্রেড করতে হবে।
১০। ইনশট (InShot)
ইনশট অ্যাপটি একটি অল-ইন-ওয়ান ভিজুয়্যাল কন্টেন্ট এডিটিং অ্যাপ। এটি দিয়ে আপনি ভিডিও এডিট করতে পারবেন, ছবি এডিট করতে পারবেন, এছাড়াও অনেকগুলো ছবি দিয়ে কোলাজ তৈরি করতে পারবেন। ট্রিমিং, ভিডিওর স্পিড কমানো বাড়ানো, ফিল্টার এড করা, মিউজিক ও টেক্সট এড করাসহ মোটামুটি সবকিছুই এটা দিয়ে করা যায়। এছাড়াও আপনি এটা দিয়ে ভিডিও ফ্লিপ বা রোটেট করতে পারবেন যেটা আপনি অনেক ভিডিও এডিটিং অ্যাপেই পাবেন না।
এগুলো ছাড়াও প্লে-স্টোরে গেলে আপনি অনেক ভালো রেটিং এর ভিডিও এডিটিং অ্যাপ পাবেন। বেশিরভাগ ফ্রি অ্যাপেই প্রাথমিকভাবে ভিডিও এডিটিং এর জন্য যে ফিচারগুলো দরকার হয় তার প্রায় সবই থাকে। আর পেইড ভার্সনে মোটামুটি সব ফিচারই থাকে। তবে নতুন নতুন ভিডিও এডিটিং শুরু করলে এই ফ্রি অ্যাপগুলো থেকেই একটি বেছে নিতে পারেন। অথবা পছন্দমতো কয়েকটা অ্যাপ ইউজ করে দেখতে পারেন কোনটা আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। অনেক অনেক মানুষ মোবাইল দিয়েই ভিডিও করছে এবং মোবাইলেই এডিট করে কন্টেন্ট বানাচ্ছে। তাই শুরু করার সময় কিন্তু এখনই…